যশোর প্রতিনিধি: করোনাকালীন সময়েও নিরাপত্তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছিল যশোরের বেনাপোল সীমান্ত পথে চোরাচালান। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রায় প্রতিদিন ঘটেছে মাদকসহ কোনো না কোনো পণ্যের পাচার।
২০২০ সালে বেনাপোল সীমান্ত থেকে শুধু যশোর ৪৯ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অভিযানে ১১৯ কোটি ৮২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা মূল্যের মাদক, স্বর্ণ, আগ্নেয়াস্ত্র, বৈদেশিক মুদ্রা, চন্দন কাঠ, কসমেটিক্স সহ বিভিন্ন ধরনের চোরাচালান পণ্য জব্দ হয়েছে।
এ সময় পাচারের সাথে জড়িত ৩০৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
যশোর ৪৯ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল সেলিম রেজা আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিজিবি সূত্রে জানায়, সীমান্ত নিরাপত্তা ও চোরাচালান রোধসহ সব ধরনের পাচার কার্যক্রম প্রতিহত করতে বছর ধরে বিজিবির নিয়মিত অভিযান পরিচালনা হয়ে আসছে।
গত বছরের ১ জানুয়ারি-৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিজিবির অভিযানে ৩৩ হাজার ৬৯৮ বোতল ফেনসিডিল, ৪১ কেজি ৭৭২ গ্রাম স্বর্ণ, সাত লাখ ৩৮ হাজার ইউএস ডলার, ২২ লাখ ৯২ হাজার ২০০ ভারতীয় রুপি, ১৩টি পিস্তল, ২৪টি ম্যাগাজিন, ৫৮ রাউন্ড গুলি, ৫৪৮ বোতল মদ, এক হাজার ২১২ পিস ইয়াবা ও ৯১৫ কেজি গাঁজা জব্দ করা হয়।
এছাড়া আটক হয় বিপুল পরিমাণ চন্দন কাঠ, গার্মেন্টস ও কসমেটিক্স সামগ্রী। স্থানীয় গ্রামবাসী মিলন খান বলেন, ২০১৮ সালে বেনাপোল সীমান্তের ৮.৩ কিলোমিটার বিজিবি-বিএসএফ যৌথভাবে ‘ক্রাইম ফ্রি জোন’ বলে ঘোষণা করলেও তার তেমন সুফল মেলেনি।
বিজিবি-বিএসএফের নজর এড়িয়ে প্রতিনিয়ত ঢুকছে মাদক, অস্ত্র, স্বর্ণসহ বিভিন্ন পণ্য। এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করতে হবে। বেনাপোলের সংবাদকর্মী আনিছুর রহমান বলেন, যেভাবে মাদক প্রবেশ করছে এবং প্রতিদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে উদ্ধার হচ্ছে এতে করে আমরা সন্তানদের নিয়ে শঙ্কিত।
ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রহমান বলেন, আইনের ফাঁকে মাদক ব্যবসায়ীরা ছাড়া পেয়ে আবার পাচার কাজে জড়িয়ে পড়ছে। এদের বিরুদ্ধে আরো কঠিন আইন হওয়া উচিত।
যশোর ৪৯ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল সেলিম রেজা জানান, বেনাপোলে চোরাচালান রোধ করা কঠিন। মূল হোতারা স্থানীয় অসহায় মানুষগুলোকে ব্যবহার করে পাচার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। ফলে সহজে মাদক প্রবেশ করে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের অভ্যন্তরে। তবে চোরাচালান প্রতিরোধে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে বিজিবি কাজ করছে।
উল্লেখ্য, যশোর এলাকায় ভারতের সাথে ৭০ কিলোমিটার সীমান্ত পথ রয়েছে। সেখানে সীমান্ত রক্ষায় ও চোরাচালান প্রতিরোধে কাজ করছে পাঁচ শতাধিক বিজিবি সদস্য।