ঢাকা ০৫:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্যায় নওগাঁর কৃষির ক্ষতি শত কোটি টাকা

নওগাঁর মান্দা উপজেলার জোত বাজারে এখনো কোমর পানিতে বসত বাড়ী

স্টাফ রিপোর্টার  নওগাঁ: চলতি বন্যায় নওগাঁয় প্রায় শত কোটি টাকা ক্ষতি নিরুপণ করা হয়েছে । টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নওগাঁর ছয় উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। এতে করে পুকুরের মাছ ভেসে গেছে ও ফসল নিমজ্জিত হয়ে পচে নষ্ট হয়েছে। ফলে মাছচাষি ও কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

প্রতিবছর বাঁধ ভেঙে ব্যাপক্ষ ক্ষতি সাধিত হয়। তবে ভেঙে যাওয়া নদীর বাঁধগুলো ভালোভাবে মেরামত না করার কারণে প্রতিবছরই হাজার হাজার মানুষ বন্যার ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে আসছেন। তাই বাঁধগুলো স্থায়ীভাবে মেরামত ও সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নওগাঁর ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ১৫ জুলাই মান্দা উপজেলায় আত্রাই নদীর উভয় তীরের নুরুল্লাবাদ উত্তরপাড়া, জোকাহাট, পাঁজরভাঙা, চকরামপুর ও কয়লাবাড়ি নামক স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে মান্দা-আত্রাই আঞ্চলিক সড়কের যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

পরদিন (১৬ জুলাই) সকালে আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ-বান্দাইখাড়া সড়কের আহসানগঞ্জ স্লুইস গেটের দক্ষিণে জাত আমরুল জিয়ানী পাড়ার সামনে সড়ক ভেঙে যায়। এতে নওগাঁ সদর, রানীনগর, আত্রাই, মান্দা, সাপাহার ও পোরশা উপজেলার অধিকাংশ এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। মাছের ঘের ভেসে যায় ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

নওগাঁর আত্রাই নদীর আহসান গঞ্জ বাঁধ ভেংগে তলিয়েছে ফসল

 

আত্রাই উপজেলার জাত আমরুল   গ্রামের মোবারক হোসেন  , আমার চার বিঘা জমির আউশ ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া আমন ধানের জন্য তৈরি করা ১০ কাঠা জমির বীজতলাও তলিয়ে গেছে। নতুন করে আবার কৃষি অফিসের পরামর্শে উঁচু জমিতে বীজতলা তৈরি করতে হচ্ছে। এতে করে আমন ধান চাষে খরচ অনেকটাই বেশি পড়বে। প্রতিবছর আমরা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকি। যদি নদীখননসহ বাঁধগুলো শক্তভাবে মেরামত করা হয় তাহলে আমরা এ বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাবো।

পার্শবর্তী দমদমা  গ্রামের মৎস্যচাষি চয়েন উদ্দিন বলেন, তিন বছরের জন্য তিনটি পুকুর তিন লাখ ৫৫ হাজার টাকায় ইজারা নিয়েছি। সেখানে রুই, কাতলা, মৃগেলসহ দেশীয় মাছ চাষ করছি। একই গ্রামের মনোয়ারা,সাজেদুর রহমান বলেন  গত ১৫ জুলাই আত্রাই নদীর মান্দা-আত্রাই সড়কের চকরামপুর ও কয়লাবাড়ি নামক স্থানে ভেঙে যায়। ভেঙে যাওয়ার প্রায় ২০-২৫ মিনিটের মধ্যে তিনটি পুকুর প্লাবিত হয়। এরমধ্যে একটি পুকুর থেকে পাঁচ মণের মতো মাছ ধরা গেছে। বাকি মাছ বানের পানিতে ভেসে গেছে। হঠাৎ করে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় কোনো প্রস্তুতি ছিল না। বন্যায় প্রায় তিন লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। মান্দা উপজেলার নুরুল্লাবাদ গ্রামের চাষী জমসেদ আলী জানান

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ বলেন, জেলায় চার হাজার ১৪৪ হেক্টর জমির ধান ও শাকসবজি নিমজ্জিত ছিল। পানি নেমে যাওয়ায় তিন হাজার ৯৭৬ হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়। যেখানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ৫১ কোটি টাকা। তবে বৃষ্টি অব্যহৃত থাকলে পানি বাড়ার সঙ্গে ফসলের আরও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

আত্রাই দমদমা গ্রামের বিদ্যালয় মাঠ পানিতে এভাবেই তলিয়ে আছে গত ৭ দিন ধরে

নওগাঁ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ বলেন, মঙ্গলবার (২১ জুলাই) বিকেল পর্যন্ত জেলায় ৩৭২টি পুকুর প্লাবিত হয়েছে। যার আয়তন প্রায় ৩০০ হেক্টরের মতো। এছাড়া ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ কোটি টাকা। পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে নতুন করে প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

 

ট্যাগস

বন্যায় নওগাঁর কৃষির ক্ষতি শত কোটি টাকা

আপডেট সময় ১১:০০:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার  নওগাঁ: চলতি বন্যায় নওগাঁয় প্রায় শত কোটি টাকা ক্ষতি নিরুপণ করা হয়েছে । টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নওগাঁর ছয় উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। এতে করে পুকুরের মাছ ভেসে গেছে ও ফসল নিমজ্জিত হয়ে পচে নষ্ট হয়েছে। ফলে মাছচাষি ও কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

প্রতিবছর বাঁধ ভেঙে ব্যাপক্ষ ক্ষতি সাধিত হয়। তবে ভেঙে যাওয়া নদীর বাঁধগুলো ভালোভাবে মেরামত না করার কারণে প্রতিবছরই হাজার হাজার মানুষ বন্যার ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে আসছেন। তাই বাঁধগুলো স্থায়ীভাবে মেরামত ও সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নওগাঁর ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ১৫ জুলাই মান্দা উপজেলায় আত্রাই নদীর উভয় তীরের নুরুল্লাবাদ উত্তরপাড়া, জোকাহাট, পাঁজরভাঙা, চকরামপুর ও কয়লাবাড়ি নামক স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে মান্দা-আত্রাই আঞ্চলিক সড়কের যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

পরদিন (১৬ জুলাই) সকালে আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ-বান্দাইখাড়া সড়কের আহসানগঞ্জ স্লুইস গেটের দক্ষিণে জাত আমরুল জিয়ানী পাড়ার সামনে সড়ক ভেঙে যায়। এতে নওগাঁ সদর, রানীনগর, আত্রাই, মান্দা, সাপাহার ও পোরশা উপজেলার অধিকাংশ এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। মাছের ঘের ভেসে যায় ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

নওগাঁর আত্রাই নদীর আহসান গঞ্জ বাঁধ ভেংগে তলিয়েছে ফসল

 

আত্রাই উপজেলার জাত আমরুল   গ্রামের মোবারক হোসেন  , আমার চার বিঘা জমির আউশ ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া আমন ধানের জন্য তৈরি করা ১০ কাঠা জমির বীজতলাও তলিয়ে গেছে। নতুন করে আবার কৃষি অফিসের পরামর্শে উঁচু জমিতে বীজতলা তৈরি করতে হচ্ছে। এতে করে আমন ধান চাষে খরচ অনেকটাই বেশি পড়বে। প্রতিবছর আমরা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকি। যদি নদীখননসহ বাঁধগুলো শক্তভাবে মেরামত করা হয় তাহলে আমরা এ বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাবো।

পার্শবর্তী দমদমা  গ্রামের মৎস্যচাষি চয়েন উদ্দিন বলেন, তিন বছরের জন্য তিনটি পুকুর তিন লাখ ৫৫ হাজার টাকায় ইজারা নিয়েছি। সেখানে রুই, কাতলা, মৃগেলসহ দেশীয় মাছ চাষ করছি। একই গ্রামের মনোয়ারা,সাজেদুর রহমান বলেন  গত ১৫ জুলাই আত্রাই নদীর মান্দা-আত্রাই সড়কের চকরামপুর ও কয়লাবাড়ি নামক স্থানে ভেঙে যায়। ভেঙে যাওয়ার প্রায় ২০-২৫ মিনিটের মধ্যে তিনটি পুকুর প্লাবিত হয়। এরমধ্যে একটি পুকুর থেকে পাঁচ মণের মতো মাছ ধরা গেছে। বাকি মাছ বানের পানিতে ভেসে গেছে। হঠাৎ করে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় কোনো প্রস্তুতি ছিল না। বন্যায় প্রায় তিন লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। মান্দা উপজেলার নুরুল্লাবাদ গ্রামের চাষী জমসেদ আলী জানান

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ বলেন, জেলায় চার হাজার ১৪৪ হেক্টর জমির ধান ও শাকসবজি নিমজ্জিত ছিল। পানি নেমে যাওয়ায় তিন হাজার ৯৭৬ হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়। যেখানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ৫১ কোটি টাকা। তবে বৃষ্টি অব্যহৃত থাকলে পানি বাড়ার সঙ্গে ফসলের আরও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

আত্রাই দমদমা গ্রামের বিদ্যালয় মাঠ পানিতে এভাবেই তলিয়ে আছে গত ৭ দিন ধরে

নওগাঁ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ বলেন, মঙ্গলবার (২১ জুলাই) বিকেল পর্যন্ত জেলায় ৩৭২টি পুকুর প্লাবিত হয়েছে। যার আয়তন প্রায় ৩০০ হেক্টরের মতো। এছাড়া ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ কোটি টাকা। পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে নতুন করে প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।