নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার পারইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক জাহিদুর রহমানকে (৪৫) তার কার্যালয়ে ঢুকে কুপিয়ে জখম করেছে সন্ত্রাসীরা।
রোববার (১২ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে পারইল ইউপি কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। জাহিদুর রহমান বর্তমানে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পারইল ইউনিয়ন পরিষদের সচিব তরিকুল ইসলামের ভাষ্য, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান পরিষদে আসেন। এর কিছুক্ষণ পর আমি কাগজপত্র সই করাতে চেয়ারম্যানের রুমে যাই। সেখানে স্থানীয় এক ব্যক্তি তার বাবার মৃত্যু সনদ নিতে চেয়ারম্যানের কাছে আসেন। পরে মাস্ক পরা এক ব্যক্তি চেয়ারম্যানের রুমে ঢুকে মৃত্যু সনদ নিতে আসা ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনার কাজ হয়নি।’ তখন ওই লোক বলেন, ‘না, কাজ হয়নি।’ তখন মাস্ক পরে থাকা ওই ব্যক্তি বলেন, ‘তাহলে আপনি একটু পরে আসেন। চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার কিছু পারসোনাল কথা আছে।
তার কথামতো মৃত্যু সনদ নিতে আসা লোকটা বের হয়ে যান। তারপর হেলমেট ও মাস্ক পরা আরও ৬-৭ জন চেয়ারম্যানের রুমে প্রবেশ করেন। তারা আমাকে চাকু ধরলে আমি ভয়ে চিৎকার করতে করতে রুম থেকে বের হয়ে যাই। এর কিছুক্ষণ পর লোকগুলা বের হয়ে মোটরসাইকেলে চড়ে চলে যায়। তখন চেয়ারম্যানের রুমে গিয়ে দেখি, তার পুরো শরীর রক্তাক্ত। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে আদমদিঘী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।’
সচিব আরও বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা চেয়ারম্যানের মুখমণ্ডল ছাড়া পুরো শরীরে কুপিয়েছে। তার পিঠে, বুকে, পেটে একাধিক জায়গায় জখম রয়েছে। তার ডান হাতের কবজিতে এমনভাবে কোপানো হয়েছে যে, কবজিতে শুধু চামড়া লেগে হাতটা ঝুলে আছে। তিনি বাঁচবে কি না আল্লাহই জানে।’
রাণীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ওবায়েদ বলেন, দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে জাহিদুরকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করেছে। তবে অস্ত্রধারীরা হেলমেট ও মাস্ক পরে থাকায় তিনি তাদের চিনতে পারেননি। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘চলমান আন্দোলনে বিএনপির নেতাকর্মীরা যাতে অংশ নিতে না পারেন সেজন্য আতঙ্ক সৃষ্টি করতে বিএনপির নেতাকর্মীদের টার্গেট করে হামলা চালানো হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনও এখানে নীরব ভুমিকা পালন করছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক বলেন, আপাতত মনে হচ্ছে, ব্যক্তিগত রেষারেষির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। কোনো সংঘবদ্ধ চক্র কোনো নির্দিষ্ট স্বার্থ হাসিলের জন্য এসব ঘটনা ঘটিয়ে চলছে বলে মনে হয় না। এনিয়ে গত দুই মাসে নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলায় বিএনপির চার নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটলো। গত ২৬ সেপ্টেম্বর নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় মালিপুকুর বাজার এলাকায় বিএনপি কর্মী ও স্কুলশিক্ষক আবুল হোসেন ও একইদিন রাণীনগর উপজেলার কালিগ্রাম এলাকায় উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেনকে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা।
গত ২৪ অক্টোবর রাণীনগর বরগাছা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু রায়হানকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনা ঘটে। পরপর ঘটে যাওয়া এসব ঘটনায় স্থানীয়দের আশঙ্কা, রাণীনগর ও আত্রাইয়ে আবারও সন্ত্রাসীদের উত্থান ঘটতে যাচ্ছে।