স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর কড়াইল বস্তির চাঞ্চল্যকর শিশু মিম (৪) হত্যায় জড়িত একমাত্র আসামি ও নিহতের বড় ভাই আল-আমিন সজিবকে (১৪) গ্রেফতার করেছে র্যাব। বুধবার রাত ১০ টার দিকে কড়াইল বস্তি থেকে সজিবকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সজিব হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে। সে বলছে, বাবা-মায়ের ভালোবাসায় ভাগ বসানোই ছিল তার বোন মিমের অপরাধ।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল জানান, ২৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টায় কড়াইল বস্তির জামাইবাজার এলাকার মো. লিটন মিয়ার (৩৯) মেয়ে মিমকে গলা টিপে হত্যা করা হয়।
লিটন মিয়া জানান, তিনি বনানী এলকায় পেয়ারা ও আমড়া বিক্রি করেন এবং তার স্ত্রী রুপসানা গৃহকর্মীর কাজ করেন। তাদের দুই সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে সজিব এবং ছোট মেয়ে মিম।
ঘটনার দিনের বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিনের মতো সেদিন সকালে তিনি ও তার স্ত্রী কাজের জন্য বাইরে বের হন। পরে বাসায় ফিরে মেয়েকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন তারা।
কোথাও মেয়েকে না পেয়ে স্থানীয় আল-মদিনা মসজিদের মাইকে মিমকে খুঁজে না পাওয়ার কথা ঘোষণা দেয়া হয়। সকাল ১০টার দিকে বাসা থেকে কিছুটা দূরে একটি গোসলখানায় মিমের মরদেহ উদ্ধার হয়।
হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে র্যাব ১০ ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেফতার করে মিমেরই বড় ভাই সজীবকে। সজীব স্থানীয় আইডিয়াল স্কুলের ৫ম শ্রেণিতে পড়ে।
তার ভাষ্যমতে, ছোট বোন মিম জন্মের পর থেকে তার প্রতি বাবা-মায়ের ভালোবাসা কমতে থাকে। যত দিন যায় বাবা-মা তার প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েন এবং সব ভালোবাসা মিমের দিকে চলে যায়।
তার ওপর কারণে-অকারণে চলে বাবার নির্দয় প্রহার। যার দরুণ ছোট বোনের প্রতি তার ক্ষোভ জন্মাতে থাকে এবং সব কিছুর জন্য তাকে দায়ী মনে করে সজিব।
সজীবের আরও অভিযোগ, প্রতিদিন বাসায় ফিরে বাবা মিমকে কাছে ডেকে নিতো এবং আদর করতো। বাইরে থেকে কিছু আনলে তাকে খেতে দিতো। বাবা-মা দুজনই তার ছোট বোনের সব আবদার পূরণ করলেও তার বেলায় বিপরীত ঘটনা ঘটতো।
তাই সে ছোট বোন মিমকে বাবা-মায়ের চোখের আড়াল করার জন্য বিভিন্ন ফন্দি আটতে থাকে যাতে করে সে আগের মতো আদর, ভালোবাসা পেতে পারে। এর জন্য সে সুযোগের অপেক্ষা করতে থাকে।
বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে পার্শ্ববর্তী মাদরাসা থেকে পড়া শেষে বাসায় ফেরার সময় সে তার বাবাকে ঘরের বাইরে যেতে দেখে এবং ঘরে ফিরে ছোটবোন মিমকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পায়।
ঘরে বাবা-মা কেউ না থাকায় মোক্ষম সুযোগ মনে করে সে ঘুমন্ত ছোট বোনকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং বিছানার নিচে লুকিয়ে ফেলে।
পরে তার বাবা বাসায় ফিরে মেয়েকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে এবং বাসার বাইরে খুঁজতে যায়। এই সুযোগে সজিব মিমের লাশ পাশের গোসলখানায় রেখে আসে।