স্টাফ রিপোর্টার নওগাঁঃ নওগাঁর পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে বন্যায় ভেঙ্গে যাওয়া মান্দার আত্রাই নদীর বেড়িবাঁধের পুণরাকৃতির কাজ শুরু না করেই কাজ করা হয়েছে বলে ভুয়া বিল দাখিল করে ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা উত্তোলনের অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগ করা হয়েছে যে, গত অর্থবছরে উপজেলার জোঁকাহাট চকরামপুরে নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পওর বিভাগের পোল্ডার-সি প্রকল্পের আওতায় মান্দা উপজেলার জোকাহাট চকরামপুরে আত্রাই নদীর ডান তীরে ৫ কিলোমিটার থেকে ১৮শ’ মিটার বাঁধ পুণরাকৃতি করণের জন্য ১শ’ কোটি ৭ লাখ টাকার একটি বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
প্রাথমিক পর্যায়ে এই প্রকল্পে ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা আংশিক বরাদ্দ আসে। সময়মত ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে।
ঠিকাদার প্রকল্পের কাজ শুরু না করেই আংশিক কাজ করেছেন বলে ভুয়া বিল দাখিল করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশে অবৈধভাবে ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা ছাড় করে দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাগণ।
সরেজমিনে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালে মান্দা উপজেলার বিষ্ণুপর ইউনিয়নের জোঁকাহাট চকরামপুর নামক স্থানে আত্রাই নদীর ডান তীর সংলগ্ন বেড়িবাঁধের কিছু অংশ ভেঙ্গে যায়।
ভেঙ্গে যাওয়া অংশ দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় এবার ভাঙ্গা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হয় শতাধিক গ্রাম। ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল।
স্থানীয়রা জানান, গত ৩ বছরে এখানে এক কোদাল মাটি কিংবা এক টুকরা সিমেন্ট বালি বা বালির বস্তাও ফেলা হয়নি।
চকরামপুর গ্রামর জাফর প্রামাণিক, সাইফুল ইসলাম, মহসীন আলীসহ অন্যরা বলেন, আমাদের দেখা মতে বাঁধের পুণরাকৃতি করণ বিন্দুমাত্র করা হয়নি। আমরা কোনো কাজ করতেই দেখিনি।
বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ মেরামত করার মত কোন বরাদ্দ আমাদের কাছে আসেনা বলে চেয়ে থাকতে হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের দিকে কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দিকে।
কিন্তু কোন লাভ হয় না। বাঁধের ভাঙ্গা অংশ বছরের পর বছর ভাঙ্গাই থাকে। নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের নতুন নতুন অংশ ভাঙ্গছে আর প্রতিবছরই বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে হাজারো গ্রাম।
তিনি বলেন, মান্দা-আত্রাই বেড়িবাঁধের চকরামপুর নামক ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বাঁধের পুণরাকৃতি করণের বিন্দুমাত্র কোন কাজ করা হয়নি। ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধের মেরামতের কোন কাজ না করায় এবারের বন্যায় প্রধান বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে আমার ইউনিয়নের সবগুলো গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
ঠিকাদার আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, যে সময় আমাকে কাজটি দেওয়া হয় তখন নদীতে প্রতিনিয়তই পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কাজ পুরোপুরি শুরু করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
তবে ঝুঁকিপূর্ণ কিছু কিছু স্থানে কাজ করেছিলাম। যার কিছু বিল হিসেবে অফিস আমাকে ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা দিয়েছে। কিন্তু আমি কাজ করেছি কয়েক লাখ টাকার। কাজ না করে টাকা উত্তোলনের অভিযোগ সম্পন্ন মিথ্যে বলেও তিনি দাবী করেন।
প্রকল্পের দায়িত্বরত উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন অনিয়মের বিষয় অস্বীকার করে বলেন, ঠিকাদারি যে কাজের বিল দেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফউজ্জামান খান বলেন, ঠিকাদারের ১০ লাখ টাকা জামানত হিসেবে রয়েছে। তাই কাজ না করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার কোন সুযোগ নেই।
প্রকল্পের কাজ শুরুর সময় নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি বলেও তিনি জানান।
তিনি বলেন, কাজটি ধরে রাখার নিমিত্তে আংশিক কাজ সম্পন্ন করে ঠিকাদারকে কিছু অর্থ প্রদান করা হয়েছে। আমি আশা রাখি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের সকল কাজ সঠিক ভাবে সম্পন্ন করা হবে।