বিনোদন ডেস্কঃ শতবর্ষী বিদ্যালয়টিতে কখনও যা ঘটেনি, তাই ঘটল মার্চের তৃতীয় সপ্তাহের এক সকালে। শ্রেণিকক্ষে বিজ্ঞানের আলোচনায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে স্কুল চত্বরে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে জড়ো হলেন ছাত্র ও স্থানীয় কিছু ব্যক্তি; হেনস্তা থেকে বাঁচাতে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে দেওয়া হলো মামলা।
বিষয়টি মানতে পারলেন না সাধারণ মানুষেরা, শিল্প সংস্কৃতির মানুষেরা, দেশের সব ধরনের শিক্ষার্থীরা, শিক্ষকেরা; প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উত্তাল হয়ে উঠলো। প্রতিবাদ জানালেন অনেকেই, নানাভাবে।
শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের সঙ্গে এমন ঘটনা সহজে মানতে পারলেন না জনপ্রিয় সঙ্গীতজ্ঞ প্রিন্স মাহমুদ। বাঁধলেন গান। সেই গানে গানে উঠে এলো এক সরব প্রতিবাদ।
প্রিন্স মাহমুদের কথা ও সুরে গানটি গেয়েছেন একদল তরুণ। গানটি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘‘প্রিয় ছাত্রদের বিজ্ঞান শেখানোর অপরাধে ‘ধর্ম অবমাননা’র অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের উদ্দেশ্যে আমার এ গান ‘গ্লানি’ … ২০ দিন কারাগারে থাকার পর রবিবার (১০ এপ্রিল ২০২২) মুক্তি পান তিনি। কোথায় মুক্তি? এ কোন মুক্তি?’’
স্যার হৃদয় চন্দ্র মরেন
দড়ি না পেলে গারদ মধ্যে নিজ টুটি চেপে ধরেন
তুমি মুক্তি পেলে মুক্ত হবে কি
তোমার ঈশ্বর সঙ্গে রবে কি
ছাত্র তোমার আদরের বড়
রাম দায়ে ধার দিচ্ছে আরো
খোদা তার সাথে রবেন?
ধর্মের পথে শহীদ হবো সবাই
এ কোন পৃথিবী রেখে গেলে ভগবান?
ওপারে হুজুরে অনুপম খের
এপারে সাইদি বাগান
সংখ্যালঘুর কোনো দেশ নাই
জোর যার খোদা তার সাথে ভাই
বিশ্বাস কি করেন?
দড়ি না পেলে গারদ মধ্যে নিরাপদেই মরেন/
ধর্মের পথে শহীদ হবো সবাই
মানব মিথ্যে ধর্ম সত্য
তারপরে কথা নাই
সংখ্যালঘুর কোনো দেশ নাই
ক্ষমতায় শ্রী রাম থাকে ভাই
বিশ্বাস কি করেন?
তুমি মুক্তি পেলেও মুক্ত হবে কি?
তোমার ঈশ্বর সঙ্গে রবে কি?
গান প্রসঙ্গে প্রিন্স মাহমুদ বলেন, ‘এই গান পৃথিবীর সমস্ত সংখ্যালঘুর গান। এখানে হৃদয় মণ্ডলের কথা আছে আবার ‘ক্ষমতায় শ্রীরাম থাকে ভাই’ লাইনে জয় শ্রীরামের মিছিলে ভীতসন্ত্রস্ত মুশকানও আছে। আছে হিন্দু মুসলিম বিভেদ সৃষ্টিকারী উস্কানি দাতা অনুপম খের এর কথা। এখানে লজ্জা দেওয়ার মধ্য দিয়ে মূলত মানুষেরই জয়গান গেয়েছি।
গানটি স্টুডিও ভার্সন হিসেবে নিজের ফেসবুকে প্রকাশ করলেও নেটিজেনরা এটি নিজেদের মতো করে গাইছেন এবং ছড়িয়ে দিচ্ছেন। অবশ্য প্রিন্স মাহমুদও বলছেন, ‘এটি সকলের গান, সকলের গাওয়ার জন্য, সকলেই গাইতে পারবে। ’