ভোলা প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে নিহত ভোলার মো. হাবিবুর রহমানের (২৫) দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
আজ সোমবার সকাল ৯টায় তার নানাবাড়ি ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বালিয়া গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তিনি সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে কম্পিউটার অপারেটরের চাকরি করতেন।
অকালে হাবিবকে হারিয়ে শোকের মাতম চলছে তার পরিবারে। এদিকে শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় এমপি সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
হাবিবের মরদেহ বাড়িতে আনার সংবাদ পেয়ে তোফায়েল আহমেদের নির্দেশে তার ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মইনুল হোসেন বিপ্লব ছুটে যান নিহত হাবিবুর রহমানের বাড়িতে। তিনি নিহতের নামাজে জানাজায় অংশ নেন। পরে হাবিবুর রহমানের পরিবারকে তোফায়েল আহমেদের পক্ষ থেকে সমবেদনা জানান তার ছেলে মইনুল হোসেন বিপ্লব। তখন তিনি নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন এবং আগামীতেও তাদের পাশে থাকবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
স্বজনরা জানান, আজ থেকে ২৩ বছর আগে যখন হাবিবুর রহমানের বয়স মাত্র দুই বছর তখন তার বাবা সাহাবুদ্দিন মারা যান। সেই থেকে হাবিব তার মায়ের সঙ্গে দক্ষিণ দিঘলদীর বালিয়া গ্রামের ছিদ্দিক ফরাজির বাড়িতে (নানা বাড়ি) থাকতেন। এখানেই বড় হয়েছেন। পড়াশোনা করেছেন।
গত ৫ বছর আগে তিনি সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে কমিউটার অপারেটরের চাকরি পান।
হাবিবের মা জানান, শনিবার সকালে মোবাইল ফোনে কথা হয়েছিল। হাবিব মাকে বলেছিল, আগামী কোরবানির ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসবে। ঠিকই এসেছে কিন্তু লাশ হয়ে। এরপর কান্নায় ভেঙে পড়েন মা। আর কথা বলতে পারেননি।
হাবিবের নানা ছিদ্দিক ফরাজি জানান, ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে হাবিব তার কাছেই মানুষ হয়েছে। নাতিকে নিয়ে বড় স্বপ্ন ছিল নানার। ইতোমধ্যে নাতির জন্য নতুন ঘর তুলেছেন। অল্প কিছু কাজ বাকি ছিল। আশা ছিল এবার ঈদে হাবিব বাড়ি এলে তার বিয়ের কথা বলবেন। বিয়ের জন্য মেয়ে দেখবেন। আনন্দ হবে। সীতাকুণ্ডের দুর্ঘটনায় সব স্বপ্ন বিলীন হয়ে গেছে।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শনিবার রাতে লাগা আগুনের ফলে একটি কনটেইনারে রাসায়নিক থাকায় রাত পৌনে ১১টার দিকে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ৪ কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। আশপাশের বাড়িঘরের জানালার কাচ ভেঙে পড়ে। এতে এখন পর্যন্ত ৪১ জন নিহতের খবর নিশ্চিত করেছে প্রশাসন।
নিহতদের অধিকাংশের পরিচয় এখনো মেলেনি। সেই পরিচয় নিশ্চিত করতে চট্টগ্রাম মেডিকেলের সামনে চলছে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ। সোমবার দুপুর পর্যন্ত ১৬ পরিবারের ৩০ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ডিএনএর নমুনা সংগ্রহে চুল, রক্ত ও লালা নেয়া হচ্ছে স্বজনদের। তবে মরদেহগুলোর পরিচয় জানতে অপেক্ষা করতে হবে ১ মাস। এই সময়ে মরদেহগুলো ফ্রিজারে সংরক্ষণ করা হবে। রিপোর্ট পাওয়ার পর স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে মরদেহগুলো।