ইসলামের মর্মবাণী সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা দলে দলে ছুটে আসছেন টঙ্গীর তুরাগপাড়ের ইজতেমা ময়দানে। ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের আগে গোটা টঙ্গী মুখরিত হয়ে ওঠে দেশ-বিদেশের মুসল্লিদের পদচারণায়।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অবিরাম চলছে বিভিন্ন ভাষায় বয়ান। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা মনোনিবেশ করে ঈমান, আখলাক ও দ্বীনের বিভিন্ন বয়ান শোনেন। এরই মধ্যে পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ বয়ানের মধ্য দিয়ে ইজতেমার দুদিন অতিবাহিত হয়।
দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে রোববার (২২ জানুয়ারি) শেষ হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার ৫৬তম আসর। বাদ ফজর বয়ান শুরু করেন ভারতের মাওলানা মুরসালিন। তার বয়ান তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা মে. আশরাফ আলী। সকাল ৯টায় মাওলানা মোশারফ হোসেন তালিম করবেন। এরপর সাড়ে ৯টার দিকে ইজতেমার শীর্ষ মুরুব্বি দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ সা’দ এর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সা’দ কান্ধলভী হেদায়েতী বয়ান শুরু করবেন।
হেদায়েতী বয়ান শেষে হলে দুপুর ১২টার দিকে দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী মো. সায়েম। এ পর্বে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ সা’দ এর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সা’দ কান্ধলভী ।
আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে শনিবার রাতেই ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে স্রোতের মতো আসেন। সকালেও মুসল্লিদের এ স্রোত আরও বাড়তে থাকে। ইজতেমা ময়দানের আশপাশে এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ ও আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া সড়ক শুধু মুসল্লিদের ঢল।
এদিকে আখেরি মোনাজাতের জন্য রোববার আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানাসহ বিভিন্ন অফিস ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা না করলেও কর্মকর্তাদের মোনাজাতে অংশ নিতে বাধা নেই।
বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে ঢাকা, গাজীপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার মুসুল্লিরা ভোর থেকেই টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানের দিকে ছুটছেন। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস থেকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত সাধারণ যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় মুসল্লিরা হেঁটে ইজতেমার ময়দানে আসছেন। আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মুসল্লিদের আগমন অব্যাহত থাকবে। অনেকই যানবাহনের বিড়ম্বনা এড়াতে দু-একদিন আগেই টঙ্গীতে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি কিংবা হোটেলে অবস্থান নিয়েছেন।
ইজতেমার ৫৬তম আসরের শেষ মোনাজাতে অংশ নিতে টঙ্গীতে একদিন আগে থেকেই মুসল্লিদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছ। টঙ্গী যেন এখন পুণ্যনগরীতে পরিণত হয়েছে। সেখানে এখন টুপি-পাঞ্জাবি পরা মানুষের ঢল নেমেছে। আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত এ ঢল অব্যাহত থাকবে। এছাড়া দু-তিনদিন আগে থেকেই চিল্লাবদ্ধ ৬৪ জেলার কয়েক লাখ মুসল্লি ইজতেমাস্থলের নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান করছেন।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কয়েক স্তরে নিরাপত্তার পাশাপাশি অতিরিক্ত আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন আছে বলে জানিয়েছেন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম।
মুসল্লিদের জন্য রোববার সকাল থেকে পাঁচ জোড়া বিশেষ ট্রেন যাতায়াত করছে। বেশকিছু বাসও চলাচল করছে।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে ৬১টি দেশের আট হাজার মুসল্লি যোগ দিয়েছেন।
শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ইজতেমায় আসা আরও এক মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। আবু তাহের (৬৫) নামের ওই বৃদ্ধের বাড়ি কিশোরগঞ্জে।
এ নিয়ে গত তিন দিনে ইজতেমায় ছয় মুসল্লি মারা গেছেন। ইজতেমা ময়দানে জানাজা শেষে তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ বছর বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয় ১৩ জানুয়ারি। আর ১৫ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়। ২০ জানুয়ারি শুরু হয় দ্বিতীয়। তা আখেরি মোনাজাতে শেষ হচ্ছে আজ।