নওগাঁয় মৌসুম ভিত্তিক শীতকালিন সবজি ফুলকপি বেচাকেনার জন্য অস্থায়ী হাট বসেছে। কৃষকরা খেত থেকে এ হাটে তুলে আনে ফুলকপি। যা পাইকারদের হাত ধরে চলে যায় ঢাকা ও কুমিল্লা সহ কয়েকটি জেলায়।
এ হাটে কৃষকদের কোন ধরণের খাজনা দিতে হয়না। ভাল দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছেন চাষীরা। প্রতিদিন প্রায় ৩ ঘন্টায় হাটে দুই লক্ষাধিক টাকার বেচাকেনা হয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে- জেলায় ছয় হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে শীতকালিন বিভিন্ন জাতের শাকসবজির আবাদ হয়েছে। যা থেকে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৯০ হেক্টর জমিতে ফুলকপির আবাদ হয়েছে। যা থেকে উৎপাদনের আশা ৩ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন।
সদর উপজেলার নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে অবস্থিত ডাক্তারের মোড়ে প্রতিদিন ভোর থেকে বসছে ফুলকপি অবস্থায়ী হাট। হাটে এ উপজেলার হাঁপানিয়া ও বর্ষাইল ইউনিয়নের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত শুধুমাত্র ফুলকপি বিক্রির জন্য আসেন। গত প্রায় ২০ দিন থেকে এ হাটে বেচাকেনা শুরু হয়েছে। চলবে আগামী আরো প্রায় দেড়মাস দেড়মাস পর্যন্ত। বাড়ির পাশে হাট হওয়ায় কৃষকরা সহজেই খেত থেকে ফুলকপি তুলে হাটে নিয়ে আসছে। প্রতিপিস বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ২০-৩০ টাকায়। তবে দিন যত যাবে হাটে ফুলকপির সরবরাহ ততো বাড়বে। সরবরাহ বাড়লে দাম কমার সম্ভবনা রয়েছে। তবে এ বছর মৌসুমের শুরু থেকে শাকসবজির দাম উর্ধ্বগতি থাকায় কৃষকরা লাভবান হয়েছে।
চাষীরা জানান- অন্যান্য হাটে ফুলকপিতে এক টাকা পিস হিসেবে খাজনা দিতে হয়। এছাড়া অন্যান্য খরচও আছে। আর অস্থায়ী এ হাটে ফুলকপি বিক্রি করায় কোন খাজনা দিতে হয়। এদিক থেকে চাষীদের কোন খরচ হয়না। চাষী-ব্যবসায়ি দরদাম করে বিক্রি করা হয়।
বর্ষাইল ইউনিয়নের খামার আথিতা গ্রামের কৃষক মামুনুর রশিদ বলেন- ১৫ কাঠা জমিতে তিন হাজার পিস ফুলকপি লাগিয়েছেন। প্রতিপিসে খরচ পড়েছে ৫-৭ টাকা। বর্তমানে হাটে প্রতিপিস বিক্রি হচ্ছে ২০-২৮ টাকায়। এদিন হাটে ৭০ পিস নিয়ে এসেছিলেন। আকারে একটু ছোট হওয়ায় ২৩ টাকা মুল্য হিসেবে বিক্রি করেছেন। তবে মৌসুমের শুরুতে ৩৫-৪০ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি হয়েছিল। খেতে আর অল্প পরিমাণ ফুলকপি আছে। খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো লাভ থাকবে।
গহেরপাড়া গ্রামের আরেক কৃষক আশরাফুল ইসলাম বলেন- এ বছর আট কাঠা জমি ২ হাজার ২০০ পিস ফুলকপির আবাদ করেছেন। মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হওয়ায় নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। পরে কীটনাশকও ছত্রাকনাশক স্প্রে করে নষ্টের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ১৫ হাজার টাকা লাভ থাকবে। তবে গত বছর দাম আরো ভাল থাকবে বলে জানান এ কৃষক।
নওগাঁ সদর উপজেলার বাচারিগ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ি মানিক বলেন- গত কয়েক বছর থেকে ফুলকপির মৌসুমে অস্থায়ী ভাবে হাট বসছে। এখানে কোন ধরণের খাজনা দিতে হয়না। এতে চাষী এবং ব্যবসায়ি উভয়ে সুবিধা হয়েছে। গত প্রায় ২০ দিন থেকে এখানে প্রতিদিন ভোর থেকে হাট বসে। আমরা তিন জন ব্যবসায়ি ফুলকপি কিনে কুমিল্লা জেলায় পাঠাই। হাটে প্রায় ৫-৬ হাজার পিস ফুলকপি সরবরাহ হচ্ছে। যা দাম প্রায় ২ লাখ টাকা। আগামীতে ফুলকপির সরবরাহ আরো বাড়বে।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন- মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিতে আগাম জাতের কিছু সবজির সমস্যা হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তবে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দেয়ায় তা রক্ষা পেয়েছে। বাজারে শাকসবজির ভাল দাম থাকায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। আশা করা যায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।