ঢাকা ০৫:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ :
Logo নওগাঁয় ফজলুর রহমান হত্যা মামলায় ৫ জনকে যাবজ্জীবন Logo জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব বাতিলে ট্রাম্পের আদেশ আটকে দিলেন আদালত Logo বগুড়ায় ৫০ টাকা অফারে টি-শার্ট কিনতে হাজারো মানুষের ঢল, নিয়ন্ত্রণ নিতে সেনাবাহিনী Logo শেখ হাসিনা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালালে ভারতকে দায় নিতে হবে: তথ্য উপদেষ্টা Logo নতুন দুই বিভাগ ও দেশকে চারটি প্রদেশে ভাগ করার প্রস্তাব সংস্কার কমিশনের Logo নওগাঁ সীমান্ত থেকে ১ যুবককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ Logo গাজীপুরে পিকআপভ্যান খাদে পড়ে তিন জন নিহত Logo নেতানিয়াহুর পাশে দাঁড়িয়ে গাজা দখলের ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প Logo মাকে মারধর করছিল ছেলে, শাসন করতে গিয়ে মামা খুন Logo পুলিশের গাড়ি থেকে ছিনিয়ে নেওয়া সেই আ. লীগ নেতা গ্রেফতার

নওগাঁর, রাণীনগরে ৩০ বছর ধরে শিকলবন্দী নিপেন

নিপেন চন্দ্র পাল

স্টাফ রিপোর্টার,নওগাঁ: নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় নিপেন চন্দ্র পাল নামে এক মানসিক রোগীকে প্রায় ৩০ বছর যাবৎ ঘরে বন্দী করে রেখেছে তার পরিবার। এক সময় চিকিৎসা করতে পারলেও বর্তমানে অর্থাভাবে নিপেনকে ঘরের মধ্যে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। 

কোনো সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ার কারণে গরিব এই পরিবার বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। নিপেনের উন্নতমানের চিকিৎসার জন্য সরকারের সহায়তা চেয়েছে তার পরিবার।

জানা যায়, নিপেনের বয়স ৪২ বছর। উপজেলার কালীগ্রাম ইউনিয়নের ভান্ডারা গ্রামের মৃত নরেশ চন্দ্র পালের দ্বিতীয় সন্তান তিনি। ছোটবেলা থেকেই নিপেন ছিলেন খুবই মেধাবী। স্কুলে পড়ার সময় ১২ বছর বয়সের পর থেকে হঠাৎ করেই নিপেনের মাঝে অস্বাভাবিক আচার-আচরণ লক্ষ করে তার পরিবার।

এরপর থেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে নিপেন। গরিব পরিবার হওয়ার পরও অনেকবার নিপেনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু বর্তমানে আর্থিক সামর্থ না থাকায় আর চিকিৎসা সেবা নিপেনের ভাগ্যে জুটছে না।

নিপেনকে বাইরে ছেড়ে দিলেই মানুষকে মারপিট, গালিগালাজ করা, ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়াসহ নানা ধরনের অত্যাচার করেন। একারণে গত ৫ বছর যাবৎ নিপেনের পায়ে লোহার শিকল দিয়ে একটি মাটির অন্ধকার ঘরের মধ্যে আটকে রেখেছে তার পরিবার।

বিয়ে দিলে হয়তো নিপেন ভালো হতে পারে ধারণা থেকে নিপেনকে বিয়ে দেয় তার পরিবার। বর্তমানে নিপেনের ঘরে ৭ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বয়স্ক মা সম্প্রতি বয়স্ক ভাতা পাওয়া শুরু করলেও নিপেনের পরিবার সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

তাই নিপেনের পরিবারের দাবি সরকারিভাবে যদি নিপেনকে উন্নত মানের চিকিৎসা প্রদান করা হয়, তাহলে হয়তো নিপেন সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।

নিপেনের বড় ভাই নিতাই চন্দ্র পাল বলেন, এক সময় চিকিৎসা করতে পারলেও বর্তমানে অর্থের অভাবে আর চিকিৎসা করাতে পারছি না। দিন দিন নিপেনের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। অত্যাচার করে দেখে নিপেনকে তাই বাধ্য হয়েই শিকল দিয়ে ঘরের মধ্যে আটকে রেখেছি।

নিপেনের স্ত্রী শিখা রানী পাল বলেন, আগে পাগলামি কম থাকলেও দিন দিন তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থের অভাবে আমার স্বামীর চিকিৎসা করাতে পারছি না। সরকারিভাবে সহায়তা পেলে উন্নত মানের চিকিৎসা করানো যেতে পারে।

হয়তো বা উন্নত মানের চিকিৎসা পেলে আমার স্বামী স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া এক মেয়েকে নিয়ে বর্তমানে আমি মানবেতর জীবনযাপন করছি। সবকিছুর জন্য মানুষের কাছে হাত বাড়াতে হয়। তাই আমরা সরকারের সার্বিক সহযোগিতা চাই।

কালীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি নিপেনের বিষয়টি শুনেছি। কিন্তু কেউ তার সহযোগিতার জন্য লিখিতভাবে জানায়নি। তবুও আমি তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করব।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, দ্রুত খোঁজ খবর নিয়ে নিপেনের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও তার পরিবারকে সহায়তা করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

সরকারের পক্ষ থেকে নিপেনের জন্য উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানের এবং নিপেনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছে গ্রামবাসীরা।

ট্যাগস

নওগাঁয় ফজলুর রহমান হত্যা মামলায় ৫ জনকে যাবজ্জীবন

নওগাঁর, রাণীনগরে ৩০ বছর ধরে শিকলবন্দী নিপেন

আপডেট সময় ০৭:২৮:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার,নওগাঁ: নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় নিপেন চন্দ্র পাল নামে এক মানসিক রোগীকে প্রায় ৩০ বছর যাবৎ ঘরে বন্দী করে রেখেছে তার পরিবার। এক সময় চিকিৎসা করতে পারলেও বর্তমানে অর্থাভাবে নিপেনকে ঘরের মধ্যে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। 

কোনো সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ার কারণে গরিব এই পরিবার বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। নিপেনের উন্নতমানের চিকিৎসার জন্য সরকারের সহায়তা চেয়েছে তার পরিবার।

জানা যায়, নিপেনের বয়স ৪২ বছর। উপজেলার কালীগ্রাম ইউনিয়নের ভান্ডারা গ্রামের মৃত নরেশ চন্দ্র পালের দ্বিতীয় সন্তান তিনি। ছোটবেলা থেকেই নিপেন ছিলেন খুবই মেধাবী। স্কুলে পড়ার সময় ১২ বছর বয়সের পর থেকে হঠাৎ করেই নিপেনের মাঝে অস্বাভাবিক আচার-আচরণ লক্ষ করে তার পরিবার।

এরপর থেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে নিপেন। গরিব পরিবার হওয়ার পরও অনেকবার নিপেনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু বর্তমানে আর্থিক সামর্থ না থাকায় আর চিকিৎসা সেবা নিপেনের ভাগ্যে জুটছে না।

নিপেনকে বাইরে ছেড়ে দিলেই মানুষকে মারপিট, গালিগালাজ করা, ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়াসহ নানা ধরনের অত্যাচার করেন। একারণে গত ৫ বছর যাবৎ নিপেনের পায়ে লোহার শিকল দিয়ে একটি মাটির অন্ধকার ঘরের মধ্যে আটকে রেখেছে তার পরিবার।

বিয়ে দিলে হয়তো নিপেন ভালো হতে পারে ধারণা থেকে নিপেনকে বিয়ে দেয় তার পরিবার। বর্তমানে নিপেনের ঘরে ৭ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বয়স্ক মা সম্প্রতি বয়স্ক ভাতা পাওয়া শুরু করলেও নিপেনের পরিবার সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

তাই নিপেনের পরিবারের দাবি সরকারিভাবে যদি নিপেনকে উন্নত মানের চিকিৎসা প্রদান করা হয়, তাহলে হয়তো নিপেন সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।

নিপেনের বড় ভাই নিতাই চন্দ্র পাল বলেন, এক সময় চিকিৎসা করতে পারলেও বর্তমানে অর্থের অভাবে আর চিকিৎসা করাতে পারছি না। দিন দিন নিপেনের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। অত্যাচার করে দেখে নিপেনকে তাই বাধ্য হয়েই শিকল দিয়ে ঘরের মধ্যে আটকে রেখেছি।

নিপেনের স্ত্রী শিখা রানী পাল বলেন, আগে পাগলামি কম থাকলেও দিন দিন তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থের অভাবে আমার স্বামীর চিকিৎসা করাতে পারছি না। সরকারিভাবে সহায়তা পেলে উন্নত মানের চিকিৎসা করানো যেতে পারে।

হয়তো বা উন্নত মানের চিকিৎসা পেলে আমার স্বামী স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া এক মেয়েকে নিয়ে বর্তমানে আমি মানবেতর জীবনযাপন করছি। সবকিছুর জন্য মানুষের কাছে হাত বাড়াতে হয়। তাই আমরা সরকারের সার্বিক সহযোগিতা চাই।

কালীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি নিপেনের বিষয়টি শুনেছি। কিন্তু কেউ তার সহযোগিতার জন্য লিখিতভাবে জানায়নি। তবুও আমি তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করব।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, দ্রুত খোঁজ খবর নিয়ে নিপেনের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও তার পরিবারকে সহায়তা করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

সরকারের পক্ষ থেকে নিপেনের জন্য উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানের এবং নিপেনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছে গ্রামবাসীরা।