ঢাকা ০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঠাকুরগাঁওয়ে ‘অলৌকিক আগুনের’ নাটক, গ্রেফতার ১২

ঠাকিুরগাঁও প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে ঘর পোড়ানোর মামলা থেকে বাঁচতে ‘অলৌকিক আগুনের নাটক’ সাজিয়ে মানুষের মাঝে ভীতি সৃষ্টির অভিযোগে ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

রোববার (২ মে) রাতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক আকরাম আলী গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ছোট সিঙ্গিয়া মুন্সিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সামসুজ্জোহা, এহেতাসাম উল্লাহ, মকসেদুল ইসলাম, ইন্তাজ আলী, দেলোয়ার হোসেন, কফিল উদ্দীন, ওবায়দুল্লাহ, তহিদুর রহমান, আজিম উদ্দীন চৌধুরী, মন্টু আলম, মেহেরুন নেছা ও বিলকিস আক্তার। তাদের বয়স ৩১ বছর থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে।

এর আগে শনিবার (১ মে) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের ছোট সিঙ্গিয়া মুন্সিপাড়া গ্রাম থেকে তাদের আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা গুজব ছড়িয়ে অলৌকিক আগুনের নাটক সাজিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছেন।

চলতি বছরের ২৮ মার্চ কে বা কারা সালেহা বেগমের চারটি গোয়ালঘর ও দুই বিঘা জমির গমে আগুন দেয়। ৬ এপ্রিল সালেহার চাচা সিরাজ উদ্দিনের খড় রাখার ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এতে পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মামলায় করা হয়।

গত ৮ এপ্রিল দুপুরে প্রতিবেশী ইনতাজ আলীর বাড়ির কাপড় কাঁচার বালতিতে আগুন ধরে- এমন মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে বাদী ও সালেহা বেগমের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন গ্রামের কয়েকজন মানুষ।

তবে গ্রামবাসীর কাছে বিষয়গুলো নিয়ে সালেহা বেগম কথা বললে এই গুজবের সত্যতা দেখাতে পারেননি তারা। এ ঘটনার ২৯ এপ্রিল সালেহা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে বালিয়াডাঙ্গী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

স্থানীয়রা জানান, ছোট সিঙ্গিয়া মুন্সিপাড়া গ্রামের পাঁচটি বাড়িতে ‘প্রতিদিন অলৌকিক আগুনের’ ঘটনা ঘটছে। প্রায় একমাস আগে হঠাৎ করে দিনের বেলা গ্রামের বাসিন্দা মুসলিম উদ্দিনের খড়ের ঘরে প্রথমে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হলে তারা এসে আগুন নেভায়।

ওই সময় গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের বাড়িতে খড় সংরক্ষণের ঘরেও আগুন লাগে। আবারও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হয়। কয়েক দিন পর গ্রামের বাসিন্দা বাবুল হোসেন ও আব্দুস সালামের বাড়ির খড়ে আগুন লাগে।

এরপর থেকে প্রতিদিনই ওই গ্রামের দেলোয়ার হোসেন, মকসেদুল ইসলাম, মুরাদ হোসেন, মো. সাইফুল্লাহ ও নাঈম হোসেনের মধ্যে কারও না কারও খড়ের গাদা, ঘরে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে গ্রামের মানুষ।

ক্ষতিগ্রস্তরা দাবি করেন, অলৌকিকভাবে জীনেরা গ্রামের যেখানে সেখানে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। তবে ফায়ার সার্ভিসের দাবি, পারিবারিক শত্রুতার কারণে আগুনের ঘটনা ঘটতে পারে। এ ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে মাঠে নামে ঠাকুরগাঁও ডিবি পুলিশ।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আকরাম আলী বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহ হলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১২ জনকে আটক করা হয়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে আটক ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এজন্য তদেরকে সালেহা বেগমের দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে সালেহা বেগমের দায়েরকৃত মামলা থেকে বাঁচতে গ্রামে অলৌকিক আগুনের সাজানো নাটক সাজানো হয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্যে ছিল মানুষের মাঝে ভীতি সৃষ্টি করা এবং সালেহা বেগমের জমি দখল করা।

ঠাকুরগাঁও কোর্ট ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আরিফুর রহমান গ্রেফতারকৃত ১২ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে আসামিদের রিমান্ডের জন্য তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের বিষয়ে ৬ মে শুনানি দিন ধার্য করা হয়েছে।

ট্যাগস

ঠাকুরগাঁওয়ে ‘অলৌকিক আগুনের’ নাটক, গ্রেফতার ১২

আপডেট সময় ১১:৫৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ মে ২০২১

ঠাকিুরগাঁও প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে ঘর পোড়ানোর মামলা থেকে বাঁচতে ‘অলৌকিক আগুনের নাটক’ সাজিয়ে মানুষের মাঝে ভীতি সৃষ্টির অভিযোগে ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

রোববার (২ মে) রাতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক আকরাম আলী গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ছোট সিঙ্গিয়া মুন্সিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সামসুজ্জোহা, এহেতাসাম উল্লাহ, মকসেদুল ইসলাম, ইন্তাজ আলী, দেলোয়ার হোসেন, কফিল উদ্দীন, ওবায়দুল্লাহ, তহিদুর রহমান, আজিম উদ্দীন চৌধুরী, মন্টু আলম, মেহেরুন নেছা ও বিলকিস আক্তার। তাদের বয়স ৩১ বছর থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে।

এর আগে শনিবার (১ মে) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের ছোট সিঙ্গিয়া মুন্সিপাড়া গ্রাম থেকে তাদের আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা গুজব ছড়িয়ে অলৌকিক আগুনের নাটক সাজিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছেন।

চলতি বছরের ২৮ মার্চ কে বা কারা সালেহা বেগমের চারটি গোয়ালঘর ও দুই বিঘা জমির গমে আগুন দেয়। ৬ এপ্রিল সালেহার চাচা সিরাজ উদ্দিনের খড় রাখার ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এতে পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মামলায় করা হয়।

গত ৮ এপ্রিল দুপুরে প্রতিবেশী ইনতাজ আলীর বাড়ির কাপড় কাঁচার বালতিতে আগুন ধরে- এমন মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে বাদী ও সালেহা বেগমের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন গ্রামের কয়েকজন মানুষ।

তবে গ্রামবাসীর কাছে বিষয়গুলো নিয়ে সালেহা বেগম কথা বললে এই গুজবের সত্যতা দেখাতে পারেননি তারা। এ ঘটনার ২৯ এপ্রিল সালেহা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে বালিয়াডাঙ্গী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

স্থানীয়রা জানান, ছোট সিঙ্গিয়া মুন্সিপাড়া গ্রামের পাঁচটি বাড়িতে ‘প্রতিদিন অলৌকিক আগুনের’ ঘটনা ঘটছে। প্রায় একমাস আগে হঠাৎ করে দিনের বেলা গ্রামের বাসিন্দা মুসলিম উদ্দিনের খড়ের ঘরে প্রথমে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হলে তারা এসে আগুন নেভায়।

ওই সময় গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের বাড়িতে খড় সংরক্ষণের ঘরেও আগুন লাগে। আবারও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হয়। কয়েক দিন পর গ্রামের বাসিন্দা বাবুল হোসেন ও আব্দুস সালামের বাড়ির খড়ে আগুন লাগে।

এরপর থেকে প্রতিদিনই ওই গ্রামের দেলোয়ার হোসেন, মকসেদুল ইসলাম, মুরাদ হোসেন, মো. সাইফুল্লাহ ও নাঈম হোসেনের মধ্যে কারও না কারও খড়ের গাদা, ঘরে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে গ্রামের মানুষ।

ক্ষতিগ্রস্তরা দাবি করেন, অলৌকিকভাবে জীনেরা গ্রামের যেখানে সেখানে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। তবে ফায়ার সার্ভিসের দাবি, পারিবারিক শত্রুতার কারণে আগুনের ঘটনা ঘটতে পারে। এ ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে মাঠে নামে ঠাকুরগাঁও ডিবি পুলিশ।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আকরাম আলী বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহ হলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১২ জনকে আটক করা হয়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে আটক ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এজন্য তদেরকে সালেহা বেগমের দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে সালেহা বেগমের দায়েরকৃত মামলা থেকে বাঁচতে গ্রামে অলৌকিক আগুনের সাজানো নাটক সাজানো হয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্যে ছিল মানুষের মাঝে ভীতি সৃষ্টি করা এবং সালেহা বেগমের জমি দখল করা।

ঠাকুরগাঁও কোর্ট ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আরিফুর রহমান গ্রেফতারকৃত ১২ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে আসামিদের রিমান্ডের জন্য তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের বিষয়ে ৬ মে শুনানি দিন ধার্য করা হয়েছে।