নওগাঁর পত্নীতলায় এক হৃদয়বিদারক ঘটনা—এক আমচাষীর চার বছর ধরে লালিত আমবাগান রাতের অন্ধকারে তছনছ করে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। স্বপ্ন, পরিশ্রম আর ভবিষ্যতের আশা গড়ে তোলা ৩৫০টি আমগাছ মুহূর্তে পরিণত হয়েছে পোড়া ভস্মের মতো শোকে।
আমচাষী হাবিবুল্লাহ জানান, তাঁর ৯৩ শতক জমিতে বেনানা ম্যাংগো জাতের আমবাগানটি তিনি গড়ে তুলেছিলেন নিজের শেষ সম্বল ও জীবনের আশা জড়িয়ে। গত বছর বাগানটি থেকে ভালো ফলন পেয়েছিলেন। ফলে আশা করেছিলেন আগামী বছরগুলোতে আরও ভালো ফলনের মাধ্যমে সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনবেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ৬-৭ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল এসে তার পুরো পরিশ্রমকেই মাটিতে মিশিয়ে দেয়।
হাবিবুল্লাহ জানান, দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় ছানাউল, মতিবুল, দেলোয়ারসহ আরও কয়েকজন প্রভাবশালী একটি দলের নাম ভাঙিয়ে তাঁর কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। এ জমি নিয়ে আগের বিরোধে আজিজুল ও গফফার নামে আরেক পক্ষ রেকর্ড দেখিয়ে দাবি তুললেও আদালতে ব্যর্থ হওয়ায় সরে দাঁড়ায়। তখনই চাঁদাবাজ চক্রটি পুরো বিষয়টিকে নিজেদের আধিপত্য দেখানোর সুযোগ হিসেবে কাজে লাগায়।
গত ১০ দিন ধরে হাবিবুল্লাহকে চাঁদার টাকা দিতে চাপ দিতে থাকে ছানাউল ও তার সহযোগীরা। কিন্তু হাবিবুল্লাহ টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় এর জের ধরে বৃহস্পতিবার রাতেই তারা ৩৫০টি বৃদ্ধি পাওয়া আমগাছ কেটে ফেলে। সকালে বাগানে গিয়ে হাবিবুল্লাহ দেখতে পান তাঁর স্বপ্নভরা সবুজ বনানী হয়ে উঠেছে এক মৃতপ্রায় স্তূপ। গাছের গুঁড়ি, কচি ডাল আর শুকিয়ে যাওয়া পাতা শুধু নির্মমতার সাক্ষী।
এলাকাজুড়ে এ ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ এমন নৃশংসতা ও অন্যায়ের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। কৃষিনির্ভর এলাকায় আমগাছ কেটে দেওয়া শুধু একজন চাষীর ক্ষতি নয়—এটি পুরো সমাজের ওপর আঘাত বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
এ ঘটনায় হাবিবুল্লাহ ছানাউলসহ ৫ জনকে আসামি করে পত্নীতলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। পত্নীতলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এনায়েতুর রহমান জানান, অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে, সত্যতা পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মানুষের নির্ভরতা, স্বপ্ন আর জীবিকার ওপর হামলার এই ঘটনা এলাকায় নিন্দার ঝড় তুলেছে। হাবিবুল্লাহর এখন একটাই আশা—আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হোক, দায়ীদের শাস্তি হোক, আর তাঁর মতো কোনো কৃষক যেন আর কখনো এমন নির্মমতার শিকার না হন।

নিউজ ভিশন টুডে ডেস্ক : 



















