ঢাকা ০৮:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকা ও সাভারে ৪ জনের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার :পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে রাজধানী ঢাকায় এক দিনে প্রাণ গেল দুই নারীর। গতকাল ভাটারা ও নর্দা কালাচাঁদপুর এলাকায় এ দুটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। নিহতরা হলেন- জোবাইদা আক্তার ও নিকিতা আক্তার। তাদের মধ্যে জোবাইদা আক্তারকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছেন তার স্বামী আবু কাশেম মিয়া। এ ঘটনায় তাকে আটক করেছে পুলিশ।

নিহত জোবেদা স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সলমাইড পূর্বপাড়া আলামিনের বাসায় ভাড়া থাকতেন। তিনি বিভিন্ন বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। আর তার স্বামী রিকশাচালক। ভাটারা থানা সূত্রে জানা যায়, কাশেম ও জোবাইদার মধ্যে পরকীয়া সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঝগড়া চলছিল। গত বৃহস্পতিবার রাতে তাদের মধ্যে কাটাকাটি হয়। পরে জুবাইদাকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন কাশেম।

ভাটারা থানার পরিদর্শক পীযূষ কুমার সরকার বলেন, গতকাল সকালে খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। রাত দুইটা-আড়াইটার দিকে যেকোনো সময় ঘুমের মধ্যে ওই নারীকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় তার স্বামীকে আটক করা হয়েছে। তাদের দুটি ছেলে রয়েছে। তিনি পেশায় একজন রিকশাচালক।

ভাটারা থানার ওসি মুক্তারুজ্জামান বলেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে জোবাইদাকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি। এ ঘটনায় অভিযুক্ত কাশেমকে আটক করা হয়েছে। থানায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন।

এছাড়াও একই দিন গুলশানের নর্দা এলাকায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হয়েছেন নিকিতা আক্তার নামের আরেক নারী। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত নারীর ভাতিজি জেসমিন আক্তারকে আটক করেছে গুলশান থানা পুলিশ। গুলশান থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের জের ধরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিকিতা আক্তার খুন হন। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

সাভার থেকে জানান, ঢাকার সাভারে ক্ষেত থেকে দুই যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাদের গলায় ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। নিহতরা সম্পর্কে আপন খালাতো ভাই। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ৭ জনকে আটক করেছে। গতকাল সাভার উপজেলার ভাকুর্তা ইউনিয়নের হারুলিয়া গ্রামের পাশাপাশি পাট ক্ষেত থেকে একজনের ও ধইঞ্চা ক্ষেত থেকে আরেকজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

নিহত নাজমুল হোসেন বরিশাল জেলার গৌরনদী থানার পশ্চিম শেওরা গ্রামের নেছার মোল্লার ছেলে। অপরজন রায়হান একই এলাকার রতন খানের ছেলে। রায়হান সাভারের হেমায়েতপুরের যাদুরচর গ্রামে বাবা মায়ের সাথে ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় আল নাসির ল্যাবরেটরী স্কুলে লেখাপড়া করতো। সে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। রায়হান ও নাজমুল সম্পর্কে আপন খালাতো ভাই।

স্থানীয় ইউপি সদস্য রহমত আলী জানান, কৃষকরা ক্ষেতে কাজ করতে এসে লাশ দেখতে পেয়ে এলাকাবাসীদের জানায়। পরে এলাকার লোকজন পুলিশে খবর দেয়। স্থানীয় কয়েকজন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে তারা দেখতে এসেছেন। তবে নিহত এই যুবকদের তারা এর আগে গ্রামে দেখেননি। আর ক্ষেতগুলো গ্রাম থেকে একটু দূরে। ফলে কখন কারা এখানে আসা যাওয়া করে, তা দেখা একটু মুসকিল।

সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন জানান, হারুলিয়া গ্রামের ওই ক্ষেত দুটিতে অজ্ঞাত ওই দুই যুবকের লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই দুই যুবকের লাশ উদ্ধার করে। শার্ট-প্যান্ট পড়া ওই দুই যুবকের গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। তার ধারণা দুর্বৃত্তরা রাতে যে কোন সময় ওই স্থানে হত্যার পর লাশ ফেলে রেখে যায়। লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে পরিবারের স্বজনরা এসে শনাক্ত করেন।

তিনি আরও বলেন, তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে গভীর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে সিআইডি ও সাভার মডেল থানা পুলিশ উপস্থিত হয়ে লাশ উদ্ধার করে। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের কারণ উদ্ঘাটন এবং হত্যাকারীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলেও জানান।

পরিবারের বরাত দিয়ে ভাকুর্তা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই শাহ আলম জানান, গত বৃহস্পতিবারই নাজমুল বরিশাল থেকে খালার বাড়ি সাভারের হেমায়েতপুরের যাদুরচরে বেড়াতে আসে। রাত আনুমানিক ৯টার দিকে রায়হান ও নাজমুল বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। পরে আর বাসায় ফেরেনি তারা। সকালে লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে পরিচয় শনাক্ত করে পরিবারের সদস্যরা। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ দুটি দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

সাভার মডেল থানার ওসি কাজী মাইনুল ইসলাম জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘটনাস্থল ও এর আশপাশ এলাকা থেকে ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া থানা পুলিশের পাশাপাশি সিআইডি, পিবিআই ও গোয়েন্দা পুলিশ ঘটনাটির তদন্তে মাঠে নেমেছে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাভার মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ট্যাগস

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

ঢাকা ও সাভারে ৪ জনের মৃত্যু

আপডেট সময় ১২:১২:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুন ২০২১
স্টাফ রিপোর্টার :পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে রাজধানী ঢাকায় এক দিনে প্রাণ গেল দুই নারীর। গতকাল ভাটারা ও নর্দা কালাচাঁদপুর এলাকায় এ দুটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। নিহতরা হলেন- জোবাইদা আক্তার ও নিকিতা আক্তার। তাদের মধ্যে জোবাইদা আক্তারকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছেন তার স্বামী আবু কাশেম মিয়া। এ ঘটনায় তাকে আটক করেছে পুলিশ।

নিহত জোবেদা স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সলমাইড পূর্বপাড়া আলামিনের বাসায় ভাড়া থাকতেন। তিনি বিভিন্ন বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। আর তার স্বামী রিকশাচালক। ভাটারা থানা সূত্রে জানা যায়, কাশেম ও জোবাইদার মধ্যে পরকীয়া সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঝগড়া চলছিল। গত বৃহস্পতিবার রাতে তাদের মধ্যে কাটাকাটি হয়। পরে জুবাইদাকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন কাশেম।

ভাটারা থানার পরিদর্শক পীযূষ কুমার সরকার বলেন, গতকাল সকালে খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। রাত দুইটা-আড়াইটার দিকে যেকোনো সময় ঘুমের মধ্যে ওই নারীকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় তার স্বামীকে আটক করা হয়েছে। তাদের দুটি ছেলে রয়েছে। তিনি পেশায় একজন রিকশাচালক।

ভাটারা থানার ওসি মুক্তারুজ্জামান বলেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে জোবাইদাকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি। এ ঘটনায় অভিযুক্ত কাশেমকে আটক করা হয়েছে। থানায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন।

এছাড়াও একই দিন গুলশানের নর্দা এলাকায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হয়েছেন নিকিতা আক্তার নামের আরেক নারী। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত নারীর ভাতিজি জেসমিন আক্তারকে আটক করেছে গুলশান থানা পুলিশ। গুলশান থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের জের ধরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিকিতা আক্তার খুন হন। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

সাভার থেকে জানান, ঢাকার সাভারে ক্ষেত থেকে দুই যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাদের গলায় ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। নিহতরা সম্পর্কে আপন খালাতো ভাই। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ৭ জনকে আটক করেছে। গতকাল সাভার উপজেলার ভাকুর্তা ইউনিয়নের হারুলিয়া গ্রামের পাশাপাশি পাট ক্ষেত থেকে একজনের ও ধইঞ্চা ক্ষেত থেকে আরেকজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

নিহত নাজমুল হোসেন বরিশাল জেলার গৌরনদী থানার পশ্চিম শেওরা গ্রামের নেছার মোল্লার ছেলে। অপরজন রায়হান একই এলাকার রতন খানের ছেলে। রায়হান সাভারের হেমায়েতপুরের যাদুরচর গ্রামে বাবা মায়ের সাথে ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় আল নাসির ল্যাবরেটরী স্কুলে লেখাপড়া করতো। সে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। রায়হান ও নাজমুল সম্পর্কে আপন খালাতো ভাই।

স্থানীয় ইউপি সদস্য রহমত আলী জানান, কৃষকরা ক্ষেতে কাজ করতে এসে লাশ দেখতে পেয়ে এলাকাবাসীদের জানায়। পরে এলাকার লোকজন পুলিশে খবর দেয়। স্থানীয় কয়েকজন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে তারা দেখতে এসেছেন। তবে নিহত এই যুবকদের তারা এর আগে গ্রামে দেখেননি। আর ক্ষেতগুলো গ্রাম থেকে একটু দূরে। ফলে কখন কারা এখানে আসা যাওয়া করে, তা দেখা একটু মুসকিল।

সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামাল হোসেন জানান, হারুলিয়া গ্রামের ওই ক্ষেত দুটিতে অজ্ঞাত ওই দুই যুবকের লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই দুই যুবকের লাশ উদ্ধার করে। শার্ট-প্যান্ট পড়া ওই দুই যুবকের গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। তার ধারণা দুর্বৃত্তরা রাতে যে কোন সময় ওই স্থানে হত্যার পর লাশ ফেলে রেখে যায়। লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে পরিবারের স্বজনরা এসে শনাক্ত করেন।

তিনি আরও বলেন, তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে গভীর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে সিআইডি ও সাভার মডেল থানা পুলিশ উপস্থিত হয়ে লাশ উদ্ধার করে। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের কারণ উদ্ঘাটন এবং হত্যাকারীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলেও জানান।

পরিবারের বরাত দিয়ে ভাকুর্তা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই শাহ আলম জানান, গত বৃহস্পতিবারই নাজমুল বরিশাল থেকে খালার বাড়ি সাভারের হেমায়েতপুরের যাদুরচরে বেড়াতে আসে। রাত আনুমানিক ৯টার দিকে রায়হান ও নাজমুল বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। পরে আর বাসায় ফেরেনি তারা। সকালে লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে পরিচয় শনাক্ত করে পরিবারের সদস্যরা। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ দুটি দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

সাভার মডেল থানার ওসি কাজী মাইনুল ইসলাম জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘটনাস্থল ও এর আশপাশ এলাকা থেকে ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া থানা পুলিশের পাশাপাশি সিআইডি, পিবিআই ও গোয়েন্দা পুলিশ ঘটনাটির তদন্তে মাঠে নেমেছে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাভার মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।