স্টাফ রিপোর্ট:হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের ‘উসকানি দিয়ে মাঠে নামিয়েছিলেন’ মন্তব্য করে পুলিশ বলেছে, তার উদ্দেশ্য ছিল ‘সরকার উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল’ করা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ- কমিশনার মো. হারুন অর রশিদ বলছেন, রিমান্ডে থাকা মামুনুল হক পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নিজেই এমন ‘তথ্য দিয়েছেন’।
“হেফাজতের নেতাকর্মীদের উসকানি দিতেন মামুনুল। তিনি বলতেন, শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে হেফাজতের সমর্থন ছাড়া কেউ ক্ষমতা দখল করতে পারবে না।”
জিজ্ঞাসাবাদে মামুনুল ‘অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য’ দিয়েছেন বলেও মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন পুলিশ কর্মকর্তা হারুন।
চলতি মাসের শুরুতে সোনারগাঁওয়ে রিসোর্টকাণ্ডের পর হেফাজতের ভাঙচুর ও সহিংসতা এবং একাধিক বিয়ে নিয়ে আলোচনায় আছেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মামুনুল, যিনি দলটির ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক।
এর মধ্যে মোহাম্মদপুর থানায় ২০২০ সালের একটি নাশকতার মামলায় গত রোববার স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সোমবার আদালত হাজির করা হলে বিচারক তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপ পুলিশ কমিশনার হারুন বলেন, মোহাম্মদপুরের ওই মামলায় বাদীর অভিযোগ ধরে এবং সেদিনের হামলার ভিডিও দেখিয়ে মামুনুলকে তারা প্রশ্ন করেছিলেন- মসজিদে তাবলিগ জামাতের নিজামুদ্দিন মারকাজের আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের মারপিট করা হয়েছিল কেন? উত্তরে মামুনুল বলেছেন, ‘এটি ঠিক হয়নি’।
তাবলিগ জামাতের বিবাদমান দুই পক্ষের মধ্যে মাওলানা জুবায়েরুল হাসানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত হেফাজত নেতা মামুনুল।
“তিনি ভেবেছিলেন, সাদপন্থিদের পিটিয়ে মসজিদ থেকে বের করে দিলে তারা দুর্বল হয়ে যাবেন,” বলেন উপ কমিশনার হারুন।
জিজ্ঞাসাবাদের সময় মামুনলকে তার কয়েকটি ওয়াজের ভিডিও দেখানো হয় জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “সেখানে তিনি সাধারণ ধর্মভীরু মানুষকে উসকানি দিয়েছেন।
শাহরিয়ার কবিরকে মুরগি চোর বলা, হাসানুল হক ইনু ও সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই জুতাপেটা করার কথা বলে লোকজনকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করেছেন। এসব বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মামুনুল বলেছেন, জোশের কারণে এসব মন্তব্য করে ফেলেছেন।”
মামুনুল হকের পেছনে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের ‘মদদ’ আছে কিনা সে বিষয়েও ধারাবাহিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং কেউ তাকে ‘ইন্ধন’ দিয়ে থাকলে কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন উপ পুলিশ কমিশনার হারুন।
গত মার্চ মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফর ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে হেফাজত নেতাকর্মীরা তাণ্ডব চালায়। ওই সময় সংঘর্ষে প্রাণ হারান অন্তত ১৮ জন।
এরপর দোষীদের ধরতে শুরু হয় পুলিশের অভিযান। দলটির কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতাকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রিমান্ডের প্রথম দিন মঙ্গলবার দুপুরে মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে মামুনুলকে প্রায় এক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন উপ কমিশনার হারুন অর রশিদ। এ সময় তদন্ত কর্মকর্তা ছাড়াও গোয়েন্দা পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা ছিলেন তার সাথে। পরে নিজের কার্যালয়ে এসে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।