স্টাফ রিপোর্টারঃ ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও, নওগাঁ হানাদার মুক্ত হয় ১৮ ডিসেম্বর। আর সেই থেকে ১৮ ডিসেম্বর নওগাঁ হানাদার মুক্ত দিবস পালিত হয়ে আসছে।
১৯৭১ সালের এদিন প্রায় দুই হাজার পাকিস্তানি সেনা যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল।
জানা যায়ৈঐদিন, নওগাঁ, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, হিলি, নবাবগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা ও নাটোর ছিল ইপিআর ৭ নম্বর সেক্টরের অধীনে। অধিনায়ক ছিলেন- প্রথম দিকে ক্যাপ্টেন গিয়াস, পরবর্তীতে মেজর নাজমুল হক এবং তার মৃত্যুর পর মেজর নুরুজ্জামান।
তৎকালিন সময়ে (সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী মরহুম) আব্দুল জলিল মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ পরিকল্পনা রচনা, তাদের ব্যয়ভার বহন ও রসদপত্র সরবরাহের বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক ও সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নওগাঁর দু’জন কৃতিসন্তান জালাল হোসেন চৌধুরী ও আখতার আহমেদ সিদ্দিককে সিএন্ডসি স্পেশাল প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
১৮ মার্চ কমান্ডিং অফিসার ছিলেন পাঞ্জাবী মেজর আকরাম বেগ। দু’জন ক্যাপ্টেনের মধ্যে একজন ছিলেন পাঞ্জাবী নাভেদ আফজাল, অন্যজন বাঙালি ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন। ২৫ মার্চের আগে বাঙালি মেজর নাজমুল হক নওগাঁয় ইপিআরের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে বদলি হয়ে আসেন। কিন্তু দেশের উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য রেখে তাকে চার্জ বুঝিয়ে দিতে অসম্মত হয়।
তবে কৌশলে ২৪ মার্চ মেজর আকরাম বেগ, ক্যাপ্টেন নাভেদ আফজাল এবং পশ্চিম পাঞ্জাবের ঝিলামের অধিবাসী নওগাঁ মহকুমা প্রশাসক নিসারুল হামিদকেও গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাররা বন্দি অবস্থায় স্বপরিবারে নিহত হন।
২২ এপ্রিল নওগাঁ পাক হানাদারদের দখলে চলে গেলে প্রায় সাড়ে ৭ মাস জেলার বিভিন্ন স্থানে হত্যা, লুট, অগ্নি সংযোগ, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপকর্ম চালায় তারা। ১০ ডিসেম্বর জেলার রানীনগর উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলার সান্তাহার হানাদার মুক্ত হয়।
ফলে পার-নওগাঁয় বসবাসকারী সকল অবাঙালিরা ১৪ ডিসেম্বর রাতের মধ্যে স্বপরিবারে নওগাঁ কেডি স্কুলে নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় নেয়। এ সময় হানাদার বাহিনী নওগাঁ ক্যান্টনমেন্ট এলাকা, সাবেক থানা চত্বর আদালত পাড়া ও এসডিও বাসভবন চত্বরে আত্মরক্ষামূলক প্রতিরক্ষা বেষ্টনী গড়ে তোলে।
১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর ঢাকায় আত্মসমর্পণ করার খবর শোনার পরও নওগাঁর পাকিস্তানি বাহিনী অত্মসমর্পণ করবে না বলে ঘোষণা দেয়। ফলে কমান্ডার জালাল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে পরদিন সকাল ৭টার দিকে প্রায় ৩৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা নওগাঁ শহরের দিকে অগ্রসর হন।
১৭ ডিসেম্বর এক শীতের সকালে মুক্তিবাহিনী জগৎসিংহপুর ও খলিশাকুড়ি গ্রামে আসতেই পাকিস্তানি সেনারা ভারি অস্ত্র ব্যবহার করে। সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উভয় পক্ষের প্রচণ্ড যুদ্ধে পাঁচ বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
১৮ ডিসেম্বর শনিবার সকালে বগুড়া থেকে অগ্রসরমান ভারতীয় মেজর চন্দ্র শেখর, পশ্চিম দিনাজপুর বালুরঘাট থেকে পিবি রায়ের নেতৃত্বে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী নওগাঁয় প্রবেশ করলে হানাদার বাহিনীর আর কিছুই করার ছিল না। ফলে সকাল ১০টার দিকে প্রায় দুই হাজার পাকসেনা নওগাঁ কেডি স্কুল থেকে পিএম গার্লস স্কুল, সরকারি গার্লস স্কুল, পুরাতন থানা চত্বর এবং এসডিও অফিস থেকে শুরু করে রাস্তার দু’পাশে মাটিতে অস্ত্র রেখে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে নতমস্তকে আত্মসমর্পণ করে।
তৎকালিন নওগাঁ মহকুমা প্রশাসক সৈয়দ মার্গুব মোরশেদ মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনীকে স্বাগত জানান। বর্তমান পুরাতন কালেক্টরেট (এসডি) অফিস চত্বরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। সেখানে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা পতাকার প্রতি সালাম জানিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন।