নওগাঁ, স্টাফ রিপোর্টারঃ করোনার কারণে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। মহামারি ঠেকাতে সরকার দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করায় দেশের পর্যটন এলাকাগুলোও বন্ধ পড়ে রয়েছে।
ফলে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মজীবীরাও বেকার হয়ে পড়েছেন। এর প্রভাব পড়েছে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র নওগাঁতেও।
জেলার বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ও আত্রাই উপজেলার রবীন্দ্রনাথের পতিসর কাচারি বাড়ী জাদুঘর থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
দেশে করোনা ধরা পড়লে গত ১৯ মার্চ জনগণের সুরক্ষার লক্ষ্যে নওগাঁয় পর্যটন, দর্শনার্থী স্থান ও প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর বন্ধ করে দেয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর।
আগামী ৩০ মে পর্যন্ত এসব দর্শনীয় স্থান বন্ধ থাকবে বলে জানা গেছে। পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ও জাদুঘর মার্চের শেষ থেকে চলতি মে মাস পর্যন্ত বন্ধ থাকায় সরকার রাজস্ব হারিয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
অপরদিকে পতিসর কাচারি বাড়ির পর্যটন থেকে প্রায় ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা আয় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে সরকার এ দুই দর্শনীয় ও পর্যটন স্থান থেকে প্রায় ৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার বা সোমপুর বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার। পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।
এটি বৌদ্ধদের অতি বিখ্যাত ধর্মচর্চা কেন্দ্র ছিল। শুধু উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকেই নয়, চীন, তিব্বত, মিয়ানমার (তদানীন্তন ব্রহ্মদেশ), মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশের বৌদ্ধরা এখানে ধর্মচর্চা ও ধর্মজ্ঞান অর্জন করতে আসতেন। দশম শতকে বিহারের আচার্য ছিলেন অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান।
পাহাড়পুর সংলগ্ন জাদুঘরে সংরক্ষিত উল্লেখযোগ্য মূর্তির মধ্যে বেলে পাথরের চামুন্ডা মূর্তি, লাল পাথরের দন্ডায়মান শীতলা মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের বিষ্ণুর খন্ডাংশ, কৃষ্ণ পাথরের দন্ডায়মান গণেশ, বেলে পাথরের কীর্তি মূর্তি, দুবলহাটির
মহারাণীর তৈলচিত্র, হরগৌরীর ক্ষতিগ্রস্ত মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের লক্ষ্মী, নারায়নের ভগ্নমূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের উমা মূর্তি, বেলে পাথরের গৌরী মূর্তি, বেলে পাথরের বিষ্ণু মূর্তি, নন্দী মূর্তি, কৃষ্ণ পাথরের বিষ্ণু মূর্তি, সূর্য মূর্তি।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত নওগাঁর আত্রাই উপজেলার পতিসর কাচারি বাড়ি। কবি গুরু বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু তার শিল্পকর্মগুলো রেখে গেছেন। তার শিল্পকর্ম নিয়ে পতিসরে গড়ে উঠেছে রবীন্দ্র জাদুঘর।
জাদুঘরের সংগ্রহে রয়েছে কবির দেয়াল ঘড়ি, লোহার সিন্দুক, কৃষি ব্যাংকে ব্যবহৃত সিন্ধুক, খাট, টি টেবিল, টি-পট, আয়না, হেলানো চেয়ার, নাগর বোটের এ্যাংকর, স্নানের বাথটাব, বিভিন্ন বয়সের ছবি, পত্নী-পুত্র ও কন্যার ছবি, কবির স্বহস্তে লিখিত ছয় পৃষ্ঠার চিঠিসহ নানান সামগ্রী।
কবীর সানিধ্য পেতে ও তার কর্মগুলো দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে কাচারি বাড়িতে ছুটে আসেন কবি ভক্ত ও অনুরাগীরা।
পাহাড়পুর প্রধান ফটকের পাশে ফাস্ট ফুড ও ঝিনুক মহল দোকানের মালিক মানিক হোসেন বলেন, প্রায় আড়াই মাস থেকে আমাদের দোকান বন্ধ রয়েছে।
এতে অনেক পণ্য নষ্ট ও পণের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ইঁদুর মালামাল কেটে নষ্ট করে দিয়েছে। এতে প্রায় আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
একদিকে দোকান বন্ধ, অপরদিকে মালামাল নষ্ট এতে প্রায় পথে বসার উপক্রম। তার মতো সেখানে প্রায় ১২ জন দোকানীর একই অবস্থা।
তিনি বলেন, আমাদের সহযোগিতা করা হবে বলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তালিকা করে নিয়ে গেছেন। ঈদের আগেই সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বস্ত করা হলেও কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সহযোগিতা আমরা পাইনি।
পাহাড়পুর জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান আবু সাইদ ইনাম তানভিরুল বলেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় ২০১৯ সালের জুলাই থেকে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে দর্শনার্থীদের আনাগোনা বাড়তে থাকে।
রাস্তাঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় দর্শনার্থী বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে করোনাভাইরাসের কারণে এখন জাদুঘর ও পর্যটন স্থান বন্ধ রয়েছে।
সারা বছরে যে পরিমাণ রাজস্ব আয় হয় দুই ঈদে তার চেয়ে বেশি আয় হয়। করোনা ভাইরাসের কারণে দর্শনীয় স্থান ও জাদুঘর বন্ধ থাকায় সরকার মোট অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আত্রাই পতিসর কাচারী বাড়ি জাদুঘরের সার্ট মুদ্রাক্ষরিক কাম-কম্পিউটার অপারেটর আবুল কালাম হোসেন বলেন, প্রতিমাসে প্রায় প্রায় ১৭ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার রাজস্ব আয় হত।
এছাড়া প্রতি ঈদের প্রথম দিন প্রায় ৩০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় দিন ৫০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় দিনে ৪০ হাজার টাকার মতো রাজস্ব আয় হত। চতুর্থদিন থেকে আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করে। করোনাভাইরাসের কারণে এখন বন্ধ।