ঢাকা ০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নদী জুড়েই যেন আবর্জনা আর কচুরিপানার রাজত্ব

  • নিউজ ভিশন টুডে ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৬:১৩:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ অক্টোবর ২০২২

  • Warning: A non-numeric value encountered in /home2/visionnewstoday/public_html/wp-content/themes/template-pro/template-parts/common/single_two.php on line 103
    ৫৮৬ Time View

স্টাফ রিপোর্টার:

খুলনা নগরীর প্রবেশদ্বার গল্লামারি ব্রিজের বুক চিরে অবস্থিত ময়ূর নদী জীবিত থেকেও যেন মৃত। এখন পুরো নদী জুড়েই আবর্জনা আর কচুরিপানার রাজত্ব। দেখলে মনে হবে এটি কোনো নদী নয়, যেন কচুরিপানার সবুজ গালিচা। এ নদীতে প্রতিনিয়ত ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। ফলে দূষিত হয়ে যেন নিশ্বাস নিতে না পেরে ময়ূর যেন বোবা কান্না করছে। কিন্তু শোনার কেউ নেই।

এমনকি গল্লামারি সেতু ঘিরেও নদীটি মেরে ফেলার সকল আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। বাজারের যত বর্জ্য সবই ফেলা হচ্ছে এখানে। ফলে একদিকে দখল অপরদিকে দূষণের দুর্গন্ধ মিশতে থাকে বাতাসে।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, গল্লামারী এলাকায় পাশাপাশি দুটি সেতুর নিচে রাশি রাশি বর্জ্য। দুর্গন্ধে দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। গল্লামারী বাজারের ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে স্থানটি। পাড়ে জন্মানো আগাছা একেবারে মাঝ নদীতে চলে গেছে। নর্দমা- আবর্জনার পানি এসে পড়ছে নদীতে।

পরিবেশ-সংশ্লিষ্টদের মতে, ময়ূরের মৃত্যু ঘণ্টা বাজানোর বড় একটি কারণ নগরের নালা-নর্দমা। নগরের গুরুত্বপূর্ণ ২০টির বেশি নালার মুখ ময়ূর নদীর সঙ্গে যুক্ত। এসব নালা-নর্দমার ময়লা-আবর্জনা বিষাক্ত করে তুলছে নদীর পানিকে। অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পরিবেশ বিষয়ে অসচেতনতা, অপর্যাপ্ত পানি প্রবাহসহ নানা কারণে ঐতিহ্যবাহী ময়ূর নদীটি এখন ব্যাপকভাবে দূষিত হচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনা কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য মতে, ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে ময়ূর নদী থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের সংগ্রহ করা নমুনার জরিপ থেকে দেখা যায় যে নদীর পানিতে বিশুদ্ধতার মানদণ্ড আদর্শ সীমা থেকে বহু গুণে তারতম্য রয়েছে। বর্তমানে এ নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা রয়েছে প্রতি লিটারে দশমিক ২ থেকে দশমিক ৬ মিলিগ্রাম। যদিও ডিও’র আদর্শ মাত্রা প্রতি লিটার পানিতে ৫ মিলিগ্রামের বেশি হওয়া উচিত।

এ প্রসঙ্গে খুলনার পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চের আহ্বায়ক এড. কুদরত ই খুদা বলনে, ময়ূর এখন বদ্ধ নদ। এই নদীটি দখল- দূষণের দাপট ও প্রবাহ না থাকায় শুকিয়ে মরতে বসেছে। এর কারণ হচ্ছে- নদীর উপর অপরিকল্পিত বাঁধ, ব্রিজ ও কালভার্ট তৈরি করা, সংযোগ খালগুলো দখল করে এই নদী থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা এবং খালগুলোর শ্রেণী পরিবর্তন করে প্রকল্পে ব্যবহার করা, উজানের সঙ্গে সংযোগবিহীন/প্রবাহ বিচ্ছিন্ন হওয়া প্রভৃতি।

সঙ্গে ময়ূরের সরাসরি সংযোগ ছিল। এখন সুইস গেটের মাধ্যমে জোয়ার-ভাটা নিয়ন্ত্রিত হয়। সুইস গেট বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে। ফলে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এক সময়ের স্রোতস্বিনী নদীটি এখন শ্রী ও গতি হারিয়েছে। প্রাণ যায় যায় অবস্থা।

তিনি আরও বলনে, একাধিকবার এ নদীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু আবারও সব কিছু দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, নদীতে প্রবাহ সৃষ্টি করা যাচ্ছে না। প্রবাহ না থাকলে নদ-নদী টিকে থাকে না। শোনা যাচ্ছে, এই নদীটি খনন করা হবে কিন্তু কবে, কোথায়, কিভাবে বা কোন কর্তৃপক্ষ এই খনন কাজ বাস্তবায়ন ও তদারকি করবে তা অস্পষ্ট।

ময়ূর নদ বাঁচাও আন্দোলনের নেতা ও বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ জামান বলেন, নদীটি এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। আগের বার খনন কোনো কাজে আসেনি। নদীটি নামকাওয়াস্তে খনন করা হয়েছিল। ভালো করে খনন দরকার। তবেই সুফল মিলবে।

 

ট্যাগস

নদী জুড়েই যেন আবর্জনা আর কচুরিপানার রাজত্ব

আপডেট সময় ০৬:১৩:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ অক্টোবর ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার:

খুলনা নগরীর প্রবেশদ্বার গল্লামারি ব্রিজের বুক চিরে অবস্থিত ময়ূর নদী জীবিত থেকেও যেন মৃত। এখন পুরো নদী জুড়েই আবর্জনা আর কচুরিপানার রাজত্ব। দেখলে মনে হবে এটি কোনো নদী নয়, যেন কচুরিপানার সবুজ গালিচা। এ নদীতে প্রতিনিয়ত ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। ফলে দূষিত হয়ে যেন নিশ্বাস নিতে না পেরে ময়ূর যেন বোবা কান্না করছে। কিন্তু শোনার কেউ নেই।

এমনকি গল্লামারি সেতু ঘিরেও নদীটি মেরে ফেলার সকল আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। বাজারের যত বর্জ্য সবই ফেলা হচ্ছে এখানে। ফলে একদিকে দখল অপরদিকে দূষণের দুর্গন্ধ মিশতে থাকে বাতাসে।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, গল্লামারী এলাকায় পাশাপাশি দুটি সেতুর নিচে রাশি রাশি বর্জ্য। দুর্গন্ধে দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। গল্লামারী বাজারের ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে স্থানটি। পাড়ে জন্মানো আগাছা একেবারে মাঝ নদীতে চলে গেছে। নর্দমা- আবর্জনার পানি এসে পড়ছে নদীতে।

পরিবেশ-সংশ্লিষ্টদের মতে, ময়ূরের মৃত্যু ঘণ্টা বাজানোর বড় একটি কারণ নগরের নালা-নর্দমা। নগরের গুরুত্বপূর্ণ ২০টির বেশি নালার মুখ ময়ূর নদীর সঙ্গে যুক্ত। এসব নালা-নর্দমার ময়লা-আবর্জনা বিষাক্ত করে তুলছে নদীর পানিকে। অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পরিবেশ বিষয়ে অসচেতনতা, অপর্যাপ্ত পানি প্রবাহসহ নানা কারণে ঐতিহ্যবাহী ময়ূর নদীটি এখন ব্যাপকভাবে দূষিত হচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনা কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য মতে, ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে ময়ূর নদী থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের সংগ্রহ করা নমুনার জরিপ থেকে দেখা যায় যে নদীর পানিতে বিশুদ্ধতার মানদণ্ড আদর্শ সীমা থেকে বহু গুণে তারতম্য রয়েছে। বর্তমানে এ নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা রয়েছে প্রতি লিটারে দশমিক ২ থেকে দশমিক ৬ মিলিগ্রাম। যদিও ডিও’র আদর্শ মাত্রা প্রতি লিটার পানিতে ৫ মিলিগ্রামের বেশি হওয়া উচিত।

এ প্রসঙ্গে খুলনার পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চের আহ্বায়ক এড. কুদরত ই খুদা বলনে, ময়ূর এখন বদ্ধ নদ। এই নদীটি দখল- দূষণের দাপট ও প্রবাহ না থাকায় শুকিয়ে মরতে বসেছে। এর কারণ হচ্ছে- নদীর উপর অপরিকল্পিত বাঁধ, ব্রিজ ও কালভার্ট তৈরি করা, সংযোগ খালগুলো দখল করে এই নদী থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা এবং খালগুলোর শ্রেণী পরিবর্তন করে প্রকল্পে ব্যবহার করা, উজানের সঙ্গে সংযোগবিহীন/প্রবাহ বিচ্ছিন্ন হওয়া প্রভৃতি।

সঙ্গে ময়ূরের সরাসরি সংযোগ ছিল। এখন সুইস গেটের মাধ্যমে জোয়ার-ভাটা নিয়ন্ত্রিত হয়। সুইস গেট বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে। ফলে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এক সময়ের স্রোতস্বিনী নদীটি এখন শ্রী ও গতি হারিয়েছে। প্রাণ যায় যায় অবস্থা।

তিনি আরও বলনে, একাধিকবার এ নদীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু আবারও সব কিছু দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, নদীতে প্রবাহ সৃষ্টি করা যাচ্ছে না। প্রবাহ না থাকলে নদ-নদী টিকে থাকে না। শোনা যাচ্ছে, এই নদীটি খনন করা হবে কিন্তু কবে, কোথায়, কিভাবে বা কোন কর্তৃপক্ষ এই খনন কাজ বাস্তবায়ন ও তদারকি করবে তা অস্পষ্ট।

ময়ূর নদ বাঁচাও আন্দোলনের নেতা ও বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ জামান বলেন, নদীটি এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। আগের বার খনন কোনো কাজে আসেনি। নদীটি নামকাওয়াস্তে খনন করা হয়েছিল। ভালো করে খনন দরকার। তবেই সুফল মিলবে।

 


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/visionnewstoday/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471