স্টাফ রিপোর্টার, নওগাঁঃ সৌন্দর্যের শোভা ছড়াচ্ছে সারি সারি তাল গাছ । নওগাঁর মহাদেবপুরের পল্লীতে ৩ কিলোমিটার জুড়ে প্রায় ৫ হাজার তাল গাছ পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশী পরিনত হয়েছে দৃষ্টি নন্দন এক বিনোদন কেন্দ্রে। নির্মল বাতাশ আর বিপুল এ তাল সাম্রাজর সৌন্দর্য উপভোগ করতে দুর দুরান্ত থেকে আসছেন বিনোদন প্রেমী মানুষ।
স্থানীয়রা বলছে ৩০ বছর আগে রোপন করা এসব তালগাছ বজ্রপাত রোধেও রাখছে ব্যাপক ভুমিকা । প্রান্তিক পর্যায়ের এ তাল বাগান রক্ষা সহ অব কাঠামো উন্নয়নের আশ্বাস উপজেলা প্রশাসনের ।
শ্রাবণের ভর মওসুমে বরেন্দ্র’র মাঠ গুলো টয়টম্বুর পানিতে । সে পানিতে প্রস্ততি চলছে রোপা আইশ আবাদের ।
বিস্তৃত মাঠের মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে আঁকা বাকাঁ সড়ক । আশ পাশের অন্তত ২০ গ্রামের সংযোগ সড়ক টি স্বাধীনতার পর স্থানীয় বাসিন্দারাই তৈরি করেন । প্রথম দিকে সড়কটি গ্রামের মানুষের জন্য ছিল মেঠো পথ। তবে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের আওতায় সম্প্রতি পাঁকা করা হয়েছে সড়ক টি।
নওগাঁর মহাদেবপুরের খাঁজুর ইউনিয়নের কয়ার পাড়ার ১২ কিলোমিটারের এ সংযোগ সড়কের ৩ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে সারি সারি তাল গাছ ।
তাল গাছ এক পায়ে দ্বাড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে। কবি গুরুর এ কবিতার মতো মাথা উচু করে দ্বাড়িয়ে থাকা এ তাল বাগান বিনোদন প্রিয় মানুষের কাছে এক ভিন্ন আমেজ তৈরি করেছে ।
সড়কের দু পাশে নিবির এ তাল গাছ গুলোকে সাদা চুনকাম করায় দুর থেকে দেখলে ফুটে উঠে গ্রামীণ আবহের এক অনন্য চিত্র । চার পাশে বিস্তৃত সবুজ মাঠের গ্রামীণ নির্মল পরিবেশ আর মুক্ত বাতাশ এক ভিন্ন আবহের শোভা ছড়াচ্ছে ।
আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে গ্রামীণ এ মেঠো পথ নিয়ে স্বপ্ন বুনে ছিলেন স্থানীয় কয়ার পাড়া গ্রামের বৃক্ষ প্রেমিক খিতিষ চন্দ্র । নিজ উদ্যেগে বিভিন্ন জায়গা থেকে তাল বীজ সংগ্রহ করে সড়কের দু পাশে রোপন করেন তিনি । সময়ের ব্যবধানে এসব তাল গাছ বজ্রপাত রোধে যেমন রাখছে অবদান অন্যদিকে সৌন্দর্যর শোভা ছড়াচ্ছে বিনোদন প্রিয় মানুষের কাছে ।
জেলা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দুরের এ তাল সাম্রজ্য পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশী সড়কের দু পাশের এ সৌন্দর্য আকৃষ্ট করছে দর্শনার্থীদের ।
প্রয়াত খিতিশের পুত্র…তপন মন্ডল জানান, তার বাবা কোন স্বার্থ নিয়ে এসব গাছ রোপন করেনি । পরিবেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসায় রোপন করেছিলেন এসব তাল বীজ । জীবিত অবস্থায় তার এ তাল বাগানের মুল্যায়ন করতে না পারলেও মহত এ কাজের জন্য স্বজন ও এলাকা বাসী আজ গর্বিত । স্থানীয় প্রবীণ শিক্ষক আশরাফ আলী, বলরাম চন্দ্র বর্মন জানান জীবিত অবস্থায় আমরা খিতিষের মুল্যায়ন করতে পারিনি । কিন্ত আজ খুব ভাল লাগছে তার কাজের মুল্যায়ন হচ্ছে দেখে ।
করোনা ও লক ডাউনের মাঝেও সকাল বিকাল দুর দুরান্ত থেকে তাল বাগানের দৃষ্টি নন্দন পরিবেশ দেখতে আসছে নানা বয়সী মানুষ । নির্মল প্রকৃতির নির্যাস নিতে ক্ষনিক সময় পার করেন আগত দর্শনার্থীরা । তাল সাম্রজ্যের এ সৌন্দর্য ধরে রাখতে বাড়তি কিছু অব কাঠামো গড়ে তোলার দাবী তাদের ।
এ তাল বাগান কে সংরক্ষন ও পরিবেশের ভুমিকা তুলে ধরে স্থানীয় ভাবে একটি স্বেচ্ছা সেবী সংগঠন কাজ করছে । এ সংগঠনের প্রধান প্রকৌশলী ফয়সাল হোসেন বলেন, আজ আমরা তাল বাগানের জন্য যেমন পুলকিত সে সাথে এ তাল বাগানের স্রষ্টা খিতিষের চেতনা নতুন প্রজম্মের মাঝে তুলে ধরতে চাই ।
স্থানীয় খাজুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: বেলাল হোসেন বলেন, প্রাকৃতিক দুরযোগ এড়াতে প্রয়াত খিতিষের মতো আরো বেশি তাল বাগান গড়ে তুলতে কাজ করবেন । আর তাল বাগানের দৃষ্টি নন্দন এ পরিবেশ রক্ষায় সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মিজানুর রহমান
স্থানীয়দের মতে সড়কের দু পাশে প্রয়াত খিতিষ ৫ কিলোমিটার জুড়ে প্রায় ১৫ হাজার তাল গাছ রোপন করেছিলেন ।