ঢাকা ০৬:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নওগাঁর মহাদেবপুরে আদিবাসীদের জীবন-জীবিকা নিয়ে মেলার আয়োজন

নওগাঁর মহাদেবপুরে আদিবাসীদের জীবন-জীবিকা নিয়ে মেলার আয়োজন

মহাদেবপুর প্রতিনিধি:  নওগাঁর মহাদেবপুরে আদিবাসী জাতিসত্ত্বার জীবন-জীবিকা ও বৈচিত্রময় সংস্কৃতি ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে মেলায়। বুধবার উপজেলার ধনজইল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে একটি বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় আদিবাসী জীবন জীবিকা, ব্যবহৃত জিনিসপত্র, তাদের খাদ্যাভ্যাস তুলে ধরে মেলায় ১১টি স্টল বসানো হয়।

মেলার উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম। দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের সমতলের বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর শত শত আদিবাসী মেলায় অংশগ্রহণ করেন। দিনব্যাপী মেলায় আলোচনা শেষে আদিবাসীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী নাচ ও গান পরিবেশন করেন।

মেলায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের ব্যবহার্য নানা উপকরণের স্টল ঘুরে দেখতে জেলায় নানা প্রান্ত থেকে আসেন বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থীরা। এ সময় আদিবাসী সম্প্রদায়ের কৃষ্টি-কালচার রক্ষায় প্রতি বছর এমন আয়োজনের দাবিও জানান। মেলায় স্টলগুলোতে মাসরুম, শামুক, ছোট শামুক, গজা আলু, মাদল, ট্যাটা, মুচু, সরতা, সাত খুপি, মনই, যান্টি, বিদা, রুসা, গোমাই, জোয়াল, খাঁকড়া, কুচিয়া, হুকা, মূসো, কচ্ছব, ধরা পাল্লা, নাঙ্গল, মাদুর ও ঝিনুক দেখা যায়।

মেলায় ঘুরতে এসেছিলেন স্থানীয় চেরাগপুর গ্রামের শিক্ষার্থী সুরভী আক্তার। তিনি বলেন, এর আগে আমাদের এলাকায় এমন আয়োজন কখনো হয়নি। আদিবাসীদের ব্যবহার করা নানা জিনিস দেখলাম যা আগে কখনো দেখা হয়নি। আর কিছু জিনিসের নাম আমাদের ব্যবহার করা প্রয়োজনীয় জীবন-জীবিকার সঙ্গে মিল থাকলেও অধিকাংশের মিল নেই। কী চমৎকার তাদের তৈরি করা নানা উপকরণ! সত্যিই অবাক হয়েছি এসব দেখে।

মেলায় স্টল দিয়েছেন স্থানীয় আদিবাসী নারী রেনোকা হোর। তিনি বলেন, স্টলে আমাদের সম্প্রদায়ের মাসরুম, শামুক, গজা আলু, মাদল, মুচু, সরতাসহ ২৫ রকমের ব্যবহার করা জিনিসপত্র আছে। আমরা চাই আমাদের কৃষ্টি-কালচার যেন তুলে ধরতে সরকার জোরালো উদ্যোগ নেয়।

মেলায় অংশ নেয়া বিমল ভুইয়া বলেন, সাত খুপি, মনই, রুসা, গোমাই, জোয়াল, হুকা, মূসো, মাদুরসহ নানা রকম পিঠার স্টল দিয়েছি। এবারই প্রথম আমরা এমন আয়োজনে অংশ নিয়েছি। যদি প্রতিবছর এরকম আয়োজন করা হয় তাহলে আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যগুলো তুলে ধরার সুযোগ পাবো।

মেলায় স্টল দেয়া কারুশিল্প নজিপুরের সত্ত্বাধিকারী তহুরা বানু ইতি বলেন, স্থানীয় আদিবাসী মেয়েরা পড়াশোনার পাশাপাশি শাড়িতে ফুল করা, থ্রিপিসে নকসা করা, নকশি কাঁথায় কারুকাজসহ কারুশিল্প জাতীয় কাজ করে সংসারে বাড়তি আয়ের যোগান দিচ্ছে আমার শো-রুমের মাধ্যমে। মেলায় আদিবাসী মেয়েদের তৈরি নানা রকম কারুশিল্প পণ্য বিক্রয় ও প্রদর্শন করছি। আমার শোরুমে প্রায় ১৫ জন মেয়ে যুক্ত। আমি চাই আদিবাসী মেয়েরা তাদের কাজের দক্ষতার মাধ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে যাক।

সন্ধ্যায় সাবেক সাংসদ শাহিন মনোয়ারা হকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা শেষে আদিবাসীরা নাচ-গান পরিবেশন করেন। বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে আদিবাসীরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাদের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।

ট্যাগস

নওগাঁর মহাদেবপুরে আদিবাসীদের জীবন-জীবিকা নিয়ে মেলার আয়োজন

আপডেট সময় ১১:১৫:০৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ ডিসেম্বর ২০২১

মহাদেবপুর প্রতিনিধি:  নওগাঁর মহাদেবপুরে আদিবাসী জাতিসত্ত্বার জীবন-জীবিকা ও বৈচিত্রময় সংস্কৃতি ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে মেলায়। বুধবার উপজেলার ধনজইল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে একটি বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় আদিবাসী জীবন জীবিকা, ব্যবহৃত জিনিসপত্র, তাদের খাদ্যাভ্যাস তুলে ধরে মেলায় ১১টি স্টল বসানো হয়।

মেলার উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম। দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের সমতলের বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর শত শত আদিবাসী মেলায় অংশগ্রহণ করেন। দিনব্যাপী মেলায় আলোচনা শেষে আদিবাসীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী নাচ ও গান পরিবেশন করেন।

মেলায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের ব্যবহার্য নানা উপকরণের স্টল ঘুরে দেখতে জেলায় নানা প্রান্ত থেকে আসেন বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থীরা। এ সময় আদিবাসী সম্প্রদায়ের কৃষ্টি-কালচার রক্ষায় প্রতি বছর এমন আয়োজনের দাবিও জানান। মেলায় স্টলগুলোতে মাসরুম, শামুক, ছোট শামুক, গজা আলু, মাদল, ট্যাটা, মুচু, সরতা, সাত খুপি, মনই, যান্টি, বিদা, রুসা, গোমাই, জোয়াল, খাঁকড়া, কুচিয়া, হুকা, মূসো, কচ্ছব, ধরা পাল্লা, নাঙ্গল, মাদুর ও ঝিনুক দেখা যায়।

মেলায় ঘুরতে এসেছিলেন স্থানীয় চেরাগপুর গ্রামের শিক্ষার্থী সুরভী আক্তার। তিনি বলেন, এর আগে আমাদের এলাকায় এমন আয়োজন কখনো হয়নি। আদিবাসীদের ব্যবহার করা নানা জিনিস দেখলাম যা আগে কখনো দেখা হয়নি। আর কিছু জিনিসের নাম আমাদের ব্যবহার করা প্রয়োজনীয় জীবন-জীবিকার সঙ্গে মিল থাকলেও অধিকাংশের মিল নেই। কী চমৎকার তাদের তৈরি করা নানা উপকরণ! সত্যিই অবাক হয়েছি এসব দেখে।

মেলায় স্টল দিয়েছেন স্থানীয় আদিবাসী নারী রেনোকা হোর। তিনি বলেন, স্টলে আমাদের সম্প্রদায়ের মাসরুম, শামুক, গজা আলু, মাদল, মুচু, সরতাসহ ২৫ রকমের ব্যবহার করা জিনিসপত্র আছে। আমরা চাই আমাদের কৃষ্টি-কালচার যেন তুলে ধরতে সরকার জোরালো উদ্যোগ নেয়।

মেলায় অংশ নেয়া বিমল ভুইয়া বলেন, সাত খুপি, মনই, রুসা, গোমাই, জোয়াল, হুকা, মূসো, মাদুরসহ নানা রকম পিঠার স্টল দিয়েছি। এবারই প্রথম আমরা এমন আয়োজনে অংশ নিয়েছি। যদি প্রতিবছর এরকম আয়োজন করা হয় তাহলে আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যগুলো তুলে ধরার সুযোগ পাবো।

মেলায় স্টল দেয়া কারুশিল্প নজিপুরের সত্ত্বাধিকারী তহুরা বানু ইতি বলেন, স্থানীয় আদিবাসী মেয়েরা পড়াশোনার পাশাপাশি শাড়িতে ফুল করা, থ্রিপিসে নকসা করা, নকশি কাঁথায় কারুকাজসহ কারুশিল্প জাতীয় কাজ করে সংসারে বাড়তি আয়ের যোগান দিচ্ছে আমার শো-রুমের মাধ্যমে। মেলায় আদিবাসী মেয়েদের তৈরি নানা রকম কারুশিল্প পণ্য বিক্রয় ও প্রদর্শন করছি। আমার শোরুমে প্রায় ১৫ জন মেয়ে যুক্ত। আমি চাই আদিবাসী মেয়েরা তাদের কাজের দক্ষতার মাধ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে যাক।

সন্ধ্যায় সাবেক সাংসদ শাহিন মনোয়ারা হকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা শেষে আদিবাসীরা নাচ-গান পরিবেশন করেন। বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে আদিবাসীরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাদের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়।