শিক্ষা ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের কারণে ছুটির সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিলম্ব ফি ছাড়াই মাসিক বেতন আদায় করা করা হবে। বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় বেতন পরিশোধে বিলম্ব হলে জরিমানা না নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজধানীর শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
তবে বেতনের জরিমানা মওকুফ নয়, পুরো বেতনই মওকুফের দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এ হিসাবে এক মাস গড়িয়ে গেছে, দিন দিন পরিস্থিতিও অস্বাভাবিক হচ্ছে। দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বার্ষিক পঞ্জিকা অনুযায়ী, ২৫ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত রমজান, ঈদুল ফিতর, জুমাতুল বিদা, শবে কদর, বুদ্ধ পূর্ণিমার ছুটির বন্ধ। করোনা পরিস্থিতি এখনও নিশ্চিত বোঝা যাচ্ছে না যে, কবে নাগাদ সবকিছু স্বাভাবিক হবে, চালু হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
করোনার কারণে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বিলম্ব হচ্ছে এই বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ক্লাস বন্ধ, সাময়িক পরীক্ষা বন্ধ।
সরকারি অর্থে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের বেতনের অর্থে পরিচালিত হয় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ। কিছু কিছু স্কুল ফেব্রুয়ারির বেতন নিতে পারলেও অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিলের বেতন আদায় নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
অন্যদিকে করোনার ছুটিতে দেশজুড়ে অচলাবস্থায় জীবনযাত্রার সঙ্গে সব পেশার মানুষের কমবেশি আয়-রোজগারে টানাপড়েন শুরু হয়েছে। শিক্ষায় ব্যয়ের চেয়ে এই মুহূর্তে নিত্যপ্রয়োজন মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছেন মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো।
অনেক অভিভাবকদের দাবি করোনা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন মওকুফ করা হোক। তবে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের বেতনের অর্থে পরিচালিত হয়, তারাও বিপাকে তাদের প্রাত্যহিক খরচ মেটানোয়। স্কুলের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের কোনো উপায় নেই।
এ প্রসঙ্গে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রামণ এড়াতে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ।
এখন ক্লাস নেই, পরীক্ষাও নেই। অভিভাবকরাও এখন বিপদে। দেশের অচলাবস্থার নিরসন না হলে। অভিভাবকদের আয়-রোজগার স্বাভাবিক না হলে কীভাবে বেতন পরিশোধ করবেন? সরকারের কাছে আমাদের দাবি, যতদিন করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে, ততদিন বেতন মওকুফ করতে হবে।
তিনি বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান বিলম্বে বেতন পরিশোধে জরিমানা না নেওয়ার কথা ভাবছেন। বিলম্ব ফি নয়, পুরো বেতন মওকুফের দাবি আমাদের।
আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারের কাছে দাবি ভতুর্কি প্রদানের। সরকার বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা দিচ্ছে, সেই প্রণোদনা বেরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিলে অভিভাবকরা উপকৃত হবে।
সিদ্ধেশরী গালস স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. শাহাব উদ্দিন মোল্লা জানান, বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় করোনাকালে বেতন গ্রহণে বিলম্ব হলে অভিভাবকদের কাছ থেকে জরিমানা না নেয়ার সিদ্ধান্ত হবে পরিচালনা পর্ষদে।
উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ উম্মে সালমা জানান, পুরো দেশ যখন বিপদে, তখন আমরা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য অভিভাবকদের জন্য একটু ছাড় দিতেই পারি।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহানআরা জানান, সাধারণত কোনো শিক্ষার্থী সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই অনুপস্থিত হলে জরিমানা করা হয়। এখন তো বিশেষ একটা দুর্যোগের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি। মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এই সময়টায় জরিমানা হবে না।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফৌজিয়া জানান, আমাদের স্কুলে দিনমজুরের সন্তানও পড়ে। এখন অনেকের আয়-রোজগার নেই।
তাদের সন্তানদের আমরা পড়ালেখার জন্য তো সুযোগ দিতে হবে। দেরিতে বেতনে জরিমানা মওকুফ করার পাশাপাশি চাহিদাসম্পন্ন দ্ররিদ্র শিক্ষার্থীর পরিবারের প্রতি কিছু করা যায় কী না, সেটাই ভাবছি।
এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) মো. বেলাল হোসাইন বলেন, বেতন মওকুফ করা হবে কী, হবে না- এই বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেই।
আমরা এখন টেলিভিশন এবং অনলাইনের ক্লাসগুলোর প্রতি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। বেতনের বিষয়ে হয়তো সিদ্ধান্ত আসতেও পারে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না।