ঢাকা ০৬:২৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২০১৫ বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়ান ডোহার্টি বেছে নিয়েছেন কাঠমিস্ত্রির পেশা

ক্রীড়া ডেস্ক: ক্রীড়াবিদদের জীবনের এই একটা দিক। যে খেলাটার সাধনা করে যান বছরের পর বছর, অবসর নেওয়ার পর সেই খেলাই অনেক সময় তাঁদের ছেড়ে যায়।

অস্ট্রেলিয়ার জাভিয়ের ডোহার্টিকেও যেভাবে ছেড়ে গেছে ক্রিকেট! ২০১৫ বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের অংশ ছিলেন সাবেক বাঁহাতি স্পিনার। কিন্তু বিশ্বজয়ের মাত্র ছয় বছরের মাথায়ই ক্রিকেটে আর তিনি নেই। এই ৩৯ বছর বয়সে এসে জীবনযাপনের ব্যয় মেটাতে ডোহার্টি বেছে নিয়েছেন কাঠমিস্ত্রির পেশা।

অবসরের পর কে কী করবেন, সে প্রশ্নে কেউ নামীদামি খেলোয়াড় হলে ভিন্ন কথা। কেউ কোচ, কেউ ধারাভাষ্যকার, কেউ-বা বিশ্লেষক হয়ে অবসরের পর দিব্যি পাদপ্রদীপের আলোয় থাকেন। সবার ভাগ্য তো আর এক হয় না! ডোহার্টিই যেমন, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৪ টেস্ট, ৬০ ওয়ানডে আর ১১ টি-টোয়েন্টি খেলা বাঁহাতি এই স্পিনারকে কজনই-বা মনে রেখেছে?

ডোহার্টি যে ২০১৫ বিশ্বকাপের অস্ট্রেলিয়া দলে ছিলেন, তাই–বা কজনের মনে থাকে?

ওই বিশ্বকাপে একটা ম্যাচই খেলেছিলেন ডোহার্টি, সিডনিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের সেই ম্যাচে ৭ ওভারে ৬০ রান দিয়েছিলেন, কোনো উইকেট পাননি। তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তো বটেই, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারেরই শেষ ম্যাচ হয়ে থেকেছে সেটি।

এরপর? ২০১৬-১৭ মৌসুমের পর ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া ডোহার্টি সময়ের আবর্তে এখন কাঠমিস্ত্রি। যে হাত স্পিন বোলিংয়ে প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টায় থাকত, সে হাত দিয়ে এখন যন্ত্রপাতি চালিয়ে কাঠের ওপর চলে কারুকাজ।

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের সংগঠন (এসিএ) সম্প্রতি একটা ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, সেখানে ডোহার্টি কথা বলেছেন নিজের পেশা নিয়ে। কীভাবে কাঠমিস্ত্রির কাজে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করা শুরু করেছেন, সেটিও ব্যাখ্যা করেছেন।

‘এ মুহূর্তে আমি আমার শিক্ষানবিশির মেয়াদের চার ভাগের তৃতীয় ভাগে আছি। আজ আমি বিল্ডিং সাইটে কাজ করার দিন, বেশ ভালোই লাগছে কাজটা করতে। বাইরে এসে নিজ হাতে কাজ করা, নতুন জিনিস শেখা…। ক্রিকেটের চেয়ে পুরো ভিন্ন কাজ’—ভিডিওতে বলেছেন ডোহার্টি।

এখন জীবনের একটা পরিকল্পনা করতে পারছেন, জীবিকার একটা পথ খুঁজে নিয়েছেন। কিন্তু এত দূর পর্যন্ত আসার পথটা মসৃণ মোটেও ছিল না। পদে পদে নিজেকে ঘিরে সংশয়, ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা ঘিরে ধরেছিল ডোহার্টিকে।

ভিডিওতে বলছিলেন, ‘ক্রিকেটের পাট চুকানোর পর আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করব। এর পরের ১২ মাসে সম্ভব সবকিছুই চেষ্টা করে দেখেছি, আমার দিকে যে সুযোগই এসেছে, সেটা লুফে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। অন্যের বাড়ির বাগানের কাজ করেছি, বিভিন্ন অফিসে কাজ করেছি, ক্রিকেটে টুকটাক কাজ করেছি, এরপর এখানে এলাম।’

কাঠমিস্ত্রির জীবনে আসার পথে ক্রিকেটারদের সংগঠন তাঁকে সাহায্য করেছে বলে জানালেন ডোহার্টি, ‘এসিএ যে রকম সাহায্য করেছে, সত্যি বলতে সেটা অবিশ্বাস্য! ক্রিকেটে দিন শেষ হওয়ার পর যে–কেউই বড় একটা ধাক্কা খায়।

এরপর কী করবেন, কী হবে সেটা নিয়ে চিন্তা আপনার মাথায় চলতে থাকে। টাকাপয়সা কোত্থেকে আসবে, জীবন কী রকম হবে, সে নিয়ে চিন্তা থাকে। সেদিক থেকে আপনাকে দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য প্লেয়ার ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজারকে পাশে পাওয়া বেশ বড় একটা সাহায্য!’

দিকনির্দেশনার পাশাপাশি অর্থসাহায্যও মিলেছে ডোহার্টির, ‘শিক্ষার ক্ষেত্রে অনুদান পেয়েছি, যেটা আমাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করেছে। জীবনের পরের ধাপে খরচের ক্ষেত্রে, আমার শিক্ষানবিশির ফির অনেকটা বহন করেছে সেটি।’ সব মিলিয়েই একসময়ের ক্রিকেটার ডোহার্টির কাঠমিস্ত্রি বনে যাওয়া।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের জীবন অবশ্য খুব একটা লম্বা ছিল না ডোহার্টির। ২০১০ সালে মেলবোর্নে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক, সে বছরই সিডনিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টের ব্যাগি গ্রিন ক্যাপ চাপে মাথায়। টি-টোয়েন্টি অভিষেক দুই বছর পর সিডনিতে ভারতের বিপক্ষে।

ক্যারিয়ারে টেস্ট খেলেছেন ৪টি, তাতে উইকেট পেয়েছেন মাত্র ৭টি। ওয়ানডেতে ৬০ ম্যাচে ৫৫ উইকেট, টি-টোয়েন্টিতে ১০ ম্যাচে উইকেট পেয়েছেন ১১টি। গত মার্চে অস্ট্রেলিয়ার লিজেন্ডস দলের অংশ হয়ে রোড সেফটি সিরিজ খেলতে ভারত সফরে গিয়েছিলেন ডোহার্টি।

ট্যাগস

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

২০১৫ বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়ান ডোহার্টি বেছে নিয়েছেন কাঠমিস্ত্রির পেশা

আপডেট সময় ০২:২২:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩১ মে ২০২১

ক্রীড়া ডেস্ক: ক্রীড়াবিদদের জীবনের এই একটা দিক। যে খেলাটার সাধনা করে যান বছরের পর বছর, অবসর নেওয়ার পর সেই খেলাই অনেক সময় তাঁদের ছেড়ে যায়।

অস্ট্রেলিয়ার জাভিয়ের ডোহার্টিকেও যেভাবে ছেড়ে গেছে ক্রিকেট! ২০১৫ বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের অংশ ছিলেন সাবেক বাঁহাতি স্পিনার। কিন্তু বিশ্বজয়ের মাত্র ছয় বছরের মাথায়ই ক্রিকেটে আর তিনি নেই। এই ৩৯ বছর বয়সে এসে জীবনযাপনের ব্যয় মেটাতে ডোহার্টি বেছে নিয়েছেন কাঠমিস্ত্রির পেশা।

অবসরের পর কে কী করবেন, সে প্রশ্নে কেউ নামীদামি খেলোয়াড় হলে ভিন্ন কথা। কেউ কোচ, কেউ ধারাভাষ্যকার, কেউ-বা বিশ্লেষক হয়ে অবসরের পর দিব্যি পাদপ্রদীপের আলোয় থাকেন। সবার ভাগ্য তো আর এক হয় না! ডোহার্টিই যেমন, অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৪ টেস্ট, ৬০ ওয়ানডে আর ১১ টি-টোয়েন্টি খেলা বাঁহাতি এই স্পিনারকে কজনই-বা মনে রেখেছে?

ডোহার্টি যে ২০১৫ বিশ্বকাপের অস্ট্রেলিয়া দলে ছিলেন, তাই–বা কজনের মনে থাকে?

ওই বিশ্বকাপে একটা ম্যাচই খেলেছিলেন ডোহার্টি, সিডনিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের সেই ম্যাচে ৭ ওভারে ৬০ রান দিয়েছিলেন, কোনো উইকেট পাননি। তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তো বটেই, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারেরই শেষ ম্যাচ হয়ে থেকেছে সেটি।

এরপর? ২০১৬-১৭ মৌসুমের পর ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া ডোহার্টি সময়ের আবর্তে এখন কাঠমিস্ত্রি। যে হাত স্পিন বোলিংয়ে প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টায় থাকত, সে হাত দিয়ে এখন যন্ত্রপাতি চালিয়ে কাঠের ওপর চলে কারুকাজ।

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের সংগঠন (এসিএ) সম্প্রতি একটা ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, সেখানে ডোহার্টি কথা বলেছেন নিজের পেশা নিয়ে। কীভাবে কাঠমিস্ত্রির কাজে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করা শুরু করেছেন, সেটিও ব্যাখ্যা করেছেন।

‘এ মুহূর্তে আমি আমার শিক্ষানবিশির মেয়াদের চার ভাগের তৃতীয় ভাগে আছি। আজ আমি বিল্ডিং সাইটে কাজ করার দিন, বেশ ভালোই লাগছে কাজটা করতে। বাইরে এসে নিজ হাতে কাজ করা, নতুন জিনিস শেখা…। ক্রিকেটের চেয়ে পুরো ভিন্ন কাজ’—ভিডিওতে বলেছেন ডোহার্টি।

এখন জীবনের একটা পরিকল্পনা করতে পারছেন, জীবিকার একটা পথ খুঁজে নিয়েছেন। কিন্তু এত দূর পর্যন্ত আসার পথটা মসৃণ মোটেও ছিল না। পদে পদে নিজেকে ঘিরে সংশয়, ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা ঘিরে ধরেছিল ডোহার্টিকে।

ভিডিওতে বলছিলেন, ‘ক্রিকেটের পাট চুকানোর পর আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করব। এর পরের ১২ মাসে সম্ভব সবকিছুই চেষ্টা করে দেখেছি, আমার দিকে যে সুযোগই এসেছে, সেটা লুফে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। অন্যের বাড়ির বাগানের কাজ করেছি, বিভিন্ন অফিসে কাজ করেছি, ক্রিকেটে টুকটাক কাজ করেছি, এরপর এখানে এলাম।’

কাঠমিস্ত্রির জীবনে আসার পথে ক্রিকেটারদের সংগঠন তাঁকে সাহায্য করেছে বলে জানালেন ডোহার্টি, ‘এসিএ যে রকম সাহায্য করেছে, সত্যি বলতে সেটা অবিশ্বাস্য! ক্রিকেটে দিন শেষ হওয়ার পর যে–কেউই বড় একটা ধাক্কা খায়।

এরপর কী করবেন, কী হবে সেটা নিয়ে চিন্তা আপনার মাথায় চলতে থাকে। টাকাপয়সা কোত্থেকে আসবে, জীবন কী রকম হবে, সে নিয়ে চিন্তা থাকে। সেদিক থেকে আপনাকে দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য প্লেয়ার ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজারকে পাশে পাওয়া বেশ বড় একটা সাহায্য!’

দিকনির্দেশনার পাশাপাশি অর্থসাহায্যও মিলেছে ডোহার্টির, ‘শিক্ষার ক্ষেত্রে অনুদান পেয়েছি, যেটা আমাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করেছে। জীবনের পরের ধাপে খরচের ক্ষেত্রে, আমার শিক্ষানবিশির ফির অনেকটা বহন করেছে সেটি।’ সব মিলিয়েই একসময়ের ক্রিকেটার ডোহার্টির কাঠমিস্ত্রি বনে যাওয়া।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের জীবন অবশ্য খুব একটা লম্বা ছিল না ডোহার্টির। ২০১০ সালে মেলবোর্নে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক, সে বছরই সিডনিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টের ব্যাগি গ্রিন ক্যাপ চাপে মাথায়। টি-টোয়েন্টি অভিষেক দুই বছর পর সিডনিতে ভারতের বিপক্ষে।

ক্যারিয়ারে টেস্ট খেলেছেন ৪টি, তাতে উইকেট পেয়েছেন মাত্র ৭টি। ওয়ানডেতে ৬০ ম্যাচে ৫৫ উইকেট, টি-টোয়েন্টিতে ১০ ম্যাচে উইকেট পেয়েছেন ১১টি। গত মার্চে অস্ট্রেলিয়ার লিজেন্ডস দলের অংশ হয়ে রোড সেফটি সিরিজ খেলতে ভারত সফরে গিয়েছিলেন ডোহার্টি।