চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশের চামড়াজাত জুতা শিল্পের রপ্তানি আয় পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ১৪১ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে ইউরোজোন থেকে রপ্তানি আদেশ কমায় এই শিল্পের রপ্তানি আয় কমেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় রপ্তানি আয় কমেছে ৩২ দশমিক ৭৭ শতাংশ ।চামড়াজাত জুতা শিল্প গত অর্থবছরের একই সময়ে ২১০ দশমিক ৯৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল। এমনকি ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে করোনার সময়েও ১৪৮ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন ডলার মূল্যের রপ্তানি করেছিল।এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার দিলীপ কাজুরি বলেন, রপ্তানি আদেশ কমায় চামড়াজাত জুতার নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি নিয়ে নতুন অর্থবছর শুরু হয়েছে।
তিনি জানান, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সেপ্টেম্বরে এপেক্সের রপ্তানি ৫৮ শতাংশ ও আগস্টে ৩৭ শতাংশ কমেছে।’আমরা জানি না অক্টোবরে কতটা কমবে,’ বলেন তিনি।তিনি আরও জানান, বছরের এই সময়ে সাধারণত আদেশ বেশি থাকে, বিশেষ করে মহামারির আগের সময়ে। অবশ্য এখন পরবর্তী তিন মাসের কোনো রপ্তানি আদেশ হাতে না থাকায় পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
ক্রমাগত রপ্তানি আদেশ কমার বিষয়ে তিনি ইউরোজোনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে এই অঞ্চলের অর্থনীতি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।রপ্তানি আদেশ না পাওয়ায় ইতোমধ্যে চামড়াহীন জুতা উৎপাদন কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতির উন্নতি না হলে কারখানা কীভাবে চলবে তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমাদের রপ্তানিমুখী কারখানায় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শ্রমিক কর্মরত আছেন। আমরা জানি না শ্রমিকদের ভাগ্যে কী ঘটবে।’
তিনি মন্তব্য করেন, এমন প্রেক্ষাপটে রপ্তানিমুখী পণ্যের ওপর প্রায় ৭৭ শতাংশ প্রাক-মুনাফা উৎস কর আরোপ একটি বাড়তি বোঝা।’কোম্পানিগুলো কর দিতে ইচ্ছুক, কিন্তু এসব ব্যবসা কীভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায় তা নিয়ে সরকারের চিন্তা করা উচিত,’ বলেন তিনি।আকিজ ফুটওয়্যার লিমিটেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আব্দুস সামাদ বলেন, প্রবৃদ্ধি কিছুটা ধীর হলেও তাদের অর্ডার স্থিতিশীল আছে।
একটি মাঝারি আকারের কোম্পানি হিসেবে আমরা যেকোনো উপায়ে রপ্তানি ব্যবস্থাপনা করছি। কিন্তু, রপ্তানি আদেশ কমে যাওয়ায় বড় বড় কোম্পানিগুলো সমস্যায় পড়ছে,’ যোগ করেন তিনি।লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হাসান সোহেল বলেন, ইউরোজোনের মানুষ চামড়াজাত জুতার মতো বিলাসবহুল পণ্য কিনতে অনিচ্ছুক হওয়ায় রপ্তানি কমেছে।
সাভার ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সে সেন্ট্রাল এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে (সিইটিপি) লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সার্টিফিকেট না থাকায় বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো স্থানীয় চামড়া নেয় না।তিনি অভিযোগ করেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হয়রানি ও রপ্তানিবিরোধী নীতিমালা চামড়াজাত জুতা রপ্তানিতে বাধা সৃষ্টি করেছে, ফলে নতুন বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের হারের কারণে ওভারহেড খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা রপ্তানিকে বাধাগ্রস্ত করছে।”এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারলে ২০২৬ সালের মধ্যে চামড়াজাত জুতা খাত কমপক্ষে ৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করতে সক্ষম হবে এবং কমপক্ষে এক লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে,’ বলেন তিনি।
ট্যানারি শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ঢাকা বিভাগের সহ-সভাপতি মো. আকতার হোসেন অভিযোগ করেন, ‘ট্যানারি মালিকদের মনোযোগ শুধু মুনাফার দিকে, শ্রমিকদের কল্যাণে তাদের কোনো মনোযোগ নেই। সরকার ঘন ঘন সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও বড় সমস্যাগুলো সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে।’