স্টাফ রিপোর্টারঃ ঠিক আট বছর আগে আজকের এই দিনে সাভারের রানা প্লাজা ধসে এক হাজারের বেশি শ্রমিক নিহতের ঘটনা সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
ভবন ধসে বিপুলসংখ্যক মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনায় ওই সময় মোট চারটি মামলা করা হয়। তবে এত প্রাণহানির পেছনে দায় যাদের, তাদের বিচার শেষ হয়নি আট বছরেও।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে নয় তলা বিশিষ্ট রানা প্লাজা ভবনটি ধসে পড়ে। ভবনটির তৃতীয় তলা থেকে নবম তলা পর্যন্ত ছিল পাঁচটি পোশাক কারখানা। এতে প্রায় চার হাজার পোশাক শ্রমিক কাজ করতেন। ভবন ধসের সাথে সাথে ধ্বংসস্তূপের ভেতরে চাপা পড়েন চার হাজার পোশাক শ্রমিক। তাদের কান্না আর আহাজারিতে পুরো সাভারে শোকের মাতম নেমে আসে।
ওই সময় ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে দুই হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়, যাদের বেশির ভাগই পঙ্গুত্ব বরণ করে। ভয়াবহ ওই ট্রাজেডিতে এক হাজার ১৩৬ জনের মৃত্যু হয়।
এ দিকে, রানা প্লাজার ঘটনায় করা হত্যা মামলার বিচার এখনো থমকে আছে। মামলার চার্জশিটভুক্ত দুই আসামির পক্ষে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ বন্ধ রয়েছে।
ঠিক কবে নাগাদ মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শুরু হবে, এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ জানাতে পারেননি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. মিজানুর রহমান।
গণমাধ্যমকে তিনি জানান, ‘রানা প্লাজা ধসের ঘটনার হত্যা মামলায় দুজন আসামির পক্ষে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ বহাল থাকার কারণে সাক্ষ্যগ্রহণ বন্ধ রয়েছে।’
জানা যায়, দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করা এ ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়। এরমধ্যে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে হত্যা মামলাটি করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে অপর মামলাটি করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। আর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ভবন নির্মাণসংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে তৃতীয় মামলাটি দায়ের করে।
২০১৬ সালের ১৮ জুলাই হত্যার অভিযোগে সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
আদালত সূত্র বলছে, রানা প্লাজা ধস হত্যা মামলায় ৪১ আসামির মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন একজন। তিনি হলেন আলোচিত ভবনটির মালিক সোহেল রানা। জামিনে আছেন ৩২ আসামি। আর পলাতক ছয়জন। এছাড়া সোহেল রানার বাবা আবদুল খালেকসহ মারা গেছেন দুই আসামি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুরের কাশিমপুর পার্ট-২ কারাগারে আছেন সোহেল রানা। সাধারণ বন্দীদের মতোই তিনি সেলে থাকেন। প্রায় আট বছর ধরে কারাগারে থাকার কারণে কারাজীবনের সাথে অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। ভাবলেশহীন অবস্থায় দিন কাটান। ইতিহাসে স্থান করে নেওয়া ভয়ংকর ট্রাজেডির জন্য দায়ী হিসেবে তেমন কোনো অনুশোচনাবোধও তার মধ্যে লক্ষ্য করা যায় না বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।