রাজনীতি ডেক্স :বিদ্যুতের বিল অস্বাভাবিক হলেও দেশ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার উন্নয়নের হাতির ভেতরের দাঁত যে নেই সেটি এখন স্পষ্ট। শেখ হাসিনার উন্নয়ন যে একটা ভোজবাজি তা এখন আরও দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। ফাঁপা উন্নয়নের তাস দিয়ে যে মানুষের মন জেতা যাবে না, সেটি তিনি বোঝার চেষ্টা করেননি।
মঙ্গলবার (৫ জুলাই) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখন এমনই যে, যে জনপদের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়া হয় সেটিকেই মনে হয় অন্ধকার গোরস্থান। পদ্মা সেতু উদ্বোধন নিয়ে যে কাণ্ড হলো তা আরব্য রজনীর আলিফ লায়লার কাহিনীকেও হার মানাবে। অধিকাংশ প্রিন্ট মিডিয়ার প্রথম পাতায় শেখ হাসিনার গুণকীর্তনের কাহিনী ছাপা হয়েছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় হরদম প্রচার করা হয়েছে শেখ হাসিনার লজ্জাহীন উচ্ছ্বাস। কিন্তু জাতি হিসেবে দেশবাসী লজ্জিত হয়েছে।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, সারাদেশে উন্নয়নের এত যে ঢাকঢোল বাজানো হলো তাহলে সারাদেশে কেন লোডশেডিংয়ে দুর্বিষহ পরিস্থিতি? বিদ্যুৎ নিয়ে নানা রংচংয়ের কথা বলা হয়েছে। জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে ১৫২টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। বেশিরভাগই এখন অচল হয়ে পড়ে আছে। এখন লোডশেডিংয়ের ভয়াবহ ছোবলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ রাজধানী শহরও বিপন্ন হয়ে পড়েছে। অথচ বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কুইক রেন্টাল স্থাপন করতে ভর্তুকি দিতে হয়েছে জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা। এই টাকা কীভাবে খরচ হচ্ছে সেটি নিয়ে কেউ যাতে প্রশ্ন তুলতে না পারে সেজন্য দায়মুক্তির আইন করা হয়েছে।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যুতের সীমাহীন ব্যর্থতার মূল কারণ- ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর আত্মীয় স্বজনের বেপরোয়া লুণ্ঠন। এরা নিজের দেশ ও সমাজকে এড়িয়ে আত্মীয় তোষণ করতে গিয়েই বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দিয়ে জনগণকে শোষণ করার পথ উন্মুক্ত করেছে। এ কারণে বিদ্যুতের বিল এখন অস্বাভাবিক, কিন্তু দেশ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে প্রশাসনের ভয়াবহ বৈকল্য ঘটেছে। নাৎসীবাদের জয়জয়কার সর্বত্র। আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ এক সুখরাজ্য নির্মাণ করেছে। সমগ্র শিক্ষার মূলে ছাত্রলীগের আগ্রাসনে এক ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
‘তাদের রাজনীতির কারণে এখন দেশে দুর্বৃত্তায়ন ও ইতরায়নের জয়জয়কার চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হলগুলোর বরাদ্দপত্র দেয় ছাত্রলীগ। সাধারণ ছাত্রদের হলে সিট পেতে হল প্রশাসনের নিকট নয় ছাত্রলীগের নেতাদের নিকট যেতে হয়।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, পদ্মা সেতুর জাঁকজমক উদ্বোধনে শুধু শত শত টয়লেট নির্মাণ করতেই কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। সম্প্রতি গণমাধ্যমের খবর- প্রবল বন্যায় বানভাসী মানুষের জন্য জনপ্রতি মাত্র ১৮ টাকা ও দেড় কেজি চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। এ যেন কর্মহীন অর্ধাহার-অনাহারক্লিষ্ট মানুষের প্রতি নির্মম পরিহাস। এই পরিস্থিতি সরকারের অসৎ অনাচারের একটি সুনিশ্চিত ভঙ্গি।
এটি এই শতকে সভ্যতার সংকটের এক দুর্বিষহ দৃষ্টান্ত। সরকারের এহেন আচরণ দুঃস্বপ্নের অতীত এক অভিঘাত। মানুষের দীর্ঘশ্বাস ঝরে পড়ছে কিন্তু তারা ক্ষমতার নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে এ ধরনের একটি অপরাধপ্রবণ কর্মসূচি নিয়েছে। সরকারের কারণেই এই বন্যা মানবতার অস্তিত্বকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের সর্বস্ব নিয়ে বানভাসী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। দেশব্যাপী বন্যাদুর্গত এলাকায় চলছে বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যাপক ত্রাণ কার্যক্রম।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।