ভারতে করোনায় সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয়ের স্থানে পরিণত হতে চলেছে সেদেশের সবচেয়ে ধনী শহর মুম্বাই। ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত মুম্বাইয়ে করোনার ভয়াবহ প্রকোপ চলছে। বর্তমানে ৪৭ হাজারের বেশি মানুষ সেখানে করোনায় আক্রান্ত, যা দেশটির মোট করোনা রোগীর এক চতুর্থাংশ।
করোনা রোগীতে উপচে পড়ছে মুম্বাই শহরের হাসপাতালগুলো। মর্গে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। তাই মৃতদেহ ওয়ার্ডেই বেডের ওপর রেখে দেয়া হয়েছে। তার পাশেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে আক্রান্ত রোগীদের।
স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে। হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে সারি সারি লাশ পড়ে আছে। শয্যা সঙ্কটে রোগীদের মেঝেতে ঘুমানোর নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। করোনাভাইরাস আক্রান্ত কিনা সে ব্যাপারে প্রমাণ দেখাতে না পারায় বিনা-চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন রোগীরা। দৈনিক নতুন নতুন ওয়ার্ড করা হচ্ছে। কিন্তু সন্ধ্যা হতে না হতেই সেসব ওয়ার্ড করোনা রোগীতে ভরে যাচ্ছে।
মুম্বাইয়ের হাসপাতালের কর্মীরা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা করোনা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ায় জনবলের অভাবে অন্যান্য রোগীদের চিকিৎসাসেবাও বন্ধ হয়ে গেছে।
করোনাভাইরাস মহামারির প্রাথমিক এপিসেন্টার নিউইয়র্ক এবং ইউরোপে থাকলেও বর্তমানে তা ঘুরছে ব্রাজিল এবং ভারতের দিকে। দুর্বল স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো এবং নিম্নমানের জীবনযাত্রার কারণে করোনাভাইরাসের উর্বর ভূমি হয়ে উঠছে ভারত। এরই মধ্যে করোনায় মৃতের সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে গেছে ভারত।
গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মুম্বাইয়ের সরকারি লোকমান্য তিলক হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে করোনাভাইরাসে মৃতদের দেহ পড়ে আছে। পাশের শয্যায় করোনা রোগীরা। এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ডিনকে সরিয়ে দেয়। সম্প্রতি মুম্বাইয়ের কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হাসপাতালের ওয়ার্ডে মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হাসপাতালের নার্স মাধুরী রামদাস গৈকার বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে লাশের স্তূপ হয়েছে। কারণ অনেক পরিবার সংক্রমণের ভয়ে মরদেহ নিতে অস্বীকার করেছে। আমরা লাশের সব কাগজপত্র প্রস্তুত করে রেখেছি। কিন্তু সেগুলো কেউই নিয়ে যাচ্ছে না। ভাইরাসটির কারণে চারপাশে তীব্র ভীতিকর পরিবেশ বিরাজ করছে, যা ভারতে নতুন একটি অস্পৃশ্য শ্রেণি তৈরি করেছে।’
সূত্র- হিন্দুস্তান টাইমস, এবিসি।