স্টাফ রিপোর্টারঃ শেরপুরের নখলা থানার গজারিয়া গ্রাম থেকে আট বছর আগে রাজধানীর মহাখালী সাততলা বস্তিতে আসেন খোকা মিয়া (৭০)। পরিবার-পরিজন নিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে-পরে ভালো থাকার আশায় এসেছিলেন তিনি।
সোমবার (২৩ নভেম্বর) দিনগত রাত পৌনে ১২টার দিকে অগ্নিকাণ্ডে আট বছরের জমানো সাড়ে আট লাখ টাকা হারানোর শোকে পাথর রিকশাচালক খোকা।
বুধবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে মহাখালী এলাকার সাততলা বস্তির বাসিন্দা খোকা মিয়া বলেন, ‘গ্রামের বাড়িতে মানুষের জমি বর্গা দিতাম ও মাঝে মধ্যে রিকশা চালাইতাম।
ঢাকায় এসে গুলশান-নিকেতন এলাকায় রিকশা চালাই। এক পোলা, তিন মাইয়া ও পরিবার নিয়া এই বস্তির দুই রুমে থাকতাম।
আমার তিন মাইয়া গার্মেন্টসে চাকরি করে। ছেলেটা পড়ালেখা করতো। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায়, সেও এখন কাজে যোগ দিছে। ছেলেটা নাখালপাড়া তারকাটার কারখানায় কাজ করে। ’
অগ্নিকাণ্ডের সময় কোথায় ছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যখন আগুন লাগে আমি চায়ের দোকানে ছিলাম। আমার পোলা-মাইয়া ঘরে ঘুমাইয়া ছিল। আগুন-আগুন চিৎকার শুনে তারা ঘর থাইকা বের হইয়া আসে। ’
ঘরে কী কী ছিল জানতে চাইলে খোকা বলেন, ‘জিনিসপত্রের কথা বলে কি লাভ আছে? তা তো আর ফিরা আইবো না বা কেউ ফিরায়াও দিবো না। দুই লাগেজ ভরা আমার মাইয়াগো কাপড়-চোপড় ছিল। এছাড়া, ঘরে টিভি, ফ্যান, র্যাক, আলনা আর কিছু হাড়ি-পাতিল ছিল। ’
নগদ টাকা আগুনে পোড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টাকার কথা বইলা আর কী হইবো? টাকা তো আর ফেরত আইবো না। আর আমারে কেউ টাকা ফিরায়াও দিবো না। আমি মূর্খ মানুষ।
আমিতো লেখাপড়া জানি না, ভাবছিলাম ব্যাংকে টাকা রাখলে কেউ যদি আমার টাকা প্রতারণা কইরা নিয়া যায়! এই ভয়ে আমার ঘরে লাগেজের কাপড়-চোপড়ের মধ্যে নগদ সাড়ে আট লাখ টাকা রাখছিলাম।
গত আট বছরে আমার তিন মাইয়া গার্মেন্টসে কাজ কইরা আর আমি রিকশা চালাইয়া একটু একটু কইরা এত টাকা জমাইছিলাম। মঙ্গলবার সকালে পোড়া ঘর থাইকা দুই বান্ডিল পোড়া টাকা পাইছি।
আর সব পুইড়া ছাই হইয়া গেছে। টাকা দিয়া গ্রামের বাড়িতে তিন কাঠা জমি কিনতে চাইছিলাম। তা আর কেনা হইলো না। টাকার দুঃখে মইরা গেলে হইবো? আমার পরিবারের দেখভাল করবো কে? বাঁইচা থাকলে আবার টাকা কামাইতে পারবো। ’