প্রযুক্তি ডেক্সঃ মাত্র তিন সেকেন্ডেই হেলিকপ্টার ছাড়াও বুলেটপ্রুফ গাড়ির গ্লাস ধ্বংস করে দিতে পারে ‘জেপার্ড জিএম ৬ লিঙ্কস’ নামের স্নাইপার রাইফেল। জেপার্ড একটি গুলির আঘাতেই বুলেটপ্রুফ গাড়ি উড়িয়ে দিতে পারে। আকাশ থেকে চলন্ত হেলিকপ্টারকে ধ্বংসও করতে পারে। জেপার্ডের ওজন সাড়ে ১১ কেজি।
জেপার্ডের এক একটি রাইফেলের দাম ৯০ হাজার পাউন্ড। ব্রিটিশ বাহিনী সেই রকম ১৫০টি রাইফেল কিনেছে। খবরটি নিয়ে তাই চিন্তায় আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। আফগান সীমান্তে যুক্তরাজ্য বাহিনীর ৪০ জনের অবস্থানের খবরটি সত্যি কিনা সেটা তারা বুঝতে চাচ্ছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের রবিবারের একটি প্রতিবেদনের বরাতে গোয়েন্দারা জানিয়েছে, সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক শক্তি বিপুল পরিমাণে এই রাইফেল কিনতে শুরু করেছে। কাগজে-কলমে জেপার্ড রাইফেল ক্যাটাগরির হলেও তার নিজগুণে সে কামানের ক্যাটাগরির পর্যায়ে উঠে এসেছে। কামানের মতোই দূরের লক্ষ্যবস্তুকে সে ধ্বংস করতে পারে। পার্থক্য শুধু একটা কামান ব্যবহার করে গোলা আর জেপার্ড ব্যবহার করে গুলি।
বিশেষ এই গুণের জন্যই হাউইৎজার কামানের সঙ্গে জেপার্ডের তুলনা করা হয়। হাউইৎজার হল শক্তিশালী কামানের আধুনিক আর ছোট সংস্করণ। আকাশে উড়ন্ত বস্তুকে বধ করতে এই ছোট কামানের জুড়ি নেই।
জেপার্ডও এ ব্যাপারে হাউইৎজারের মতোই। জেপার্ডও শত্রুপক্ষের কাছে বিষফোঁড়ার মতোই যন্ত্রণাদায়ক হয়ে উঠতে পারে। একজন যোদ্ধার হাতে এমন একটি অস্ত্র কতটা সহজে বহনযোগ্য আর একই সঙ্গে ধ্বংসাত্মক হতে পারে!
অস্ত্রবিদরা বলছেন, জেপার্ড নিয়ে একজন যোদ্ধা অনায়াসে যুদ্ধক্ষেত্রে প্যারাশ্যুটে অবতরণ করতে পারেন। আর নির্ভুল লক্ষ্যভেদে উড়িয়ে দিতে পারেন পর পর নিশানা।
একটি জেপার্ড রাইফেলে পাঁচ রাউন্ড গুলি থাকে। এই পাঁচ রাউন্ড গুলি যে কোনো লক্ষ্যে পর পর আঘাত করে তাকে শেষ করে দিতে সময় নেয় মাত্র তিন সেকেন্ড। পয়েন্ট ৫০ ক্যালিবারের এই গুলির নাম ‘রফোস এমকে ২ বুলেট’। যা নিজের থেকে দু’ কিলোমিটার দূরে থাকা লক্ষ্যে নিখুঁত আঘাত করতে পারে। জেপার্ডের বুলেটের মাজল ভেলোসিটি প্রতি সেকেন্ডে ৮২০ মিটার।
এমন শক্তিশালী ১৫০টি রাইফেল কিছুদিন আগেই যুক্তরাজ্যের সেনাবাহিনী কিনেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, জেপার্ড কিনেছে যুক্তরাজ্যের স্পেশাল এয়ার সার্ভিস, স্পেশাল বোট সার্ভিস এবং স্পেশাল রেকনাইস্যান্স রেজিমেন্ট। যুক্তরাজ্যের এই তিন বাহিনীই কিছুদিন আগে ন্যাটোর অংশ হিসেবে আফগানিস্তানে ছিল।
এ প্রসঙ্গে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কিছুদিন আগে প্রকাশ্যে এসেছিল। একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, ন্যাটো আফগানিস্তান ছাড়লেও সেখানে রয়ে গিয়েছেন যুক্তরাজ্যের এই তিন বাহিনীর ৪০ জন সেনা। আফগানিস্তানের মাটিতে না থাকলেও পাক-আফগান সীমান্তে ঘাঁটি গেড়ে থাকছেন তারা। তাদের লক্ষ্য প্রতিশোধ। প্রতিশোধ নিতে যে ৪০ জনের দল আফগান সীমান্তে রয়েছে বলে দাবি, তারা প্রত্যেকেই বেপরোয়া যোদ্ধা। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কাবুল বিমানবন্দর চত্বরে বিস্ফোরণের জন্য দায়ী যে আই এস জঙ্গিগোষ্ঠী, তাদের মাথাকেই শেষ করতে চায় যুক্তরাজ্যের সেনারা। এ ব্যাপারে খোদ তালিবানই তাদের সাহায্য করছে।
কাবুল বিমানবন্দর চত্বরের ওই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ জন নৌ সেনার মৃত্যু হয়েছিল। সংবাদমাধ্যমটি লিখেছিল, তাদের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে চায় যুক্তরাজ্যের বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ওই কর্মকর্তাদের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের অভিজাত ওই সেনাবাহিনীর বহুদিনের বন্ধুত্ব। বহু প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তাদের সাহায্য করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের এই বাহিনী। খাবার দেওয়াসহ অসুস্থ হয়ে পড়া সেনাদের সেবাও করেছিল। তারই প্রতিদান দিতে চায় যুক্তরাজ্য।
একই সঙ্গে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, এই নতুন কেনা জেপার্ড রাইফেলের একটি বড় অংশ সিরিয়া, ইরাকেও মোতায়েন করা হয়েছে। তাই শক্তিশালী আর দামি রাইফেলগুলো হঠাৎ কেন কেনা হল, সেগুলো দিয়ে যুক্তরাজ্যের সেনা কী করতে চায় তা নিয়ে চিন্তায় বিশেষজ্ঞরা।
হাঙ্গেরিতে প্রথম তৈরি এই জেপার্ড রাইফেল এত দিন ব্যবহার করত ছয়টি দেশ। তারা হলো- ভারত, কানাডা, হাঙ্গেরি, মালি, তুরস্ক এবং রোমানিয়া। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো যুক্তরাজ্য।