ঢাকা ০৫:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রপ্তানিতে নেতিবাচক ধারায় ‘বর্ষপণ্য’ পাট

প্রাচীন কাল থেকে পাঠকে বাংলাদেশের সোনালী আঁশ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় । এবং পাঠকে প্রধান অর্থকারী  ফসল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় । কিন্তু বর্তমানে আবহাওয়া পরিবর্তন এবং ইউরোপের দেশগুলোতে পাট পণ্যর চাহিদা কমা করণে এ পণ্যটির উৎপাদন ও চাহিদা উভই কমেছে

পাট ও পাটজাত পণ্যের বড় বাজার ভারত ও ইউরোপ। আর লোহিত সাগরের তীরবর্তী দেশ সুদানে বাংলাদেশের পাটের বস্তা ও ব্যাগের ভালো বাজার ছিল। গত অর্থবছর ৯১ কোটি ডলারের পাটপণ্য রপ্তানি করেন এদেশের উদ্যোক্তারা। চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছর ১০২ কোটি টাকার পাটপণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে পাটপণ্যের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ২৩ কোটি ডলার। তবে প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রপ্তানি প্রায় ২২ কোটি ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ কম।

প্রথম প্রান্তিকের আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে পাট রপ্তানি থেকে আসে প্রায় ২৪ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় পাটের তিন পণ্য কাঁচাপাট, পাটের ব্যাগ ও পাটের সুতার রপ্তানি কমেছে যথাক্রমে ১৮ দশমিক ১৮ শতাংশ, ২৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ ও ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছর পাটের মান ও দামে কৃষক খুশি নন।

বিশ্ব্যব্যাপী চাহিদা যেভাবে কমছে চলতি বছর পাটজাত পণ্য রপ্তানি কমার আরও সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন দেশের ক্রেতা পাটের পরিবর্তে কটন ও সিল্ক দিয়ে তৈরি পণ্য কিনছেন। বহির্বিশ্বে পাটপণ্যের চাহিদা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমেছে। দামও আগের মতো নেই। দেশের বড় পাটকলগুলো বন্ধ, এর প্রভাব পড়েছে রপ্তানিতে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) চেয়ারম্যান মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘দেশের পাটজাত পণ্যের ওপর ভারতের অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপের কারণে রপ্তানি কমছে। আবার এখন অনেক ক্রেতা সুতার বিকল্প হিসেবে তুলা বর্জ্য ও সিনথেটিক ফাইবারের দিকে ঝুঁকছেন। তুরস্ক ও অন্য দেশের কার্পেট প্রস্তুতকারকদের কাছে পাটের সুতা এবং টুইনের চাহিদা কমে গেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দায় উন্নত দেশগুলোয় কার্পেটের ব্যবহারও কমেছে।’ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্ষপণ্য ঘোষণা করলেও পাটপণ্যের উদ্যোক্তাদের পর্যাপ্ত নীতিসহায়তা দেওয়া হচ্ছে না। খরচ বেড়ে যাওয়া ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় অনেকেই ব্যবসা ছেড়েছেন। এক সময় পাটের সুতার বড় বাজার ছিল তুরস্ক ও ইরান। বাহারি কার্পেট তৈরি করতে দেশ দুটো বাংলাদেশ থেকে পাটের সুতা আমদানি করতো। এক বছর ধরে পোশাকের ওয়েস্ট থেকে তৈরি সুতা বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছে। পাটের সুতার দাম বেড়েছে ৬৫ শতাংশের বেশি। ইউরোপে মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তা পর্যায়ে বহুমুখী পাটের পণ্য কেনার প্রবণতা কমেছে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ।

এছাড়া আফ্রিকার দেশ সুদানে গত এপ্রিলের মাঝামাঝি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল কেন্দ্র করে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ায় সেখানে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সুদানে বাংলাদেশের পাটের বস্তা ও ব্যাগের ভালো বাজার ছিল। ব্যবসায়ীদের বকেয়া অর্থও আটকে আছে।

রপ্তানিকারকদের অভিযোগ, সুদানের অনেক ক্রেতাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রপ্তানিমূল্য না পাওয়ায় অনেকেই দেশটিতে রপ্তানি করার সাহস পাচ্ছেন না। জটিলতার কারণে দেশটিতে রপ্তানি কমেছে এক-তৃতীয়াংশ। পাটপণ্য রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান রুটস বাংলার স্বত্বাধিকারী মুসা শিকদার  বলেন, ‘পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে অনেক সমস্যা। কোনটা রেখে কোনটা বলবো। এবছরের দেশীয় পাটের মান সন্তোষজনক নয়। তার ওপর আবার দাম বেশি। অন্যদিকে ইউরোপ, আমেরিকা থেকে চলতি বছর অর্ডার কম আসছে। সেখানে মূল্যস্ফীতি আছে। পাট তো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নয়। শৌখিন পণ্য, শৌখিন পণ্য মূল্যস্ফীতির সময় কম বিক্রি হয় এটাই স্বাভাবিক।’

তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটা এখন অনেকেই সাফার করছে সেটা হলো পণ্যের দাম না আনতে পারা। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে পণ্য গেছে। পণ্যের বিক্রয়মূল্য বাবদ ডলার যখন আনতে চাচ্ছি, তখন সরকার আগের রেটে দিতে চাচ্ছে অর্থাৎ ৮৫- ৮৬ টাকায়। এটা তো আমাদের বিশাল লস। এ কারণে অনেক উদ্যোক্তাই পণ্যমূল্য দেশে আনছেন না।’

কৃষকরা বলছেন, আবহাওয়ার কারণে চলতি বছর মানসম্পন্ন পাট উৎপাদন করতে পারেননি তারা। যার প্রভাব পড়েছে রপ্তানিতে। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় অনেকই এ পণ্যটি চাষাবাদ করছেন না। এবছর চৈত্র-বৈশাখ মাসে পাটবীজ বপনের সময় বৃষ্টির দেখা মেলেনি। অনেকে বাধ্য হয়ে দেরিতে পাট লাগিয়েছেন। পাট কাটার সময় আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেও বৃষ্টি ছিল না। পুকুর-ডোবা শুকনো থাকায় পচনপানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। এতে অল্প পানিতে অধিক পরিমাণে পাট জাগ দেওয়ায় পাটের রং হয় কালো বা ফ্যাকাসে।

ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার পাটচাষি হেলাল মিয়া বলেন, ‘পাটের আঁশ ছাড়ানোর জন্য প্রচুর পচনপানি প্রয়োজন। সাধারণত খাল-বিলে এ জাগ দেওয়া হয়। এবার পাট কাটার সময় আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বৃষ্টি কম হয়েছে। পুকুর-ডোবা শুকনো থাকায় পচনপানির তীব্র সংকট ছিল। অল্প পানিতে অধিক পরিমাণে পাট জাগ দেওয়ায় পাট সোনালি রং পায়নি। পাটের মান ভালো হয়নি।’ জানতে চাইলে ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. রকিবুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবছর বৃষ্টি পাটের জন্য অনুকূলে ছিল না। রোপণের সময় বৃষ্টি না থাকায় দেরি হয়েছে, আবার কাটার সময়ও সমস্যা হয়েছে। সেজন্য পাটের মান খারাপ।’ উদ্যোক্তারা বলছেন, রপ্তানি বিকাশে মানসম্পন্ন পাট উৎপাদন করা প্রয়োজন। এছাড়া কর অবকাশ, বন্ড সুবিধাসহ নীতি সহযোগিতা পেলে পাট রপ্তানি ফের ঘুরে দাঁড়াবে।

এসব বিষয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুর রউফ জাগো নিউজ বলেন, ‘পাটের দামের বিষয়টি সরকার নির্ধারণ করে না। পচনপানি ও পাট শুকানোর সহযোগিতার জন্য সরকার প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে।পাটের দাম না পেলে কৃষক চাষ করবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পাটের দাম আমাদের রপ্তানি ও পাটপণ্য উৎপাদনে বড় প্রভাব ফেলবে। বিদেশি ক্রেতারা বিকল্প বাজারে চলে যাবে। তারা বিকল্প কাঁচামাল ব্যবহার শুরু করবে। এজন্য উভয় ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যের মধ্যে রাখাও বড় একটি চ্যালেঞ্জ।’

রপ্তানিতে নেতিবাচক ধারায় ‘বর্ষপণ্য’ পাট

আপডেট সময় ১০:৪৯:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর ২০২৩

প্রাচীন কাল থেকে পাঠকে বাংলাদেশের সোনালী আঁশ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় । এবং পাঠকে প্রধান অর্থকারী  ফসল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় । কিন্তু বর্তমানে আবহাওয়া পরিবর্তন এবং ইউরোপের দেশগুলোতে পাট পণ্যর চাহিদা কমা করণে এ পণ্যটির উৎপাদন ও চাহিদা উভই কমেছে

পাট ও পাটজাত পণ্যের বড় বাজার ভারত ও ইউরোপ। আর লোহিত সাগরের তীরবর্তী দেশ সুদানে বাংলাদেশের পাটের বস্তা ও ব্যাগের ভালো বাজার ছিল। গত অর্থবছর ৯১ কোটি ডলারের পাটপণ্য রপ্তানি করেন এদেশের উদ্যোক্তারা। চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছর ১০২ কোটি টাকার পাটপণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে পাটপণ্যের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ২৩ কোটি ডলার। তবে প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রপ্তানি প্রায় ২২ কোটি ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ কম।

প্রথম প্রান্তিকের আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে পাট রপ্তানি থেকে আসে প্রায় ২৪ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় পাটের তিন পণ্য কাঁচাপাট, পাটের ব্যাগ ও পাটের সুতার রপ্তানি কমেছে যথাক্রমে ১৮ দশমিক ১৮ শতাংশ, ২৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ ও ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছর পাটের মান ও দামে কৃষক খুশি নন।

বিশ্ব্যব্যাপী চাহিদা যেভাবে কমছে চলতি বছর পাটজাত পণ্য রপ্তানি কমার আরও সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন দেশের ক্রেতা পাটের পরিবর্তে কটন ও সিল্ক দিয়ে তৈরি পণ্য কিনছেন। বহির্বিশ্বে পাটপণ্যের চাহিদা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমেছে। দামও আগের মতো নেই। দেশের বড় পাটকলগুলো বন্ধ, এর প্রভাব পড়েছে রপ্তানিতে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) চেয়ারম্যান মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘দেশের পাটজাত পণ্যের ওপর ভারতের অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপের কারণে রপ্তানি কমছে। আবার এখন অনেক ক্রেতা সুতার বিকল্প হিসেবে তুলা বর্জ্য ও সিনথেটিক ফাইবারের দিকে ঝুঁকছেন। তুরস্ক ও অন্য দেশের কার্পেট প্রস্তুতকারকদের কাছে পাটের সুতা এবং টুইনের চাহিদা কমে গেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দায় উন্নত দেশগুলোয় কার্পেটের ব্যবহারও কমেছে।’ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্ষপণ্য ঘোষণা করলেও পাটপণ্যের উদ্যোক্তাদের পর্যাপ্ত নীতিসহায়তা দেওয়া হচ্ছে না। খরচ বেড়ে যাওয়া ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় অনেকেই ব্যবসা ছেড়েছেন। এক সময় পাটের সুতার বড় বাজার ছিল তুরস্ক ও ইরান। বাহারি কার্পেট তৈরি করতে দেশ দুটো বাংলাদেশ থেকে পাটের সুতা আমদানি করতো। এক বছর ধরে পোশাকের ওয়েস্ট থেকে তৈরি সুতা বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছে। পাটের সুতার দাম বেড়েছে ৬৫ শতাংশের বেশি। ইউরোপে মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তা পর্যায়ে বহুমুখী পাটের পণ্য কেনার প্রবণতা কমেছে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ।

এছাড়া আফ্রিকার দেশ সুদানে গত এপ্রিলের মাঝামাঝি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল কেন্দ্র করে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ায় সেখানে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সুদানে বাংলাদেশের পাটের বস্তা ও ব্যাগের ভালো বাজার ছিল। ব্যবসায়ীদের বকেয়া অর্থও আটকে আছে।

রপ্তানিকারকদের অভিযোগ, সুদানের অনেক ক্রেতাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রপ্তানিমূল্য না পাওয়ায় অনেকেই দেশটিতে রপ্তানি করার সাহস পাচ্ছেন না। জটিলতার কারণে দেশটিতে রপ্তানি কমেছে এক-তৃতীয়াংশ। পাটপণ্য রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান রুটস বাংলার স্বত্বাধিকারী মুসা শিকদার  বলেন, ‘পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে অনেক সমস্যা। কোনটা রেখে কোনটা বলবো। এবছরের দেশীয় পাটের মান সন্তোষজনক নয়। তার ওপর আবার দাম বেশি। অন্যদিকে ইউরোপ, আমেরিকা থেকে চলতি বছর অর্ডার কম আসছে। সেখানে মূল্যস্ফীতি আছে। পাট তো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নয়। শৌখিন পণ্য, শৌখিন পণ্য মূল্যস্ফীতির সময় কম বিক্রি হয় এটাই স্বাভাবিক।’

তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটা এখন অনেকেই সাফার করছে সেটা হলো পণ্যের দাম না আনতে পারা। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে পণ্য গেছে। পণ্যের বিক্রয়মূল্য বাবদ ডলার যখন আনতে চাচ্ছি, তখন সরকার আগের রেটে দিতে চাচ্ছে অর্থাৎ ৮৫- ৮৬ টাকায়। এটা তো আমাদের বিশাল লস। এ কারণে অনেক উদ্যোক্তাই পণ্যমূল্য দেশে আনছেন না।’

কৃষকরা বলছেন, আবহাওয়ার কারণে চলতি বছর মানসম্পন্ন পাট উৎপাদন করতে পারেননি তারা। যার প্রভাব পড়েছে রপ্তানিতে। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় অনেকই এ পণ্যটি চাষাবাদ করছেন না। এবছর চৈত্র-বৈশাখ মাসে পাটবীজ বপনের সময় বৃষ্টির দেখা মেলেনি। অনেকে বাধ্য হয়ে দেরিতে পাট লাগিয়েছেন। পাট কাটার সময় আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেও বৃষ্টি ছিল না। পুকুর-ডোবা শুকনো থাকায় পচনপানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। এতে অল্প পানিতে অধিক পরিমাণে পাট জাগ দেওয়ায় পাটের রং হয় কালো বা ফ্যাকাসে।

ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার পাটচাষি হেলাল মিয়া বলেন, ‘পাটের আঁশ ছাড়ানোর জন্য প্রচুর পচনপানি প্রয়োজন। সাধারণত খাল-বিলে এ জাগ দেওয়া হয়। এবার পাট কাটার সময় আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বৃষ্টি কম হয়েছে। পুকুর-ডোবা শুকনো থাকায় পচনপানির তীব্র সংকট ছিল। অল্প পানিতে অধিক পরিমাণে পাট জাগ দেওয়ায় পাট সোনালি রং পায়নি। পাটের মান ভালো হয়নি।’ জানতে চাইলে ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. রকিবুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবছর বৃষ্টি পাটের জন্য অনুকূলে ছিল না। রোপণের সময় বৃষ্টি না থাকায় দেরি হয়েছে, আবার কাটার সময়ও সমস্যা হয়েছে। সেজন্য পাটের মান খারাপ।’ উদ্যোক্তারা বলছেন, রপ্তানি বিকাশে মানসম্পন্ন পাট উৎপাদন করা প্রয়োজন। এছাড়া কর অবকাশ, বন্ড সুবিধাসহ নীতি সহযোগিতা পেলে পাট রপ্তানি ফের ঘুরে দাঁড়াবে।

এসব বিষয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুর রউফ জাগো নিউজ বলেন, ‘পাটের দামের বিষয়টি সরকার নির্ধারণ করে না। পচনপানি ও পাট শুকানোর সহযোগিতার জন্য সরকার প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে।পাটের দাম না পেলে কৃষক চাষ করবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পাটের দাম আমাদের রপ্তানি ও পাটপণ্য উৎপাদনে বড় প্রভাব ফেলবে। বিদেশি ক্রেতারা বিকল্প বাজারে চলে যাবে। তারা বিকল্প কাঁচামাল ব্যবহার শুরু করবে। এজন্য উভয় ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যের মধ্যে রাখাও বড় একটি চ্যালেঞ্জ।’