স্টাফ রিপোর্টারঃ ‘আমরা জেকেজি হেলথকেয়ারে গিয়ে করোনা পরীক্ষা করে প্রতারিত হয়েছি। তাই আমি বাদী হয়ে একটি মামলা করেছি। দোষীরা শাস্তি পাক এটা আমি চাই।
ড. সাবরিনাসহ মামলার অপর আসামিরা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তাদের বিচার হওয়া উচিত।’ কথাগুলো বলছিলেন মামলার বাদী কামাল হোসেন। সোমবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে কথা হয় তার সঙ্গে।
এর আগে সোমবার ডা. সাবরিনা আরিফকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে চারদিনের রিমান্ড চেয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (অপারেশন) হাসনাত খন্দকার।
অন্যদিকে সাবরিনার আইনজীবী সাইফুল ইসলাম তার জামিন চেয়ে আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমান তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার বাদী কামাল হোসেন বলেন, ‘আমি কল্যাণপুরের এক বাসার কেয়ারটেকার। আমার বাসার মালিক করোনায় আক্রান্ত হন।
তিনি আমাদের সাতজনকে করোনা পরীক্ষা করাতে বলেন। আমরা জেকেজি হেলথকেয়ারে গিয়ে করোনা পরীক্ষা করে প্রতারিত হয়েছি।
তাই আমি বাদী হয়ে একটি মামলা করেছি। দোষীরা শাস্তি পাক এটা আমি চাই। তারা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তাদের বিচার হওয়া উচিত।’
রোববার দুপুরে আলোচিত চিকিৎসক সাবরিনাকে তেজগাঁও বিভাগীয় উপ-পুলিশ (ডিসি) কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
যেভাবে এলো ডা. সাবরিনার নামঃ গতকাল জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিসি মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, ২২ জুন জেকেজির সাবেক গ্রাফিক্স ডিজাইনার হুমায়ুন কবীর হিরু ও তার স্ত্রী তানজীন পাটোয়ারীকে আটক করে পুলিশ।
হিরু আমাদের জানায়, সে ভুয়া করোনা সার্টিফিকেটের ডিজাইন তৈরি করতো। এই ভয়ানক তথ্য জানার পর আমরা তাকে জিজ্ঞেস করি এর সাথে কারা জড়িত।
সে স্বীকার করেছে, কোর্টেও ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে যে ভুয়া রিপোর্টের সাথে জেকেজি গ্রুপের লোকজন জড়িত। ডিসি হারুন বলেন, তখন জেকেজির সিইও আরিফুলসহ চারজনকে আটক করি।
গ্রেফতার সিইওকে আমরা জিজ্ঞেস করি, ‘এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কে?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরী।’ এরপর একে একে ছয়জনই এক উত্তর দিলেন।
সূত্র আরও জানায়, ঢাকা, নায়ায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ৪৪টি বুথ স্থাপন করেছিল সাবরিনা-আরিফ দম্পতির জেকেজি প্রতিষ্ঠান।
নমুনা সংগ্রহের জন্য মাঠকর্মী নিয়োগ দেয়া ছিল। তাদের হটলাইন নম্বরে রোগীরা ফোন দিলে মাঠকর্মীরা বাড়ি গিয়েও নমুনা সংগ্রহ করতেন।
আবার অনেককে জেকেজির বুথের ঠিকানা দেয়া হতো। এভাবে কর্মীরা প্রতিদিন গড়ে ৫০০ মানুষের নমুনা সংগ্রহ করতো।
পরে তাদের গুলশানের একটি ভবনের ১৫ তলার অফিসের একটি ল্যাপটপ থেকে ভুয়া সনদ দিত। ওই ল্যাপটপ থেকে জেকেজির কর্মীরা রাতদিন শুধু জাল রিপোর্ট তৈরির কাজ করতো।
প্রতিটি সনদের জন্য নেয়া হতো পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। বিদেশিদের কাছ থেকে নেয়া হতো ১০০ ডলার। যদিও শর্ত ছিল বিনামূল্যে-
নমুনা সংগ্রহ করে সরকার নির্ধারিত ল্যাবে পাঠাতে হবে। কিন্তু তারা সব ধরনের শর্তভঙ্গ করে পরীক্ষা ছাড়াই রিপোর্ট দিত।
এদিকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ডা. সাবরিনাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
রোববার (১২ জুলাই) মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত এক অফিস আদেশ জারি করা হয়।