বাংলাদেশি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার চমক হাসান প্রথমবারের মতো প্লেব্যাক করেছেন চলচ্চিত্রে। ছবির নাম ‘বাবা, বেবি, ও…’। তার গাওয়া গানটির শিরোনাম ‘এই মায়াবী চাঁদের রাতে’। গান গাওয়ার পাশাপাশি চলচ্চিত্রটির সঙ্গীত পরিচালনাও করেছেন তিনি।
শ্রোতাদের প্রশংসার পাশাপাশি ‘এই মায়াবী চাঁদের রাতে’ গানটির জন্য কলকাতার ‘কলাকৃতি অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ পেয়েছেন চমক হাসান। তবে সেই খবর ফেসবুকে দিতে গিয়ে পড়েছেন বিপদে। এক ব্যক্তি চমকের কঠোর সমালোচনা করে মন্তব্য করেছেন। তবে তাতে রেগে না গিয়ে উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন চমক হাসান।
ওই ব্যক্তি চমকের পোস্টের নিচে মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, “পদার্থবিজ্ঞান আর ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ে এখন আপনি বাচ্চাদের গান লিখেন। আপনার স্নাতকে পড়া বিষয়ে কোনো কার্যক্রম করতে দেখলাম না। দেশের রাজস্বের টাকায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে এখন ছং ফং করেন, আর এটা গর্ব করে প্রচার করেন। আপনার উচিত ছিল নাট্যকলা আর্টে পড়া, রিকশা আর ট্রাকের পেছনে পেইন্টিং করতেন।”
এমন মন্তব্যের জবাবে চমক হাসান লিখেছেন, ‘‘ধন্যবাদ, আপনার মন্তব্যের জন্য। পেশাগতভাবে আমি এখনও একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। গান বা অঙ্ক করি বা না করি সপ্তাহে অন্তত ৪০ ঘণ্টা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর পেছনে আমাকে দিতেই হয়। এই মুহূর্তে যে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছি, সেটা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেতে পারেন IEEE বাংলাদেশ শাখার আয়োজিত সেমিনারে। হ্যাঁ, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভিডিও বানানোর ইচ্ছা আছে। ‘ফুরিয়ার সিরিজ’ নিয়ে একটা ভিডিও সিরিজ এপ্রিলে শুরু করবো আশা রাখি।
আপনার বক্তব্যের নোংরা ইঙ্গিতগুলো যদি বাদও দিই, যৌক্তিকভাবেও কতগুলো সিরিয়াস সমস্যা আছে। এক. আপনি ধরে নিচ্ছেন যে, মানুষ যে বিষয়ে পড়ালেখা করেছে তার সেটা নিয়েই কাজ করতে হবে। জ্বি না- এমন কোনো বাধ্যবাধকতা কোথাও নাই। মানুষের নিজের পছন্দসই কাজ করার স্বাধীনতা আছে। যে যেভাবে ভালো থাকে, থাকতে দিন। রোয়ান এটকিনসন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে সেটা ছেড়ে দিয়ে মিস্টার বিন বানালে, অনুপম রায় ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে সেটা ছেড়ে দিয়ে গান লিখলে, এঙ্গেলা মার্কেল রসায়নে পিএইচডি করার পর সেটা ছেড়ে দিয়ে দেশের চ্যান্সেলর হলে, কিংবা হুমায়ূন আহমেদ রসায়নের অধ্যাপনা ছেড়ে দিয়ে মুভি বানালে কোনো ক্ষতি হয় না। বরং পৃথিবী সমৃদ্ধই হয়।”
দুই. দেশের রাজস্ব খাত নিয়েও আপনাকে ভাবতে হবে না। দেশের বাইরে থাকার পরেও দুইভাবে রাজস্ব খাতে ভূমিকা রাখতে পারি। প্রথমত, এখান থেকে রেমিটেন্স পাঠাই। দ্বিতীয়ত, দেশে বই প্রকাশ করি, যা থেকে প্রকাশক এবং আমার পরিবার উপকৃত হয়। আর বিক্রিত বইয়ের মূল্য সংযোজন কর সরাসরি দেশের রাজস্বে যুক্ত হয়।
তিন. ফেসবুক দেখে মানুষের জীবনাচরণ বিচার করছেন, যেটা খুবই অগভীর চিন্তার বহিঃপ্রকাশ। আমার জীবনযাত্রার খুবই ক্ষুদ্র একটা অংশ ফেসবুকে প্রকাশ পায়। ততটুকু, যতটুকু আমাকে আমার অনুরাগী, শুভানিধ্যায়ীদের সঙ্গে যুক্ত রাখবে, যতটুকু তাদের আনন্দ দেবে কিংবা কিছু শেখাবে। MRI RF Pocket Electric Field analysis নিয়ে আলোচনা করার জন্য আমার টিম আছে, কনফারেন্স আছে— সেটা ফেসবুকে আমি করি না। অতএব আপনি ফেসবুক দেখে সিদ্ধান্ত নিলেন যে আমি ইলেক্ট্রক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কিছু করি না। না, এটা ভুল চিন্তা।
চার. আপনার শেষ লাইন থেকে বোঝা যায় যে, আর্ট, রিকশা পেইন্টিং, নাট্যকলা এগুলোকে আপনি পদার্থবিজ্ঞান বা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে নিচু পর্যায়ের কাজ চিন্তা করছেন। হাস্যকর ভাবনা। কবিতা, গান, আর্ট এসব ব্যাপার বিজ্ঞান বা প্রকৌশল থেকে কোনোভাবেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। আরও পড়ালেখা করা এবং জানার পরামর্শ রইলো।
ভালো থাকবেন।’’