কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ কুমিল্লায় ৮ম শ্রেণির ছাত্রীকে বিয়ে করে ৬০ বছরের রিকশাচালক শামু ফেঁসে গেছেন। তার অসম বিয়ের খবর বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরই মধ্যে ভাইরাল হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ওই দম্পতিকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি চক্র অপপ্রচারে নামে। স্বামীর সাথে ছবিটি ‘কনের বাবার সাথে ছবি’ বলে প্রচারণা চালালে রীতিমত হৈ-চৈ শুরু হয়।
দুপুরের দিকে ওই দম্পতি ভিডিও লাইভে এসে তাদের বিয়ের বিষয়টি নিয়ে কাউকে অপপ্রচার না করার অনুরোধ জানায়।
কনে মরিয়ম মৃত্যু হলেও ষাটোর্ধ্ব শামুর সংসারে থাকার সংকল্প ব্যক্ত করে। কিন্তু বিধিবাম। সন্ধ্যায় কনের মায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার মেয়েকে ফুসলিয়ে অপহরণ করার অভিযোগ এনে থানায় অভিযোগ দিলে পাল্টে যায় দৃশ্যপট।
নব দম্পতিতে ডেকে আনা হয় থানায়। এখন চলছে জিজ্ঞাসাবাদ।আইনগত সকল দিক ও কাগজপত্র এবং কনের বয়স পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পথেই হাঁটছেন লালমাই থানা পুলিশ। রাতে এমন ইঙ্গিতই দিলেন থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আইয়ুব।
বৃহস্পতিবার রাতে ওসি মো. আইয়ুব জানান, গত দুইদিন ধরে এ বিয়ের বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেন অসামাজিক কর্মকাণ্ড চলছিল।
এ বিয়ের বিষয়টি নিয়ে বড় বড় মিডিয়া কেন এমন করছে? এ সময়ে পুলিশ ব্যস্ত করোনা নিয়ে, আর সমাজের লোকজন ব্যস্ত ওদের বিয়ে নিয়ে।
এটা কি ঠিক হচ্ছে ? তিনি বলেন, আজ মেয়ের মা তাছলিমা আক্তার থানায় লিখিত অভিযোগ করে বলেছেন, তার নাবালিকা মেয়েকে শামছুল হক শামু নানা প্রলোভনে ও ফুসলিয়ে অপহরণ করে অন্যত্র নিয়ে গেছেন।
তাই সন্ধ্যার দিকে ওদেরকে (নব দম্পতি) থানায় আনা হয়েছে। শামুকে গ্রেপ্তার করা হবে কিনা, এ বিষয়ে ওসি জানান, থানায় উভয়কে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
মেয়ের বর্তমান বয়স, ডাক্তারি পরীক্ষায় প্রকৃত বয়স নির্ণয়, জন্ম সনদ, বিয়ের রেজিস্ট্রিসহ আরও অন্যান্য দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।শুক্রবার দিনের মধ্যেই হয়তো এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে।
এর আগে গত ১০ মে জেলার লালমাই উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের পেরুল গ্রামের শামছুল হক শামু একই গ্রামের পশ্চিম পাড়ার ইমাম হোসেনের মেয়ে মরিয়ম আক্তারকে ৫ লাখ টাকা দেনমোহর ও ১ লাখ টাকা উসুল দিয়ে বিয়ে করেন।
মরিয়ম আক্তার স্থানীয় পেরুল উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। স্কুলে যাওয়া-আসার সময় সে শামুর রিকশায় যাতায়াত করতো। তার ছোট এক মেয়ে নবাগত স্ত্রীর সাথে একই ক্লাসে পড়ে।
বিয়ে প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার দুপুরে শামু সাংবাদিকদের জানান, সকল আইনগত দিক দেখেই সে দূর-সম্পর্কের তার নাতনি মরিয়মকে বিয়ে করেন।
সে ৮ম শ্রেণিতে পড়লেও বয়স ২০ বছর ৩ মাস। এর প্রমাণাদি তার কাছে আছে। কিন্তু তাদের বিয়ে নিয়ে কিছু লোক ফেসবুকে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলেও তিনি দাবি করেন।
নববধূ জানান, যে ছবি আমার স্বামীর সাথে আছে, এটা আমার বাবা বলে কেউ কেউ ফেসবুকে দিচ্ছে, এটা কেমন কথা, আমার তো বাবা আছে, সে ঢাকায় থাকে।
৬০ বছরের বৃদ্ধকে বিয়ে করা প্রসঙ্গে সে জানায়, আমাদের দীর্ঘদিনের পরিচয়, যোগাযোগ ও প্রেম। এখানে বয়স কোনো বাধা নয়, আমি মরণ পর্যন্ত শামুর সঙ্গে থাকতে চাই।
এর আগে বিয়ের বিষয়ে বুধবার মরিয়মের বাবা ইমাম হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, শামু একজন রিকশাচালক। তার ঘরে স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে।
সে আমার বাড়িতে কাজ করতো। তার মেয়েও আমার মেয়ের সাথে একই ক্লাসে পড়ে। আমি ঢাকায় একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করি।আমার অনুপস্থিতিতে পরিবারে বিভিন্ন কাজ সে করে দিত।
তাকে আমি খুব বিশ্বাস করতাম। সে আমার মেয়েকে নানা প্ররোচনা দিয়ে বিয়ে করেছে। এ বয়স্ক একটা লোকের সাথে আমার মেয়ে কিভাবে সংসার করবে? আমি গরিব বলে কারও কাছে বিচার পাচ্ছি না, তিনি এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ দিকে থানায় অভিযোগকারী কনের মা তাছলিমা আক্তার জানান, শামু আমাদের বাড়িতে কাজ করার সুযোগে এতো বড় সর্বনাশ করবে তা ভাবিনি। তার বয়স ৬০, স্ত্রী ও ৬ ছেলে- মেয়ে রয়েছে। সে বিয়ের নামে আমার মেয়ের জীবনটা তছনছ করে দিয়েছে। তিনি শামুর শাস্তি দাবি করেন।