স্টাফ রিপোর্টার: ২৪ ঘন্টায় আরও ২৬ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে গেলো বাংলাদেশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত মারা যাওয়া ২৬ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মৃতের মোট সংখ্যা ৪ হাজার ৭৫৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
গতবছর ডিসেম্বরে যেখান থেকে এ ভাইরাস পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে, সেই চীনে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৭৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সর্বশেষ এই তথ্য হালনাগাদের পর জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের টালিতে বিশ্বে বাংলাদেশ উঠে এসেছে ২৮তম স্থানে।
চীনে প্রাদুর্ভাবের তিন মাস পর বাংলাদেশে নতুন করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী ধরা পড়েছিল ৮ মার্চ, তার ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। গত ৭ সেপ্টেম্বর সেই সংখ্যা সাড়ে চার হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, যা এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার বিশ্বে মোট মৃতের সংখ্যা ৯ লাখ ২৪ হাজার পেরিয়ে গেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে কেবল ভারত ও পাকিস্তানে মৃত্যুর সংখ্যা বাংলাদেশের চেয়ে বেশি, বৈশ্বিক তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা ভারতে মোট মৃত্যু ৭৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, পাকিস্তানে মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজারের বেশি মানুষের।
সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১ হাজার ৮১২ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩২ জনে।
গত ১৩ জুন শনাক্ত রোগীর সংখ্যাতেও চীনকে ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশ। ২৬ অগাস্ট দেশে শনাক্ত রোগী তিন লাখ পেরিয়ে যায়। এর মধ্যে ২ জুলাই ৪ হাজার ১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ শনাক্ত।
বিশ্বে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ২ কোটি ৯০ লাখ ছাড়িয়েছে। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় বাংলাদেশ আছে ১৫তম স্থানে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ২ হাজার ৫১২ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত এক দিনে। তাতে সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ২ লাখ ৪৩ হাজার ১৫৫ জন হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সারা দেশে গত এক দিনে ৯৪টি ল্যাবে ১৪ হাজার ২১৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ১৭ লাখ ৪২ হাজার ৬৯৬টি নমুনা।
২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৭১ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪০ শতাংশ।
গত এক দিনে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ২২ জন পুরুষ, ৪ জন নারী। তাদের মধ্যে ২৫ জন হাসপাতালে, ১ জন বাড়িতে মারা গেছেন।
তাদের মধ্যে ১০ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। ১১ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৩ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে এবং ২ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিল।
১৯ জন ঢাকা বিভাগের, ৪ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ২ জন রাজশাহী বিভাগের এবং ১ জন রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।
দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ৪ হাজার ৭৫৯ জনের মধ্যে ৩ হাজার ৭০৮ জনই পুরুষ এবং ১ হাজার ৫১ জন নারী।
তাদের মধ্যে ২ হাজার ৩৮৫ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ১ হাজার ২৯৯ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৬২০ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ২৮৪ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ১০৯ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ৪১ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এবং ২১ জনের বয়স ছিল ১০ বছরের কম।
এর মধ্যে ২ হাজার ৩১২ জন ঢাকা বিভাগের, ১ হাজার ৫ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৩২১ জন রাজশাহী বিভাগের, ৪০১ জন খুলনা বিভাগের, ১৮০ জন বরিশাল বিভাগের, ২১২ জন সিলেট বিভাগের, ২২৬ জন রংপুর বিভাগের এবং ১০২ জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।
সূত্র: কালের কন্ঠ