দেড় যুগের আক্ষেপ ঘুচল বাংলাদেশের। অবশেষে কোনো ট্রফি উঠল হাতে। মুজিববর্ষ ফিফা আন্তর্জাতিক ফুটবল সিরিজের সোনালি ট্রফি হাতে উৎসব করলেন জামাল ভূঁইয়ারা।
গতকাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে গোল শূন্য ড্র করেছে বাংলাদেশ-নেপাল। আগের ম্যাচে ২-০ গোলের জয়ে পাওয়ায় ট্রফি উঠল জামালদের হাতে। ২০০৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকেই ফুটবলে ট্রফিশূন্য বাংলাদেশ। ২০১০ সালে এসএ গেমসে সোনা জিতলেও তা ছিল অনূর্ধ্ব-২৩ দল।
ডাগ-আউটে প্রধান কোচ জেমি ডে নেই। তিনি করোনায় আক্রান্ত। তবে সহকারী কোচ স্টুয়ার্ট ওয়াটকিস ডাগ-আউটে সদা তৎপর। পুষিয়ে দিচ্ছেন জেমি ডের অভাব। গতকাল মুজিববর্ষ ফিফা আন্তর্জাতিক ফুটবল সিরিজের শেষ ম্যাচে জেমি ডের অনুপস্থিতিও দারুণ ফুটবল উপহার দিলেন জামাল ভূঁইয়ারা।
জেমি ডে কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের ফুটবলারদের গড়ে তুলছেন। প্রথম প্রথম পরিবর্তনটা তেমন চোখে পড়েনি। তবে ধীরে ধীরে দিগন্ত রেখা পরিষ্কার হতে লাগল। বাংলাদেশের খেলায় এলো পরিবর্তন। ফিটনেস বদলে গেল। হীনমন্যতা কাটিয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের উপরও হামলে পড়ার আত্মবিশ্বাস জুুগিয়ে নিল।
নেপালের বিপক্ষে দুটি ম্যাচে দারুণ ফুটবল দেখে মরুভূমির বুকে হঠাৎ বৃষ্টি বলে মনে করতে পারেন অনেকে। কিন্তু গত বছর কাতারের বিপক্ষে দেশের মাটিতে দৃষ্টিনন্দন ফুটবল উপহার দিয়েছেন জামালরা।
ভারতের মাটিতে (কলকাতার সল্ট লেকে) দারুণ ফুটবল খেলে প্রতিপক্ষের শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন তারা। ফুটবলের দূর আকাশে এখন নতুন দিগন্ত দেখা যাচ্ছে। জেগে উঠছে নতুন আশা। নতুন স্বপ্ন। হয়তো এ কারণেই দেশের ফুটবলের প্রতি বিরাগ দর্শকরা এখন মাঠে আসছেন। সিনেমার পরিবর্তে পরিবার নিয়ে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বিনোদন খুঁজছেন।
আগের ম্যাচের দারুণ জয়ে উজ্জীবিত বাংলাদেশ। পরাজিত নেপাল ছিল বেশ সতর্ক। জয় না হোক, অন্তত পরাজয়ের পুনরাবৃত্তি চায়নি সফরকারীরা। ডিফেন্স লাইনে শক্তি বাড়িয়েছে তারা। বাংলাদেশের টানা আক্রমণ রুখে দিয়েছে।
কিন্তু তারপরও ফুটবলের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হননি হাজার হাজার দর্শক (অন্তত ১০ হাজার!)। ম্যাচে তখন ৬৮ মিনিটের খেলা চলছে। দুর্দান্ত এক আক্রমণ করে বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা। নাবিব নেওয়াজ জীবন বাম প্রান্ত দিয়ে দুরন্ত গতিতে ছুটে যান ডি বক্সে। কিন্তু নেপালি ডিফেন্ডারের বাধায় যুতসই শট নিতে পারছিলেন না। পাস দেন বিপলুকে। কিন্তু বিপলুর মাটি ঘেঁষা শট নেপালের ডিফেন্স লাইন ভাঙতে পারেনি।
এরপরও বেশ কয়েকটা দারুণ সুযোগ হারায় লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। ম্যাচের শেষদিকে নেপালের দুটি আক্রমণ বেশ ঘাবড়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের দর্শকদের। তবে শেষ পর্যন্ত বিপদ কেটে যায়। ড্র নিয়েই মাঠ ছাড়ে দুই দল। তবে সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয়ী জামালবাহিনীর হাতেই উঠে সোনালি ট্রফি।
নেপালের বিপক্ষে সিরিজ জয়ে কাতারের জন্য প্রস্তুতি নিলেন জামালরা। তবে এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন কাতার প্রস্তুতি নিয়েছে কোস্টারিকা ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দলের সঙ্গে খেলে। আগামী ৪ ডিসেম্বর বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে কাতারের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। সংক্ষিপ্ত এই সময়ের মধ্যেও এবার একটা শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে চান জামালরা।