ঢাকা ১০:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বদলে যাওয়া ভাসান চর রোহিঙ্গাদের অপেক্ষায়

বদলে যাওয়া ভাসান চর

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন সম্প্রতি সাংবদিকদের বলেন, ইউএনএইচসিআর এবং এনজিওগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের ওপর ‘চাপ রয়েছে’, যেন রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে পাঠানো না হয়।

এ বিষয়ে ই মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের কমিউনিকেশনস অফিসার লুইস ডোনোভান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভাসান চরে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে সার্বিক পরিস্থিতি বুঝতে এবং তাদের মানবিক চাহিদাগুলোর পাশাপাশি নিরাপত্তার ব্যবস্থাগুলো দেখতে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং এ বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকেও জানানো হয়েছে।

এক্ষেত্রে শর্তগুলো কেমন হবে তা সরকারকে বলা হয়েছে জানিয়ে লুইস ডোনোভান বলেন, তারা এখনও সরকারের উত্তরের অপেক্ষায় আছেন।

“এক্ষেত্রে জাতিসংঘের অবস্থান বরাবরের মতোই। আমরা বলে আসছি, স্থানান্তরের আগে ভাসান চরের জীবনমান ও নিরাপত্তার বিষয়ে অবশ্যই বিস্তারিত কারিগরি মূল্যায়ন হতে হবে। আর রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়টি হতে হবে স্বেচ্ছায়।”

কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে ভাসান চর ভালো?

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলে আসছেন, কক্সবাজার থেকে ভাসান চরে স্থানান্তরের পর রোহিঙ্গারা তুলনামূলকভাবে উন্নত জীবনযাত্রা পাবে।

আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্পের সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়েছে, কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে বাঁশ ও তারপুলিন দিয়ে তৈরি ঘর প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক বেশি ঝুঁকিতে থাকে। কিন্তু ভাসান চরে যে ক্লাস্টার নির্মাণ করা হয়েছে, তা অনেক বেশি সুরক্ষিত।

টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে ২০ জনের জন্য একটি টয়লেট এবং ৮০ জনের জন্য একটি গোসলখানা রয়েছে। অন্যদিকে ভাসান চরে ১১ জনের জন্য একটি টয়লেট এবং ১৬ জনের জন্য একটি গোসলখানা রয়েছে।

টেকনাফ ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় দিনে দিনে সেখানে পানির স্তর নিচে চলে যাচ্ছে, ভূগর্ভস্থ সুপেয় পানির অভাব দেখা দিচ্ছে। ভাসান চরে প্রচুর সুপেয় পানির ব্যবস্থা থাকায় সে সমস্যা নেই।

কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা নেই। কিছু রাস্তায় সড়ক বাতি রয়েছে। কিন্তু সিংহভাগ অঞ্চল অন্ধকারে থাকে বলে রাতে অপরাধের ঘটনাও বেশি ঘটে। অন্যদিকে ভাসান চরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকছে।

টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে অনেক রোহিঙ্গার বসবাস এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব থাকায় সবার কাছে পৌঁছানোও কঠিন হয়। ভাসান চরে সে সমস্যা হবে না বলে প্রকল্প কর্মকর্তাদের ভাষ্য।

টেকনাফে রোহিঙ্গা বসতির কারণে জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, বাড়ছে বায়ুদূষণ, ভূমিক্ষয়, পানি দূষণ। প্রকৃতি ও প্রতিবেশের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হচ্ছে। ভাসানচরে বসতির সঙ্গে ব্যাপক বনায়নের সুযোগ রয়েছে, ভূমিধস, বায়ুদূষণ কিংবা ভূমি ক্ষয়ের শঙ্কা নেই।

টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে রান্নার জন্য জ্বালানি কাঠ বা কয়লার ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু ভাসান চরে বায়োগ্যাস ও পরিবেশবান্ধব চুলার ব্যবস্থা রয়েছে।

কক্সবাজারে প্রায়ই মানব পাচারের শিকার হচ্ছে রোহিঙ্গারা, তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে মাদক চোরাচালানে। ভাসান চর সেসব দিক দিয়ে সুরক্ষিত।

ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের শিক্ষা ও চিকিৎসার পাশাপাশি সীমিত আকারে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ দেওয়া হবে, যে ব্যবস্থা কক্সবাজারে সেভাবে নেই।

 

রোহিঙ্গারা এই দ্বীপে সরাসরি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে না পারলেও বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করতে পারবে।

নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রকল্প এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে করা হয়েছে হাঁস, মুরগি, কবুতর, মাছ এবং ফল ও ফসলের খামার।দ্বীপ ঘুরে দেখা যায়, ভাসান চরে ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে মহিষের খামার, কয়েক হাজার মহিষ সেখানে চড়ে বেড়াচ্ছে।

স্থানীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ানোর জন্য দুগ্ধ খামার, ধান ও সবজি চাষ, হস্তশিল্প, নারীদের জন্য সেলাইয়ের কাজ এবং পর্যটনের প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে।

এসব প্রকল্পে মজুরির বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের কাজ দেয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানান।

ট্যাগস

বদলে যাওয়া ভাসান চর রোহিঙ্গাদের অপেক্ষায়

আপডেট সময় ০৯:৪৭:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর ২০২০

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন সম্প্রতি সাংবদিকদের বলেন, ইউএনএইচসিআর এবং এনজিওগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের ওপর ‘চাপ রয়েছে’, যেন রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে পাঠানো না হয়।

এ বিষয়ে ই মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের কমিউনিকেশনস অফিসার লুইস ডোনোভান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভাসান চরে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে সার্বিক পরিস্থিতি বুঝতে এবং তাদের মানবিক চাহিদাগুলোর পাশাপাশি নিরাপত্তার ব্যবস্থাগুলো দেখতে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং এ বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারকেও জানানো হয়েছে।

এক্ষেত্রে শর্তগুলো কেমন হবে তা সরকারকে বলা হয়েছে জানিয়ে লুইস ডোনোভান বলেন, তারা এখনও সরকারের উত্তরের অপেক্ষায় আছেন।

“এক্ষেত্রে জাতিসংঘের অবস্থান বরাবরের মতোই। আমরা বলে আসছি, স্থানান্তরের আগে ভাসান চরের জীবনমান ও নিরাপত্তার বিষয়ে অবশ্যই বিস্তারিত কারিগরি মূল্যায়ন হতে হবে। আর রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়টি হতে হবে স্বেচ্ছায়।”

কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে ভাসান চর ভালো?

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলে আসছেন, কক্সবাজার থেকে ভাসান চরে স্থানান্তরের পর রোহিঙ্গারা তুলনামূলকভাবে উন্নত জীবনযাত্রা পাবে।

আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্পের সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়েছে, কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে বাঁশ ও তারপুলিন দিয়ে তৈরি ঘর প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক বেশি ঝুঁকিতে থাকে। কিন্তু ভাসান চরে যে ক্লাস্টার নির্মাণ করা হয়েছে, তা অনেক বেশি সুরক্ষিত।

টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে ২০ জনের জন্য একটি টয়লেট এবং ৮০ জনের জন্য একটি গোসলখানা রয়েছে। অন্যদিকে ভাসান চরে ১১ জনের জন্য একটি টয়লেট এবং ১৬ জনের জন্য একটি গোসলখানা রয়েছে।

টেকনাফ ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় দিনে দিনে সেখানে পানির স্তর নিচে চলে যাচ্ছে, ভূগর্ভস্থ সুপেয় পানির অভাব দেখা দিচ্ছে। ভাসান চরে প্রচুর সুপেয় পানির ব্যবস্থা থাকায় সে সমস্যা নেই।

কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা নেই। কিছু রাস্তায় সড়ক বাতি রয়েছে। কিন্তু সিংহভাগ অঞ্চল অন্ধকারে থাকে বলে রাতে অপরাধের ঘটনাও বেশি ঘটে। অন্যদিকে ভাসান চরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকছে।

টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে অনেক রোহিঙ্গার বসবাস এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব থাকায় সবার কাছে পৌঁছানোও কঠিন হয়। ভাসান চরে সে সমস্যা হবে না বলে প্রকল্প কর্মকর্তাদের ভাষ্য।

টেকনাফে রোহিঙ্গা বসতির কারণে জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, বাড়ছে বায়ুদূষণ, ভূমিক্ষয়, পানি দূষণ। প্রকৃতি ও প্রতিবেশের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হচ্ছে। ভাসানচরে বসতির সঙ্গে ব্যাপক বনায়নের সুযোগ রয়েছে, ভূমিধস, বায়ুদূষণ কিংবা ভূমি ক্ষয়ের শঙ্কা নেই।

টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে রান্নার জন্য জ্বালানি কাঠ বা কয়লার ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু ভাসান চরে বায়োগ্যাস ও পরিবেশবান্ধব চুলার ব্যবস্থা রয়েছে।

কক্সবাজারে প্রায়ই মানব পাচারের শিকার হচ্ছে রোহিঙ্গারা, তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে মাদক চোরাচালানে। ভাসান চর সেসব দিক দিয়ে সুরক্ষিত।

ভাসান চরে রোহিঙ্গাদের শিক্ষা ও চিকিৎসার পাশাপাশি সীমিত আকারে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ দেওয়া হবে, যে ব্যবস্থা কক্সবাজারে সেভাবে নেই।

 

রোহিঙ্গারা এই দ্বীপে সরাসরি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে না পারলেও বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করতে পারবে।

নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রকল্প এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে করা হয়েছে হাঁস, মুরগি, কবুতর, মাছ এবং ফল ও ফসলের খামার।দ্বীপ ঘুরে দেখা যায়, ভাসান চরে ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে মহিষের খামার, কয়েক হাজার মহিষ সেখানে চড়ে বেড়াচ্ছে।

স্থানীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ানোর জন্য দুগ্ধ খামার, ধান ও সবজি চাষ, হস্তশিল্প, নারীদের জন্য সেলাইয়ের কাজ এবং পর্যটনের প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে।

এসব প্রকল্পে মজুরির বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের কাজ দেয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানান।