ঢাকা ১২:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
Logo বিএনপি যতই চাপ দিক, সংস্কারের ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচন: উপদেষ্টা নাহিদ Logo ঈদ ছাড়াও সিনেমা সুপারহিট হয়: শাকিব খান Logo যুক্তরাজ্যে গেলেই গ্রেপ্তার হবেন নেতানিয়াহু! Logo নওগাঁ ছাত্র -জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের স্মরণে স্মরণসভা Logo নির্বাচন দ্রুত হওয়া প্রয়োজন, নয়তো ষড়যন্ত্র বাড়বে: তারেক রহমান Logo আদানির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি Logo ইউক্রেনের প্রথম আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল রাশিয়া Logo সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে সম্ভাষণ জানালেন ড. ইউনূস Logo সুমন হত্যা মামলার প্রধান আসামি বুলবুল গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার Logo সাফ চ্যাম্পিয়ন তিন নারী খেলোয়াড়কে সাতক্ষীরায় গণসংবর্ধনা

নিরাপদ খাদ্য: বাধ্যবাধকতার আওতায় আসছেন ব্যবসায়ীরা

নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে নানা বাধ্যবাধকতার আওতায় আসছেন খাদ্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা। এজন্য ‘নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩’ অনুযায়ী ‘নিরাপদ খাদ্য (খাদ্য ব্যবসায়ীর বাধ্যবাধকতা) প্রবিধানমালা, ২০২০’ প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।

নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ীরা খাদ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যেসব কাজ করতে বাধ্য থাকবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে এই প্রবিধানমালায়।

এতে বলা হয়েছে, খাদ্য ব্যবসায়ীদের তাদের পণ্যে ব্যবহার করা রাসায়নিকের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণক সংরক্ষণ করতে হবে। খাদ্য উৎপাদনের কাঁচামালের বিষয়েও তথ্য-প্রমাণক সংরক্ষণ করতে হবে তাদের। খাদ্য ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে কর্তৃপক্ষকে জানাতে বাধ্য থাকবেন ব্যবসায়ীরা। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনার জন্য কর্মীদের প্রশিক্ষণও দিতে হবে। প্রবিধানের শর্ত পালন করতে ব্যর্থ হলে খাদ্য ব্যবসায়ীকে পড়তে হবে শাস্তির মুখে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০১৩ সালের নিরাপদ খাদ্য আইনে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে ব্যবসায়ীরা কী করবেন তা বলা ছিল। তবে সেটা ছিল সংক্ষিপ্ত আকারে। এখন আমরা বিস্তারিত প্রক্রিয়া বলে দিয়েছি প্রবিধানমালায়। এগুলো মানতে তারা বাধ্য থাকবেন। না মানলে আমরা আমাদের ফোর্স অ্যাপ্লাই করব। মূল আইনে শাস্তির বিষয়টি রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রবিধানমালার কারণে আমাদের তদারকি কিংবা এনফোর্সমেন্টের কাজ আরও সহজ হবে। কারণ আগে ব্যবসায়ীরা বলতেন প্রসেস জানি না, কীভাবে করব। এখন আর তারা সেটা বলতে পারবেন না।’

আমদানি ও বিক্রয় সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডসহ খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্রস্তুতকরণ, মোড়কজাতকরণ, পরিবহন, গুদামজাতকরণ, বিতরণ, প্রদর্শন ও বিপণনের সব পর্যায়ের জন্য এই প্রবিধানমালা প্রযোজ্য হবে।

প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে খাদ্য ব্যবসায়ীদের খাদ্য প্রস্তুত বা প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে অনুমোদিত রাসায়নিক ব্যবহার করতে হবে। প্রিজারভেটিভ বা রঞ্জক বা ঘ্রাণ সৃষ্টিকারী রাসায়নিক বা ব্যবহৃত অন্য যে কোনো রাসায়নিকের নাম, বৈজ্ঞানিক সংকেত, রাসায়নিক কোড, পরিমাণ, গ্রেড, বিশুদ্ধতা, উৎপাদনকারী ও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের নাম এবং ঠিকানা, উৎস স্থান বা দেশ, উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, খাদ্যে ব্যবহারের উপযুক্ততা ইত্যাদি তথ্য নথিভুক্ত করে প্রত্যেক ব্যাচভিত্তিক তথ্য ও প্রমাণক সংরক্ষণ করবেন খাদ্য ব্যবসায়ীরা।

উৎপাদন বা আমদানি করা খাদ্যে অনুমোদিত রাসায়নিক বা ভারী ধাতু বা তেজস্ক্রিয় পদার্থ বা রঞ্জক বা সুগন্ধি বা ক্ষতিকর অণুজীব ইত্যাদির উপস্থিতি বা মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি রয়েছে কি-না তা শনাক্তে স্বীকৃত পরীক্ষাগারে খাদ্যের নমুনা বিশ্লেষণ করে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সংরক্ষণ করবেন খাদ্য ব্যবসায়ীরা। এছাড়া খাদ্যের মান নির্ধারিত পর্যায়ে রয়েছে কি-না, ব্যবসায়ীরা তা স্বীকৃত খাদ্য পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করাবেন এবং সন্তোষজনক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে খাদ্য বা খাদ্যপণ্য বাজারজাত করবেন।

ব্যবসায়ী খাদ্যের মেয়াদ নির্ধারণের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করবেন এবং যার ভিত্তিতে খাদ্যের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে, সেই বিশ্লেষণ প্রতিবেদন বা তথ্যাদি ও প্রমাণক সংরক্ষণ করবেন। তবে আমদানি করা খাদ্যপণ্যের মেয়াদ মূল প্রস্তুতকারী নির্ধারণ করবেন।

ব্যবসায়ী খাদ্য ব্যবসা পরিচালনা সংশ্লিষ্ট প্রমাণক ও দলিলাদি হালনাগাদ করবেন এবং কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী পেশ করতে হবে বলে প্রবিধানমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

খাদ্য ব্যবসায়ী কাঁচামাল চিহ্নিতকরণ, প্রক্রিয়াকরণ, উৎপাদন, আমদানি, সরবরাহ ও বিক্রয় কার্যক্রম যাচাইয়ের প্রয়োজনীয় প্রমাণক সংরক্ষণ করবেন এবং অন্য কোনো ব্যবসায়ীর কাছ থেকে খাদ্য বা খাদ্য উপকরণ (কাঁচামাল), মৎস্যখাদ্য, পশুখাদ্য বা খাদ্য বা মৎস্য ও পশুখাদ্যের সংযোজক দ্রব্য ইত্যাদি সরবরাহ বা গ্রহণ করলে তা চিহ্নিত করার জন্য প্রমাণক সংরক্ষণ করবেন।

খাদ্য ব্যবসায়ীকে অন্য কোনো ব্যবসায়ীর কাছ থেকে খাদ্য বা খাদ্যপণ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে খাদ্য ব্যবসায়ীর নাম ও ঠিকানা; খাদ্যের যথাযথ বিবরণ; খাদ্যের পরিমাণ, লট, ব্যাচ, চালান (যা প্রযোজ্য) শনাক্ত করার স্মারক ইত্যাদি; প্রত্যেকটি লেনদেন বা সরবরাহের তারিখ; সংশ্লিষ্ট অন্যান্য তথ্য প্রমাণক হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে।

খাদ্য ব্যবসায়ীর অন্য কোনো ব্যবসায়ীকে খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে খাদ্য ব্যবসায়ীর নাম ও ঠিকানা; খাদ্যের যথাযথ বিবরণ; খাদ্যের পরিমাণ; লট, ব্যাচ, চালান (যা প্রযোজ্য) শনাক্ত করার স্মারক ইত্যাদি; প্রত্যেকটি লেনদেন বা সরবরাহের তারিখ; সংশ্লিষ্ট অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে।

খাদ্য প্রস্তুত বা প্রক্রিয়াকরণের পদ্ধতি পরিবর্তন বা কারিগরি বিচ্যুতি সংশোধন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের নিয়ন্ত্রণ ধাপ সম্পর্কিত তথ্যাদি এবং খাদ্যদ্রব্যের বিশেষ সংরক্ষণ, সরবরাহ বা বিতরণ ও ব্যবহারের প্রমাণক সংরক্ষণ করতে হবে।

খাদ্য ব্যবসায়ী এসব প্রমাণক বা তথ্য খাদ্যপণ্যের মেয়াদ উত্তীর্ণের পর কমপক্ষে তিন মাস পর্যন্ত এবং খাদ্য ব্যবসার অন্যান্য তথ্য বা প্রমাণক পাঁচ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করবেন।

প্রবিধানমালায় আরও বলা হয়েছে, খাদ্য ব্যবসায়ীকে নিশ্চিত করতে হবে যে, খাদ্য ব্যবসায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং আইন ও বিধি-বিধান ও নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে থাকেন। খাদ্য ব্যবসায়ীকে তার কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে প্রশিক্ষণের হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে।

খাদ্য ব্যবসায়ীকে নিশ্চিত করতে হবে, খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত ও স্থানান্তর বা পরিবহনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ রয়েছে এবং যে কাজে তারা নিয়োজিত সেই কাজে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ সম্পর্কিত জ্ঞান ও দক্ষতার প্রতিফলন ঘটিয়ে থাকেন।

jagonews24

ভেজাল ও মানহীন পণ্য বিক্রির কারণে সম্প্রতি রাজধানীর চকবাজারের সামি স্টোরকে জরিমানা করা হয়

খাদ্য ব্যবসায়ীকে খাদ্যের বিশেষ সংরক্ষণ ব্যবস্থা (খাদ্য হিমায়িত, শীতলীকৃত, বায়ুনিরোধকৃত, নিয়ন্ত্রিত বা পরিবর্তিত গ্যাসীয় ইত্যাদি কারিগরি বা প্রযুক্তিগত পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে সংরক্ষণ) নিশ্চিত করতে হবে এবং এই বিশেষ সংরক্ষিত খাদ্য সরবরাহ বা বিতরণ ও বিক্রির ক্ষেত্রে একই প্রকারের বা সমজাতীয় কারিগরি বা প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা বজায় রাখতে হবে।

যদি কোনো খাদ্য ব্যবসায়ী তার খাদ্য ব্যবস্থাপনায় বা খাদ্য ব্যবসায়ে পদ্ধতিগত বা প্রকৃতিগত বা প্রযুক্তিগত কোনো সংস্কার বা পরিবর্তন সাধন করেন বা করার উদ্যোগ নেন, তাহলে এই পরিবর্তনের বিষয়টি পরিদর্শনের জন্য কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।

খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনকালে পরিদর্শক বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে যদি প্রতীয়মান হয় যে, খাদ্য ব্যবসায়ী বা তার কোনো প্রতিনিধি, খাদ্যকর্মী বা কর্মচারী এই প্রবিধানমালার প্রযোজ্য শর্ত পালন করছেন না, তাহলে ওই খাদ্য ব্যবসায়ীকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শর্ত পালনের জন্য নোটিশ দেবেন।

এরপরও শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে খাদ্য ব্যবসায়ীকে সতর্ক করে নোটিশ দেবেন। এরপরও শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে তা নিরাপদ খাদ্যবিরোধী কাজ বলে গণ্য হবে। কোনো খাদ্য ব্যবসায়ী নোটিশে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করণীয় পদক্ষেপ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে পরিদর্শক বা কর্তৃপক্ষ তার খাদ্য ব্যবসা পরিচালনার লাইসেন্স বা নিবন্ধন সনদ বাতিল করার জন্য সংশ্লিষ্ট নিবন্ধক বা লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করবেন। একই সঙ্গে বিষয়টি তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানাবেন বলে প্রবিধানমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, ভোক্তাকে জানানোর উদ্দেশ্যে পরিদর্শকের দেয়া সব নোটিশ খাদ্যপণ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে প্রদর্শন করতে হবে।

ট্যাগস

বিএনপি যতই চাপ দিক, সংস্কারের ওপর ভিত্তি করেই নির্বাচন: উপদেষ্টা নাহিদ

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

নিরাপদ খাদ্য: বাধ্যবাধকতার আওতায় আসছেন ব্যবসায়ীরা

আপডেট সময় ০৮:৩৮:৪৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ জানুয়ারী ২০২১

নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে নানা বাধ্যবাধকতার আওতায় আসছেন খাদ্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা। এজন্য ‘নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩’ অনুযায়ী ‘নিরাপদ খাদ্য (খাদ্য ব্যবসায়ীর বাধ্যবাধকতা) প্রবিধানমালা, ২০২০’ প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।

নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ীরা খাদ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যেসব কাজ করতে বাধ্য থাকবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে এই প্রবিধানমালায়।

এতে বলা হয়েছে, খাদ্য ব্যবসায়ীদের তাদের পণ্যে ব্যবহার করা রাসায়নিকের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য-প্রমাণক সংরক্ষণ করতে হবে। খাদ্য উৎপাদনের কাঁচামালের বিষয়েও তথ্য-প্রমাণক সংরক্ষণ করতে হবে তাদের। খাদ্য ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে কর্তৃপক্ষকে জানাতে বাধ্য থাকবেন ব্যবসায়ীরা। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনার জন্য কর্মীদের প্রশিক্ষণও দিতে হবে। প্রবিধানের শর্ত পালন করতে ব্যর্থ হলে খাদ্য ব্যবসায়ীকে পড়তে হবে শাস্তির মুখে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০১৩ সালের নিরাপদ খাদ্য আইনে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে ব্যবসায়ীরা কী করবেন তা বলা ছিল। তবে সেটা ছিল সংক্ষিপ্ত আকারে। এখন আমরা বিস্তারিত প্রক্রিয়া বলে দিয়েছি প্রবিধানমালায়। এগুলো মানতে তারা বাধ্য থাকবেন। না মানলে আমরা আমাদের ফোর্স অ্যাপ্লাই করব। মূল আইনে শাস্তির বিষয়টি রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রবিধানমালার কারণে আমাদের তদারকি কিংবা এনফোর্সমেন্টের কাজ আরও সহজ হবে। কারণ আগে ব্যবসায়ীরা বলতেন প্রসেস জানি না, কীভাবে করব। এখন আর তারা সেটা বলতে পারবেন না।’

আমদানি ও বিক্রয় সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডসহ খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্রস্তুতকরণ, মোড়কজাতকরণ, পরিবহন, গুদামজাতকরণ, বিতরণ, প্রদর্শন ও বিপণনের সব পর্যায়ের জন্য এই প্রবিধানমালা প্রযোজ্য হবে।

প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে খাদ্য ব্যবসায়ীদের খাদ্য প্রস্তুত বা প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে অনুমোদিত রাসায়নিক ব্যবহার করতে হবে। প্রিজারভেটিভ বা রঞ্জক বা ঘ্রাণ সৃষ্টিকারী রাসায়নিক বা ব্যবহৃত অন্য যে কোনো রাসায়নিকের নাম, বৈজ্ঞানিক সংকেত, রাসায়নিক কোড, পরিমাণ, গ্রেড, বিশুদ্ধতা, উৎপাদনকারী ও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের নাম এবং ঠিকানা, উৎস স্থান বা দেশ, উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, খাদ্যে ব্যবহারের উপযুক্ততা ইত্যাদি তথ্য নথিভুক্ত করে প্রত্যেক ব্যাচভিত্তিক তথ্য ও প্রমাণক সংরক্ষণ করবেন খাদ্য ব্যবসায়ীরা।

উৎপাদন বা আমদানি করা খাদ্যে অনুমোদিত রাসায়নিক বা ভারী ধাতু বা তেজস্ক্রিয় পদার্থ বা রঞ্জক বা সুগন্ধি বা ক্ষতিকর অণুজীব ইত্যাদির উপস্থিতি বা মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি রয়েছে কি-না তা শনাক্তে স্বীকৃত পরীক্ষাগারে খাদ্যের নমুনা বিশ্লেষণ করে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সংরক্ষণ করবেন খাদ্য ব্যবসায়ীরা। এছাড়া খাদ্যের মান নির্ধারিত পর্যায়ে রয়েছে কি-না, ব্যবসায়ীরা তা স্বীকৃত খাদ্য পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করাবেন এবং সন্তোষজনক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে খাদ্য বা খাদ্যপণ্য বাজারজাত করবেন।

ব্যবসায়ী খাদ্যের মেয়াদ নির্ধারণের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করবেন এবং যার ভিত্তিতে খাদ্যের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে, সেই বিশ্লেষণ প্রতিবেদন বা তথ্যাদি ও প্রমাণক সংরক্ষণ করবেন। তবে আমদানি করা খাদ্যপণ্যের মেয়াদ মূল প্রস্তুতকারী নির্ধারণ করবেন।

ব্যবসায়ী খাদ্য ব্যবসা পরিচালনা সংশ্লিষ্ট প্রমাণক ও দলিলাদি হালনাগাদ করবেন এবং কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী পেশ করতে হবে বলে প্রবিধানমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

খাদ্য ব্যবসায়ী কাঁচামাল চিহ্নিতকরণ, প্রক্রিয়াকরণ, উৎপাদন, আমদানি, সরবরাহ ও বিক্রয় কার্যক্রম যাচাইয়ের প্রয়োজনীয় প্রমাণক সংরক্ষণ করবেন এবং অন্য কোনো ব্যবসায়ীর কাছ থেকে খাদ্য বা খাদ্য উপকরণ (কাঁচামাল), মৎস্যখাদ্য, পশুখাদ্য বা খাদ্য বা মৎস্য ও পশুখাদ্যের সংযোজক দ্রব্য ইত্যাদি সরবরাহ বা গ্রহণ করলে তা চিহ্নিত করার জন্য প্রমাণক সংরক্ষণ করবেন।

খাদ্য ব্যবসায়ীকে অন্য কোনো ব্যবসায়ীর কাছ থেকে খাদ্য বা খাদ্যপণ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে খাদ্য ব্যবসায়ীর নাম ও ঠিকানা; খাদ্যের যথাযথ বিবরণ; খাদ্যের পরিমাণ, লট, ব্যাচ, চালান (যা প্রযোজ্য) শনাক্ত করার স্মারক ইত্যাদি; প্রত্যেকটি লেনদেন বা সরবরাহের তারিখ; সংশ্লিষ্ট অন্যান্য তথ্য প্রমাণক হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে।

খাদ্য ব্যবসায়ীর অন্য কোনো ব্যবসায়ীকে খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে খাদ্য ব্যবসায়ীর নাম ও ঠিকানা; খাদ্যের যথাযথ বিবরণ; খাদ্যের পরিমাণ; লট, ব্যাচ, চালান (যা প্রযোজ্য) শনাক্ত করার স্মারক ইত্যাদি; প্রত্যেকটি লেনদেন বা সরবরাহের তারিখ; সংশ্লিষ্ট অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে।

খাদ্য প্রস্তুত বা প্রক্রিয়াকরণের পদ্ধতি পরিবর্তন বা কারিগরি বিচ্যুতি সংশোধন, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের নিয়ন্ত্রণ ধাপ সম্পর্কিত তথ্যাদি এবং খাদ্যদ্রব্যের বিশেষ সংরক্ষণ, সরবরাহ বা বিতরণ ও ব্যবহারের প্রমাণক সংরক্ষণ করতে হবে।

খাদ্য ব্যবসায়ী এসব প্রমাণক বা তথ্য খাদ্যপণ্যের মেয়াদ উত্তীর্ণের পর কমপক্ষে তিন মাস পর্যন্ত এবং খাদ্য ব্যবসার অন্যান্য তথ্য বা প্রমাণক পাঁচ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করবেন।

প্রবিধানমালায় আরও বলা হয়েছে, খাদ্য ব্যবসায়ীকে নিশ্চিত করতে হবে যে, খাদ্য ব্যবসায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং আইন ও বিধি-বিধান ও নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে থাকেন। খাদ্য ব্যবসায়ীকে তার কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে প্রশিক্ষণের হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে।

খাদ্য ব্যবসায়ীকে নিশ্চিত করতে হবে, খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত ও স্থানান্তর বা পরিবহনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ রয়েছে এবং যে কাজে তারা নিয়োজিত সেই কাজে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ সম্পর্কিত জ্ঞান ও দক্ষতার প্রতিফলন ঘটিয়ে থাকেন।

jagonews24

ভেজাল ও মানহীন পণ্য বিক্রির কারণে সম্প্রতি রাজধানীর চকবাজারের সামি স্টোরকে জরিমানা করা হয়

খাদ্য ব্যবসায়ীকে খাদ্যের বিশেষ সংরক্ষণ ব্যবস্থা (খাদ্য হিমায়িত, শীতলীকৃত, বায়ুনিরোধকৃত, নিয়ন্ত্রিত বা পরিবর্তিত গ্যাসীয় ইত্যাদি কারিগরি বা প্রযুক্তিগত পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে সংরক্ষণ) নিশ্চিত করতে হবে এবং এই বিশেষ সংরক্ষিত খাদ্য সরবরাহ বা বিতরণ ও বিক্রির ক্ষেত্রে একই প্রকারের বা সমজাতীয় কারিগরি বা প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা বজায় রাখতে হবে।

যদি কোনো খাদ্য ব্যবসায়ী তার খাদ্য ব্যবস্থাপনায় বা খাদ্য ব্যবসায়ে পদ্ধতিগত বা প্রকৃতিগত বা প্রযুক্তিগত কোনো সংস্কার বা পরিবর্তন সাধন করেন বা করার উদ্যোগ নেন, তাহলে এই পরিবর্তনের বিষয়টি পরিদর্শনের জন্য কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।

খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনকালে পরিদর্শক বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে যদি প্রতীয়মান হয় যে, খাদ্য ব্যবসায়ী বা তার কোনো প্রতিনিধি, খাদ্যকর্মী বা কর্মচারী এই প্রবিধানমালার প্রযোজ্য শর্ত পালন করছেন না, তাহলে ওই খাদ্য ব্যবসায়ীকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শর্ত পালনের জন্য নোটিশ দেবেন।

এরপরও শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে খাদ্য ব্যবসায়ীকে সতর্ক করে নোটিশ দেবেন। এরপরও শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে তা নিরাপদ খাদ্যবিরোধী কাজ বলে গণ্য হবে। কোনো খাদ্য ব্যবসায়ী নোটিশে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করণীয় পদক্ষেপ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে পরিদর্শক বা কর্তৃপক্ষ তার খাদ্য ব্যবসা পরিচালনার লাইসেন্স বা নিবন্ধন সনদ বাতিল করার জন্য সংশ্লিষ্ট নিবন্ধক বা লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করবেন। একই সঙ্গে বিষয়টি তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানাবেন বলে প্রবিধানমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, ভোক্তাকে জানানোর উদ্দেশ্যে পরিদর্শকের দেয়া সব নোটিশ খাদ্যপণ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে প্রদর্শন করতে হবে।