আত্রাই প্রতিনিধি: নওগাঁর আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর সিজারিয়ান অপারেশন চালু হয়েছে। বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) দুই প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম হয়। সিজারিয়ান অপারেশন চালু হওয়ায় আত্রাইবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, আশির দশকে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল চালু করা হয়। পরবর্তীতে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ২০০০ সালে প্রসূতি সেবা চালু করা হয়। অবকাঠামোগত সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা থাকার পর অ্যানেস্থেসিয়া ও গাইনি চিকিৎসকের অভাবে গত পাঁচ বছর সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ ছিল। তবে নরমাল (স্বাভাবিক) প্রসব চালু ছিল।
চলতি বছর এ হাসপাতালে নভেম্বর মাসে ৪১টি, অক্টোবর মাসে ৩৫টি এবং সেপ্টেম্বর মাসে ৩৩টি নরমাল প্রসব হয়েছে।
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন ডা. রোকসানা হ্যাপী। তিনি যোগদানের পর থেকে চিকিৎসা সেবার মান উন্নত করার চেষ্টা করছেন। সপ্তাহে দু’দিন সোম ও বুধবার সিজারিয়ান অপারেশনের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, জেলার প্রত্যন্ত উপজেলা আত্রাই। জেলা শহর থেকে উত্তরে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবিস্থত। সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ থাকায় ভোগান্তী পোহাতে হয়েছে উপজেলাবাসীকে। সরকারি সেবার জন্য এ সময়ে উপজেলাবাসীকে নওগাঁ সদর হাসপাতাল অথবা পার্শ্ববর্তী নাটোর জেলায় যেতে হতো।
বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশন করতে হতো। এছাড়া হাসপাতাল থেকে রোগীদের অন্যত্র স্থানান্তর করার প্রয়োজন হলে নওগাঁ সদর হাসপাতাল অথবা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হতো।
আত্রাই উপজেলা সদরে সাতটি বেসরকারি ক্লিনিক আছে। যার পাঁচটিতে সিজারিয়ান অপারেশন হয়। বেসরকারি ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনে ৮-১২ হাজার টাকা খরচ হয়। এছাড়া দালালদের খপ্পরে পড়ে হয়রানির শিকার হতে হতো রোগীদের।
ভরতেঁতুলিয়া গ্রামের রাজমিস্ত্রী রিপন। সিজারিয়ান অপারেশন করে দ্বিতীয় ছেলে সন্তানের বাবা হয়েছেন। তিনি বলেন, স্ত্রীর (শান্তা) আল্ট্রাসনো করা হয়েছিল। সময় এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। কিন্তু তারপরও ব্যথা উঠছিল না।
গত মঙ্গলবার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করে ডাক্তারকে সব খুলে বলা হয়। বুধবার (২৯ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে সিজার করে ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। কোনো টাকা-পয়সা ছাড়াই ডাক্তার সিজার করেছেন। আমার মতো গরিবের জন্য খুবই সুবিধা হয়েছে। সত্যি খুব ভাল লাগছে।
আরেক প্রসূতি তমা। স্বামীর বাড়ি পার্শ্ববর্তী নাটোর জেলার বাগমারা উপজেলার পলাসি গ্রামে। বাবার বাড়ি আত্রাই উপজেলার দীঘা গ্রামে। সন্তান প্রসবের জন্য বাবার বাড়ি এসেছেন।
তমা বলেন, বুধবার বিকেল থেকে পানি ভাঙতে শুরু করে। কিন্তু তারপরও পেটের ব্যথা ওঠেনি। ওইদিনই মাগরিবের পর হাসপাতালে নেওয়া হয়। নরমালে প্রসব করানোর জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল। নরমালে না হওয়ায় ডাক্তার সিজারের পরামর্শ দেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিজার করে প্রথম ছেলে সন্তানের জম্ম হয়। আল্লাহর রহমতে আমি ও বাচ্চা দু’জনেই ভালো আছি।
আত্রাই সদরের বাসিন্দা কামাল উদ্দিন ও আহসানগঞ্জ এলাকার আব্দুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ থাকার পর আবারও চালু হয়েছে। সিজারিয়ান অপারেশন চালু হওয়ায় প্রত্যন্ত উপজেলাবাসীর জন্য অনেক সুবিধা হয়েছে। হাসপাতালে কিছু দালালচক্র আছে যারা রোগীদের ভুলভাল বুঝিয়ে বেসরকারি ক্লিনিকে নেওয়ার চেষ্টা করে।
সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে ৮-১০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। যার একটি অংশ দালালদের দেওয়া হয়। তবে হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন চালু হওয়ায় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।
আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রোকসানা হ্যাপী বলেন, অপারেশনের সকল সরঞ্জাম থাকার পরও অ্যানেস্থেসিয়া ও গাইনি চিকিৎসক না থাকায় সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ ছিল। বর্তমানে সপ্তাহে দু’দিনের জন্য অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া আমি নিজে সিজারিয়ান অপারেশন করেছি।
এখন থেকে নিয়মিত এ সেবা দেওয়া হবে। তবে প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি আমার পক্ষে শতভাগ এ সেবা দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। গাইনি চিকিৎসক যোগদান করলে সেবার মান আরো বেড়ে যাবে। যেসব রোগীদের বাইরে যেতে হতো তারা এখন এ হাসপাতালে সেবা পাবে বলে আশা করছি।
দালালের দৌরাত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, ডিউটি থাকাকালীন সময়ে আমি হাসপাতাল চত্বর দালালমুক্ত রাখার চেষ্টা করি।