টাঙ্গাইল (মির্জাপুর) প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে ভাসছে কৃষকের স্বপ্নের ধান। এ উপজেলায় এবার ইরি-বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলার সর্বত্র পাকা ধানের সোনালী শীষে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। ঠিক ধান কাটার আগ মুহূর্তে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের চারটি গ্রামের ৭৫ হেক্টর জমির পাকা ও আধাপাকা বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।
নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ, যুবকরা পানিতে দাঁড়িয়ে ধান কেটে নৌকাযোগে পারে আনার চেষ্টা করছেন।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে কয়েকদিনের বৃষ্টির পর জোয়ারের পানি বংশাই ও কয়েকটি শাখা নদী দিয়ে ঢুকে পড়েছে বারকাটি বিলে।এতে ফতেপুর ইউনিয়নের বারকাটি বিল এলাকার প্রায় ২০ হাজার শতাংশ (৭৫ হেক্টর) জমির ধান ধান তলিয়ে গেছে। ধানের সাথে তলিয়ে গেছে কৃষকের সারা বছরের স্বপ্নও।
তলিয়ে যাওয়া ধান নিয়ে কৃষক পড়েছেন বিপাকে। অনেকেই আধাপাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রভাবে কৃষি শ্রমিকের চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ মির্জাপুর অফিস সূত্র জানান, মির্জাপুর উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে ৫১ লাখ ৮৪ হাজার শতাংশ (২০ হাজার ১শ হেক্টর) বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এরমধ্যে ৫১ লাখ ৪২ হাজার শতাংশ (২০ হাজার ৮১৫ হেক্টর) জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।
ফতেপুর ইউনিয়নের থলপাড়া, বৈন্যাতলী, গোবিন্দপুর ও সুতানরী গ্রামে প্রায় প্রায় ৩১ হাজার শতাংশ (১২৫হেক্টর) জমিতে বোরো আবাদ করে ওই এলাকার কৃষক। এরমধ্যে উঁচু এলাকার প্রায় ১০ হাজার শতাংশ জমির ধান কেটে ঘরে তুলেছেন কৃষক। ৫ হাজার ৫শ শতক জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। পর্যাপ্ত কৃষি শ্রমিক না থাকায় বাকি ১৫ হাজার শতাংশ জমির ধান নিয়ে চরম শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন কৃষক।
আকাশে মেঘ আর থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এরই মধ্যে জোয়ারের পানি বংশাই নদী হয়ে বারকাটি বিলে ঢুকে পাকা বোরো ধানের জমি তলিয়ে দিয়েছে। করোনার প্রভাবে কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। যাও পাওয়া যাচ্ছে তাও ৯০০ থেকে ১১শ টাকায় নিতে হচ্ছে। চড়া মজুরি দিয়েও পর্যাপ্ত শ্রমিক পাওয়া না যাওয়ায় দুশ্চিন্তাই পড়েছেন কৃষক।
শনিবার সকালে ফতেপুর ইউনিয়নের থলপাড়া, বৈন্যাতলী, গোবিন্দপুর ও সুতানরি এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, শত শত কৃষকের কষ্টে অর্জিত বোরো ফসল কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে অনেক জমির পাকা ধান তলিয়ে গেছে। আবার অনেক জমির ধান ভাসছে।
নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ ও যুবকরা পানিতে ধান কাটছেন। সেই ধান নৌকাযোগে পারে আনছেন। অথচ গত সপ্তাহেও খেতের চিত্রটা ছিল ভিন্ন। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছিল সবুজের সমারোহ। যা নিয়ে স্বপ্নে বিভোর ছিলেন কৃষকরা।
থলপাড়া গ্রামের কৃষক ইসরাইল হোসেন বলেন, প্রতি শতাংশ জমি চাষ করতে তাদের প্রায় ৩শ টাকা খরচ হয়েছে। ফলনও হয়েছিল ভালো। তার প্রায় ১শ শতাংশ জমির পাকা ধান পানিতে তলিয় গেছে। বাড়িতে থাকা সকলেই পানিতে নেমেছেন ধান কাটতে। কিন্তু এতে পুরো জমির ধান কাটা সম্ভব নয় বলে তিনি জানান,একই গ্রামের গোপাল মিয়ার ২৫০ শতাংশ, ফারুক হোসেনের ১৫০ শতাংশ, মোয়াজ্জেম হোসেনের ১শ শতাংশ, বজলুর রহমানের ৮৪ শতাংশ, বজলু মিয়ার ৫০০ শতাংশ, আরজু মিয়ার ২৫০ শতাংশ, দেলোয়ার হোসেনের ৫০০ শতাংশ, বানকাটা গ্রামের যুগেল মন্ডলের ১৫০ শতাংশ, কানই মন্ডলের ৫০ শতাংশ, গোপাল মন্ডলের ৫০ শতাংশ, অমলেশের ৫০ শতাংশ, গেন্দু মন্ডলের ৫০ শতাংশ জমির পাকা ধান পনিতে তলিয়ে গেছে বলে তারা জানান।
থলপাড়া গ্রামের গোপাল মিয়ার স্ত্রী পারভীন বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, সারা বছরের স্বপ্ন অসময়ের বৃষ্টি আর জোয়ারের পানি তলিয়ে দিলো। নিজেদের ২৫০ শতাংশ জমির ধানসহ তাদের প্রজেক্টের পুরো ধান তলিয়ে গেছে। এতে তাদের প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতি হবে বলে তিনি জানান।
একই গ্রামের গোপাল মিয়ার ২৫০ শতাংশ, ফারুক হোসেনের ১৫০ শতাংশ, মোয়াজ্জেম হোসেনের ১শ শতাংশ, বজলুর রহমানের ৮৪ শতাংশ, বজলু মিয়ার ৫০০ শতাংশ, আরজু মিয়ার ২৫০ শতাংশ, দেলোয়ার হোসেনের ৫০০ শতাংশ, বানকাটা গ্রামের যুগেল মন্ডলের ১৫০ শতাংশ, কানই মন্ডলের ৫০ শতাংশ, গোপাল মন্ডলের ৫০ শতাংশ, অমলেশের ৫০ শতাংশ, গেন্দু মন্ডলের ৫০ শতাংশ জমির পাকা ধান পনিতে তলিয়ে গেছে বলে তারা জানান।
থলপাড়া গ্রামের গোপাল মিয়ার স্ত্রী পারভীন বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, সারা বছরের স্বপ্ন অসময়ের বৃষ্টি আর জোয়ারের পানি তলিয়ে দিলো। নিজেদের ২৫০ শতাংশ জমির ধানসহ তাদের প্রজেক্টের পুরো ধান তলিয়ে গেছে। এতে তাদের প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতি হবে বলে তিনি জানান।
কৃষক বজলু মিয়া জানান, তিনি ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে জমির পাকা ধান তলিয়ে গেছে। অনেক খেতের ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে রয়েছে। এখন অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার নেই। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে। যারা পানিতে ধান কাটছেন তারা নৌকায় করে পারে আনছেন।
মির্জাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান জানান, ফতেপুর ইউনিয়নের ওই চার গ্রামে ১২৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে ৫০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। বাকি ৭৫ হেক্টর জমির মধ্যে ২২ হেক্টর জমির পুরো ধান পানিতে নিমজ্জিত ও ৫৩ হেক্টর জমির ধান কৃষি শ্রমিকের মাধ্যমে কাটা সম্ভব বলে তিনি জানান। তবে অসময়ের বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ওই এলাকার কৃষকের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।