ঢাকা ০৯:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের নিষেধাজ্ঞাকে লোক দেখানো বলে মনে করেছেন অনেকে

আন্তর্জাতিকঃ  রাশিয়া পূর্ব ইউরোপের দোনেস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পর পাশ্চাত্য তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। পাশ্চাত্যের দেশগুলো মস্কোর এ ঘোষণার নিন্দা জানিয়ে একে মিনস্ক শান্তি চুক্তির লঙ্ঘন অভিহিত করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে এ নিষেধাজ্ঞা যতটা না কার্যকর তার চেয়ে বেশি লোক দেখানো। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এ পদক্ষেপের প্রথম প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এর মাধ্যমে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন শুরু করা হলো। এরই মধ্যে মস্কোর দুটি বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের খবর পাওয়া গেছে। মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়ার ভিইবি এবং পিএসবি এ দুটি ব্যাংককে নিষেধাজ্ঞা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে রাশিয়ার এ দুটি ব্যাংক সাধারণ বাজেট ও প্রতিরক্ষা খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ রুশ পার্লামেন্ট দুমার ৩৫১ সদস্য এবং এর বাইরে আরো ২৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা জোসেপ বোরেল বলেছেন, ইউক্রেনের দু’টি প্রজাতন্ত্রকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার রুশ পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় ইইউভুক্ত দেশগুলো সর্বসম্মতিক্রমে নিষেধাজ্ঞা আরোপের এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, দোনেস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের সঙ্গে ইউরোপের আর কোনো অর্থনৈতিক সম্পর্ক থাকবে না এমনকি রাশিয়াও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে প্রবেশ করতে পারবে না।

এদিকে, জার্মানির চ্যান্সেলর উলাভ শোলেতয রাশিয়া থেকে জার্মানি পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহের জন্য তৈরি প্রকল্প ‘নর্ড স্ট্রিম-২’ স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।  জার্মানির এ পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় রুশ জাতীয় নিরাপত্তা উচ্চ পরিষদের সচিব দিমিত্রি মেদভেদভ বলেছেন, ইউরোপে প্রতি এক হাজার ঘনমিটার গ্যাসের বিনিময়ে দুই হাজার ইউরো তাদেরকে অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পাশ্চাত্য এর আগেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছিল। এবারও তারা যেসব নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে তা অনেকটা লোক দেখানো হুমকি যা কিনা পূর্ব ইউক্রেনের ব্যাপারে রাশিয়ার নীতি পরিবর্তনে খুব একটা কাজে আসবে বলে মনে হয় না। কেননা রাশিয়ার জাতীয় অর্থনৈতিক চ্যানেল ও কেন্দ্রিয় ব্যাংকের কার্যক্রম এখনো বহাল রয়েছে এবং তেল, গ্যাস ও অন্যান্য পণ্য বিক্রি বাবদ পাওনা অর্থ দেশে আসছে। মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় রাশিয়ার যে দুটি ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা স্রেফ লোক দেখানো এবং প্রচারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা ব্যাংকিং লেনদেন বন্ধ হয়নি। এ ছাড়া ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়া থেকে এখনো গ্যাস কিনছে এবং অর্থও পরিশোধ করছে। এ অবস্থায় রাশিয়াও ইউরোপে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করবে না। কিন্তু রাশিয়ার বাণিজ্য ও ব্যাংক লেনদেন যদি বন্ধ করে দেয়া হয় এবং বাইরে থেকে কোনো অর্থ যদি না আসে তাহলে রাশিয়াও ইউরোপে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করে দেবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

অন্যদিকে দীর্ঘ মেয়াদে গ্যাস রপ্তানির বিষয়ে চীনের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে রাশিয়া। এ ছাড়া রাশিয়ার তেলেরও চাহিদা রয়েছে চীনে। এ অবস্থায় রাশিয়ার ব্যাংক খাতে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে ইউরোপও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেননা ইউরোপের ৪০ শতাংশ গ্যাসের চাহিদা পূরণ করে রাশিয়া। সে কারণে ইউরোপ রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারবে না।#

পার্সটুডে

ট্যাগস

রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের নিষেধাজ্ঞাকে লোক দেখানো বলে মনে করেছেন অনেকে

আপডেট সময় ০৫:৪৬:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২

আন্তর্জাতিকঃ  রাশিয়া পূর্ব ইউরোপের দোনেস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পর পাশ্চাত্য তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। পাশ্চাত্যের দেশগুলো মস্কোর এ ঘোষণার নিন্দা জানিয়ে একে মিনস্ক শান্তি চুক্তির লঙ্ঘন অভিহিত করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে এ নিষেধাজ্ঞা যতটা না কার্যকর তার চেয়ে বেশি লোক দেখানো। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এ পদক্ষেপের প্রথম প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এর মাধ্যমে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন শুরু করা হলো। এরই মধ্যে মস্কোর দুটি বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের খবর পাওয়া গেছে। মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়ার ভিইবি এবং পিএসবি এ দুটি ব্যাংককে নিষেধাজ্ঞা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে রাশিয়ার এ দুটি ব্যাংক সাধারণ বাজেট ও প্রতিরক্ষা খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ রুশ পার্লামেন্ট দুমার ৩৫১ সদস্য এবং এর বাইরে আরো ২৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা জোসেপ বোরেল বলেছেন, ইউক্রেনের দু’টি প্রজাতন্ত্রকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার রুশ পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় ইইউভুক্ত দেশগুলো সর্বসম্মতিক্রমে নিষেধাজ্ঞা আরোপের এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, দোনেস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের সঙ্গে ইউরোপের আর কোনো অর্থনৈতিক সম্পর্ক থাকবে না এমনকি রাশিয়াও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে প্রবেশ করতে পারবে না।

এদিকে, জার্মানির চ্যান্সেলর উলাভ শোলেতয রাশিয়া থেকে জার্মানি পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহের জন্য তৈরি প্রকল্প ‘নর্ড স্ট্রিম-২’ স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।  জার্মানির এ পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় রুশ জাতীয় নিরাপত্তা উচ্চ পরিষদের সচিব দিমিত্রি মেদভেদভ বলেছেন, ইউরোপে প্রতি এক হাজার ঘনমিটার গ্যাসের বিনিময়ে দুই হাজার ইউরো তাদেরকে অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পাশ্চাত্য এর আগেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছিল। এবারও তারা যেসব নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে তা অনেকটা লোক দেখানো হুমকি যা কিনা পূর্ব ইউক্রেনের ব্যাপারে রাশিয়ার নীতি পরিবর্তনে খুব একটা কাজে আসবে বলে মনে হয় না। কেননা রাশিয়ার জাতীয় অর্থনৈতিক চ্যানেল ও কেন্দ্রিয় ব্যাংকের কার্যক্রম এখনো বহাল রয়েছে এবং তেল, গ্যাস ও অন্যান্য পণ্য বিক্রি বাবদ পাওনা অর্থ দেশে আসছে। মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় রাশিয়ার যে দুটি ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা স্রেফ লোক দেখানো এবং প্রচারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা ব্যাংকিং লেনদেন বন্ধ হয়নি। এ ছাড়া ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়া থেকে এখনো গ্যাস কিনছে এবং অর্থও পরিশোধ করছে। এ অবস্থায় রাশিয়াও ইউরোপে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করবে না। কিন্তু রাশিয়ার বাণিজ্য ও ব্যাংক লেনদেন যদি বন্ধ করে দেয়া হয় এবং বাইরে থেকে কোনো অর্থ যদি না আসে তাহলে রাশিয়াও ইউরোপে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করে দেবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

অন্যদিকে দীর্ঘ মেয়াদে গ্যাস রপ্তানির বিষয়ে চীনের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে রাশিয়া। এ ছাড়া রাশিয়ার তেলেরও চাহিদা রয়েছে চীনে। এ অবস্থায় রাশিয়ার ব্যাংক খাতে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে ইউরোপও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেননা ইউরোপের ৪০ শতাংশ গ্যাসের চাহিদা পূরণ করে রাশিয়া। সে কারণে ইউরোপ রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারবে না।#

পার্সটুডে