নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি: এবার জ্বর, সর্দি কাশি ও ঠান্ডা জনিত রোগে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন লকডাউন ঘোষিত জেলা নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো: জসীম উদ্দিন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম এবং সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ। তারা হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন বলে জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে।
তবে গত মংগলবার দুপুর থেকেই তারা অসুস্থ বলে এই প্রতিবেদককে নিজেদের শারিরীক অসুস্থ্যতার কথা সরাসরি জানিয়েছেন। সময় সংবাদে সোমবার জেলা প্রশাসক ও জেলা সিভিল সার্জনের স্বাক্ষাৎকার প্রচার হয়। সেই স্বাক্ষাৎকার নিতে গেলে তারা তাদের শারিরীক অসুস্থতার কথা জানান এবং সাময়িকভাবে যে কোন তথ্যের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সেলিম রেজার সাথে যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক নিজেই। সোমবার সরাসরি আলাপকালে এই প্রতিবেদক জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনকে বাস্তবেই ঠান্ডাজনিত অসুস্থতায় ভুগতে দেখেন।
এছাড়াও জেলা করোনা সংক্রান্ত ফোকাল পার্সন ও সদর উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম রয়েছেন আইসোলেশনে। তিনি বাড়িতেই এই প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন বলে পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
এর মধ্যে জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিনের করোনা সন্দেহে তার নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে বলেও মংগলবার রাতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হয়েছে।
সূত্র জানয়, নারায়ণগঞ্জ জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. জসিম উদ্দিন এবং এই কমিটির সদস্য সচিব জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ। চলমান পরিস্থিতিতে এই দুইজন হচ্ছেন জেলার সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাদের পাশাপাশি আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হচ্ছেন জেলা করোনা সংক্রান্ত ফোকাল পার্সন ও সদর উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম। অন্যদিকে জেলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অধিকর্তা হলেন পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম।
এদিকে ওই চারজন জেলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলেও তারা বুধবার অফিস করেননি কেউ। এমন পরিস্থিতিতে ওই চারজন অফিস কেন করছেন না, কি হয়েছে, এমন খবর এক কান দু কান করে রটে যায় সর্বত্র। ফলশ্রুতিতে খবর নিয়ে জানা যায়, তারা চারজনই বাড়িতে রয়েছেন। তিনজন তাদের চারজনেরই জ্বর সর্দি করোনাভাইরাস সন্দেহে তারা হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। একজন আইসোলেশনে। ডিসির নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন মঙ্গলবার রাত থেকে হঠাৎ অসুস্থ বোধ করলে বুধবার তিনি তার বাংলোয় বিশ্রামে চলে যান। সেখান থেকেই জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন দুপুরে তার নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠায়।
এদিকে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্যসচিব ও জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজও বুধবার থেকে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। জেলা করোনা ফোকাল পার্সন ডা. জাহিদুল ইসলাম করোনা সন্দেহে বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন এবং জেলা করোনা ফোকাল পার্সন এদিন কেউই অফিস করেননি। তবে তাদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া গেলেও জেলা প্রশাসকের মুঠোফোন রিসিভ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সেলিম রেজা।
এ ছাড়া জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমও অফিসে আসেননি। তার কোয়ারেন্টাইনে থাকার বিষয়টি পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
তবে এসপি জায়েদুল আলম গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমি মোটামিটিভাবে সুস্থ আছি। আমি কোয়ারেন্টাইনে নেই। তবে ডিসি ও সিভিল সার্জন একটু অসুস্থ। এ ছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামের করোনা সন্দেহ হওয়ায় যেহেতু তার সংস্পর্শে ছিলাম, তাই বাড়িতেই অফিস করছি। আর এই মুহূর্তে আমাদের সবার সামাজিক দূরত্ব মেনে পরিস্থিতি মোকাবিলা প্রয়োজন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সেলিম রেজা জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসক বাড়িতে আছেন। জনসমাগম যাতে কম হয় এ কারণে অফিসে কম সময় দেওয়া হচ্ছে। তবে আমাদের সব কাজ চলছে।
করোনার নমুনা পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি (ডিসি) কাশিসহ অসুস্থ অনুভব করেছিলেন। এ কারণে ভাবির পরামর্শে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে তিনি এখন সুস্থ আছেন। চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।
এ ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, আমি আসলে কোয়ারেন্টাইনে আছি। বাসায় বসে অফিস করছি। টেলিফোনে নির্দেশ দিচ্ছি।
করোনা বিষয়ক জেলা ফোকাল পার্সন ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, আমি আইসোলেশনে আছি। শরীর ভালো না, অসুস্থ। মুঠোফোনে যতটুকু পারছি চালিয়ে যাচ্ছি।