ঢাকা ০৯:০৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নওগাঁয় বেড়েছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ

নওগাঁ প্রতিনিধি : সারি সারি সবুজ গাছ। মাথায় শোভা পাচ্ছে সূর্যের পানে চেয়ে থাকা হলুদ ফুল। দেখলেই মনে হয়, কোমল রোদের আলোতে যেন হাসছে তারা। সবুজ পাতার আড়ালে মাথা উঁচু করে প্রকৃতিতে নিজ সৌন্দর্য জানান দেওয়া ফুলগুলোর নাম সূর্যমুখী।

নওগাঁর ফসলের মাঠগুলোতে এখন এমন দৃশ্য খুবই চেনা। কারণ স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় নওগাঁয় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই সূর্যমুখী ফুল চাষ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় ২৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৪০ হেক্টর, রানীনগরে ৩৪, আত্রাইয়ে ১৩, বদলগাছীতে ৩৩, মহাদেবপুরে ২৭, পত্নীতলায় ২৭, ধামইরহাটে ২৭, সাপাহারে ১৩, পোরশায় ১৩, মান্দায় ২৭ ও নিয়ামতপুরে ১৩ হেক্টর জমিতে।

এছাড়াও কৃষি বিভাগ থেকে সার ও বীজ প্রণোদনার মাধ্যমে জেলার ১১টি উপজেলায় ১ হাজার কৃষক ১ হাজার বিঘা জমিতে এই সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছেন। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে থাকায় কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলনের আশা করছেন। বর্তমানে সূর্যমুখীর অধিকাংশ গাছেই ফুল ফুটেছে। বীজ বপনের পর ফসল সংগ্রহ করতে প্রায় তিন মাস সময় লাগে।

সূর্যমুখীর তেল অন্যান্য রান্নার তেলের চেয়ে ভালো এবং হৃদরোগীদের জন্য বেশ উপকারী। সূর্যমুখী চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন এ জেলার কৃষকরা। যদি কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় তাহলে সূর্যমুখী চাষ করে দ্বিগুণ লাভ করতে পারবেন। ফলে একদিকে উপকৃত হবেন কৃষক অপর দিকে মিটবে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা।

রাণীনগর উপজেলার মধ্যরাজাপুর গ্রামের চাষি নুরুল হক নয়ন বলেন, ‘গত বছর অন্যের কাছ থেকে সূর্যমুখী ফুলে বীজ নিয়ে অল্প পরিমাণ জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে আমি অনেক লাভবান হয়েছি।

তাই চলতি মৌসুমে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ৩ বিঘা জমি লিজ নিয়ে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। এটি খুবই লাভজনক একটি ফসল। আমি আগামী বছর ১০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাকে দেখে এলাকার অনেক কৃষকরা সূর্যমূখী ফুলের চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’

একই গ্রামের আরেক চাষি মাসুদ রানা বলেন, ‘নয়নের দেখাদেখি চলতি মৌসুমে আমিও কিছু জমিতে এই আবাদ করেছি। তবে আগামী বছর কৃষি অফিসের সহযোগিতা নিয়ে ধানের পরিবর্তে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করবো। এটি শুধু একটি ফসলই নয় জমিতে এসে অনেক মানুষ বিনোদনও নিচ্ছে। আবার অনেকে পরিবারের সদস্যদের জমিতে এনে ছবি তুলছেন।’

সদর উপজেলার কুমাইগাড়ি এলাকার ফুল চাষি পাইলট জানান, ‘আমার অনেকদিনের শখ সূর্যমুখী ফুল চাষ করা। কিন্তু কারও কাছ থেকে কোনো সঠিক পরামর্শ পাইনি। হঠাৎ করে উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় সূর্যমুখী ফুলের বীজ পাই।

তাই বেশি আগ্রহ নিয়ে সূর্যমুখী চাষ করি। প্রথমে ধারণা ছিলো জমি থেকে যা ফসল আসবে তা দিয়ে নিজের পরিবারের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ হলেই হবে। কিন্তু এখন আরো বেশি করে চাষ করার ইচ্ছা পোষণ করছি।’

আরেক ফুল চাষি রতন বলেন, ‘সূর্যমুখীর কাণ্ড, মূল এবং গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া বিক্রি করে অতিরিক্ত আয়েরও একটা সুযোগ মিলবে। তাছাড়া চাষে তেমন কোনো ঝামেলা নেই। দু’একবার পানির সেচ এবং ফুলগুলো একটু দেখে রাখলেই হলো।’

সদর উপজেলার বর্ষাইল গ্রামের ফুল চাষি নূরু মিয়া জানান, আগে তিনি তার জমিতে আলু, ধনিয়া, টমেটো, ঢেড়শ চাষ করতেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে এ বছরই সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন।

কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে বীজ ও সার দিয়েছে। বাগানে ফুল আসার পর প্রতিদিনই লোকজন আসছে বাগান দেখতে। তিনিও আশা করছেন সূর্যমুখী চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার।

বদলগাছী উপজেলার ফুল চাষি বাবু জানান, সূর্যমূখী একটি লাভজনক ফসল। অন্যান্য ফসলের চেয়ে চাষাবাদে সময় ও খরচ দুটোই কম লাগে। জমিতে স্বল্প চাষে সূর্যমুখী চাষ করা যায়। রোপণ থেকে কাটা পর্যন্ত আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ হয়। সূর্যমুখীর গাছ রান্নার জ্বালানি হিসেবে আমরা ব্যবহার করতে পারবো।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শামছুল ওয়াদুদ জানান, ভোজ্যতেলের মধ্যে সূর্যমুখীর তেল শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সূর্যমুখীর তেল শরীরের কোলেস্টোরল ঠিক রাখে। এক কথায় সূর্যমূখীর তেল মানবদেহের জন্য অনেক উপকারী। এবছর জেলার ১১ উপজেলায় এবার ২৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে।

সূর্যমুখীর চাষ লাভজনক। এবার সূর্যমুখী চাষের জন্য কৃষকদের সার ও বীজ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। আগামীতে আরও বেশি পরিমাণে সূর্যমুখীর চাষ হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। যার কারণে কৃষকদেরকে লাভজনক ফসল সূর্যমুখী আবাদ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, যদি আবহাওয়া ভালো থাকলে অন্যান্য ফসলের তুলনায় সূর্যমুখী চাষ করে চাষিরা বেশি লাভবান হবেন।

ট্যাগস

নওগাঁয় বেড়েছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ

আপডেট সময় ০৬:২০:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ মার্চ ২০২২

নওগাঁ প্রতিনিধি : সারি সারি সবুজ গাছ। মাথায় শোভা পাচ্ছে সূর্যের পানে চেয়ে থাকা হলুদ ফুল। দেখলেই মনে হয়, কোমল রোদের আলোতে যেন হাসছে তারা। সবুজ পাতার আড়ালে মাথা উঁচু করে প্রকৃতিতে নিজ সৌন্দর্য জানান দেওয়া ফুলগুলোর নাম সূর্যমুখী।

নওগাঁর ফসলের মাঠগুলোতে এখন এমন দৃশ্য খুবই চেনা। কারণ স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় নওগাঁয় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই সূর্যমুখী ফুল চাষ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় ২৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৪০ হেক্টর, রানীনগরে ৩৪, আত্রাইয়ে ১৩, বদলগাছীতে ৩৩, মহাদেবপুরে ২৭, পত্নীতলায় ২৭, ধামইরহাটে ২৭, সাপাহারে ১৩, পোরশায় ১৩, মান্দায় ২৭ ও নিয়ামতপুরে ১৩ হেক্টর জমিতে।

এছাড়াও কৃষি বিভাগ থেকে সার ও বীজ প্রণোদনার মাধ্যমে জেলার ১১টি উপজেলায় ১ হাজার কৃষক ১ হাজার বিঘা জমিতে এই সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছেন। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে থাকায় কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলনের আশা করছেন। বর্তমানে সূর্যমুখীর অধিকাংশ গাছেই ফুল ফুটেছে। বীজ বপনের পর ফসল সংগ্রহ করতে প্রায় তিন মাস সময় লাগে।

সূর্যমুখীর তেল অন্যান্য রান্নার তেলের চেয়ে ভালো এবং হৃদরোগীদের জন্য বেশ উপকারী। সূর্যমুখী চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন এ জেলার কৃষকরা। যদি কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় তাহলে সূর্যমুখী চাষ করে দ্বিগুণ লাভ করতে পারবেন। ফলে একদিকে উপকৃত হবেন কৃষক অপর দিকে মিটবে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা।

রাণীনগর উপজেলার মধ্যরাজাপুর গ্রামের চাষি নুরুল হক নয়ন বলেন, ‘গত বছর অন্যের কাছ থেকে সূর্যমুখী ফুলে বীজ নিয়ে অল্প পরিমাণ জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে আমি অনেক লাভবান হয়েছি।

তাই চলতি মৌসুমে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ৩ বিঘা জমি লিজ নিয়ে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। এটি খুবই লাভজনক একটি ফসল। আমি আগামী বছর ১০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাকে দেখে এলাকার অনেক কৃষকরা সূর্যমূখী ফুলের চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’

একই গ্রামের আরেক চাষি মাসুদ রানা বলেন, ‘নয়নের দেখাদেখি চলতি মৌসুমে আমিও কিছু জমিতে এই আবাদ করেছি। তবে আগামী বছর কৃষি অফিসের সহযোগিতা নিয়ে ধানের পরিবর্তে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করবো। এটি শুধু একটি ফসলই নয় জমিতে এসে অনেক মানুষ বিনোদনও নিচ্ছে। আবার অনেকে পরিবারের সদস্যদের জমিতে এনে ছবি তুলছেন।’

সদর উপজেলার কুমাইগাড়ি এলাকার ফুল চাষি পাইলট জানান, ‘আমার অনেকদিনের শখ সূর্যমুখী ফুল চাষ করা। কিন্তু কারও কাছ থেকে কোনো সঠিক পরামর্শ পাইনি। হঠাৎ করে উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় সূর্যমুখী ফুলের বীজ পাই।

তাই বেশি আগ্রহ নিয়ে সূর্যমুখী চাষ করি। প্রথমে ধারণা ছিলো জমি থেকে যা ফসল আসবে তা দিয়ে নিজের পরিবারের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণ হলেই হবে। কিন্তু এখন আরো বেশি করে চাষ করার ইচ্ছা পোষণ করছি।’

আরেক ফুল চাষি রতন বলেন, ‘সূর্যমুখীর কাণ্ড, মূল এবং গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া বিক্রি করে অতিরিক্ত আয়েরও একটা সুযোগ মিলবে। তাছাড়া চাষে তেমন কোনো ঝামেলা নেই। দু’একবার পানির সেচ এবং ফুলগুলো একটু দেখে রাখলেই হলো।’

সদর উপজেলার বর্ষাইল গ্রামের ফুল চাষি নূরু মিয়া জানান, আগে তিনি তার জমিতে আলু, ধনিয়া, টমেটো, ঢেড়শ চাষ করতেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে এ বছরই সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন।

কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে বীজ ও সার দিয়েছে। বাগানে ফুল আসার পর প্রতিদিনই লোকজন আসছে বাগান দেখতে। তিনিও আশা করছেন সূর্যমুখী চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার।

বদলগাছী উপজেলার ফুল চাষি বাবু জানান, সূর্যমূখী একটি লাভজনক ফসল। অন্যান্য ফসলের চেয়ে চাষাবাদে সময় ও খরচ দুটোই কম লাগে। জমিতে স্বল্প চাষে সূর্যমুখী চাষ করা যায়। রোপণ থেকে কাটা পর্যন্ত আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ হয়। সূর্যমুখীর গাছ রান্নার জ্বালানি হিসেবে আমরা ব্যবহার করতে পারবো।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শামছুল ওয়াদুদ জানান, ভোজ্যতেলের মধ্যে সূর্যমুখীর তেল শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সূর্যমুখীর তেল শরীরের কোলেস্টোরল ঠিক রাখে। এক কথায় সূর্যমূখীর তেল মানবদেহের জন্য অনেক উপকারী। এবছর জেলার ১১ উপজেলায় এবার ২৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে।

সূর্যমুখীর চাষ লাভজনক। এবার সূর্যমুখী চাষের জন্য কৃষকদের সার ও বীজ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। আগামীতে আরও বেশি পরিমাণে সূর্যমুখীর চাষ হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। যার কারণে কৃষকদেরকে লাভজনক ফসল সূর্যমুখী আবাদ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, যদি আবহাওয়া ভালো থাকলে অন্যান্য ফসলের তুলনায় সূর্যমুখী চাষ করে চাষিরা বেশি লাভবান হবেন।