ঢাকা ০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানি কমলেও কমেনি ধরলা নদীর পানি

বন্যার পানিতে নিমজ্জিত বানভাসীরা পড়েছে চরম খাদ্য সংকটে

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ  কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানি কমলেও গত দুদিনের প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে হুহু করে ধরলা নদীর পানি বাড়ছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি।

এখনও ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি হ্রাস পেলেও নদী দুটোর পানিও বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, দুই থেকে তিন দিন পানি হ্রাস পাওয়া অব্যাহত থাকবে এবং আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ওতিস্তার পানি আবারো বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গত ২৪ঘন্টায় ধরলার সেতু পয়েন্টে পানি আরো বেড়ে বিপৎসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে এবং দুধকুমর নদীর পানি নুনখাওয়া পয়েন্টেও কমে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে, জেলার ৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৬টি ইউনিয়নের ৫৭৯টি গ্রাম বন্যার পানিতে নিমজ্জিত বানভাসীরা পড়েছে চরম খাদ্য সংকটে। বিশুদ্ধ পানি সংকটে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া ও অন্যান্য পানিবাহিত রোগ।

কোন কোন পরিবারের ঘর-বাড়ি থেকে পানি নেমে গেলে ও বেশির ভাগ পরিবারের ঘর-বাড়ি থেকে এখনও বন্যার পানি নেমে যায়নি। এ অবস্থায় হাতে কাজ ও ঘরে খাবার না থাকায় তাদের খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারন করেছে।

মাত্র দুই সপ্তাহেই ধরলা নদীর বন্যার পানির তোড়ে রাজারহাট উপজেলার বেশ কিছু এলাকা ভাঙতে শুরু করেছে। রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের জয়কুমর কামারপাড়া প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে চলছে ভাঙনের তান্ডব।

ভাঙনের তীব্রতা এতটা বেশি যে, ঘরবাড়ি সরানোর ফুরসত মিলছেনা এলাকাবাসীদের। পাশাপাশি গাছপালা, বাঁশঝাড় কাটার হিড়িক পড়েছে। তাও সব রক্ষা করা যাচ্ছেনা।

গ্রামের অর্ধশত যুবক স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়ার কাজ না করলে সবার বাড়ি ভেসে যেতো বানেরপানিতে।

খড়ের গাদা, টিউবয়েল বাঁশঝাড় সব ভেসে গেছে তীব্র স্রোতে সিভিল সার্জন ডা: হাবিবুর রহমান জানান, জেলার বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য সেবা দিতে ৮৫টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।

তাছাড়া ডায়রিয়া ও অন্য পানিবাহিত রোগে খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ সব ওষুধ দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোসহ জেলার জেনারেল হাসপাতালে বন্যার রোগীদের ডায়রিয়া চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান।

এদিকে, সড়ক ও বাঁধের উপর আশ্রিত মানুষের দুর্ভোগ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকে বন্যায় বাড়ি ছেড়ে পাকা রাস্তার ওপর এসে উঠেছেন। এতে শিশু ও মেয়ে সন্তান নিয়ে তারা বিপাকে পড়েছেন।

রাস্তার ওপর অরক্ষিতভাবে থাকতে গিয়ে একদিকে পানিতে পড়ে ডুবে যাওয়ার ভয় অপরদিকে পাকা ব্যস্ত রাস্তায় যানবাহণের দুর্ঘটনার ভয়ে অস্থির জীবন যাপন করছেন তারা।

জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, জেলায় এ বন্যায় নতুন করে আরো ফসল ডুবে ৯ হাজার ৭৮৯ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

 

 

 

 

 

ট্যাগস

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানি কমলেও কমেনি ধরলা নদীর পানি

আপডেট সময় ০২:০৩:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ জুলাই ২০২০

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ  কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানি কমলেও গত দুদিনের প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে হুহু করে ধরলা নদীর পানি বাড়ছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি।

এখনও ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি হ্রাস পেলেও নদী দুটোর পানিও বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, দুই থেকে তিন দিন পানি হ্রাস পাওয়া অব্যাহত থাকবে এবং আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ওতিস্তার পানি আবারো বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গত ২৪ঘন্টায় ধরলার সেতু পয়েন্টে পানি আরো বেড়ে বিপৎসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে এবং দুধকুমর নদীর পানি নুনখাওয়া পয়েন্টেও কমে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে, জেলার ৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৬টি ইউনিয়নের ৫৭৯টি গ্রাম বন্যার পানিতে নিমজ্জিত বানভাসীরা পড়েছে চরম খাদ্য সংকটে। বিশুদ্ধ পানি সংকটে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া ও অন্যান্য পানিবাহিত রোগ।

কোন কোন পরিবারের ঘর-বাড়ি থেকে পানি নেমে গেলে ও বেশির ভাগ পরিবারের ঘর-বাড়ি থেকে এখনও বন্যার পানি নেমে যায়নি। এ অবস্থায় হাতে কাজ ও ঘরে খাবার না থাকায় তাদের খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারন করেছে।

মাত্র দুই সপ্তাহেই ধরলা নদীর বন্যার পানির তোড়ে রাজারহাট উপজেলার বেশ কিছু এলাকা ভাঙতে শুরু করেছে। রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের জয়কুমর কামারপাড়া প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে চলছে ভাঙনের তান্ডব।

ভাঙনের তীব্রতা এতটা বেশি যে, ঘরবাড়ি সরানোর ফুরসত মিলছেনা এলাকাবাসীদের। পাশাপাশি গাছপালা, বাঁশঝাড় কাটার হিড়িক পড়েছে। তাও সব রক্ষা করা যাচ্ছেনা।

গ্রামের অর্ধশত যুবক স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ঘরবাড়ি সরিয়ে নেয়ার কাজ না করলে সবার বাড়ি ভেসে যেতো বানেরপানিতে।

খড়ের গাদা, টিউবয়েল বাঁশঝাড় সব ভেসে গেছে তীব্র স্রোতে সিভিল সার্জন ডা: হাবিবুর রহমান জানান, জেলার বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য সেবা দিতে ৮৫টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।

তাছাড়া ডায়রিয়া ও অন্য পানিবাহিত রোগে খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটসহ সব ওষুধ দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোসহ জেলার জেনারেল হাসপাতালে বন্যার রোগীদের ডায়রিয়া চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান।

এদিকে, সড়ক ও বাঁধের উপর আশ্রিত মানুষের দুর্ভোগ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকে বন্যায় বাড়ি ছেড়ে পাকা রাস্তার ওপর এসে উঠেছেন। এতে শিশু ও মেয়ে সন্তান নিয়ে তারা বিপাকে পড়েছেন।

রাস্তার ওপর অরক্ষিতভাবে থাকতে গিয়ে একদিকে পানিতে পড়ে ডুবে যাওয়ার ভয় অপরদিকে পাকা ব্যস্ত রাস্তায় যানবাহণের দুর্ঘটনার ভয়ে অস্থির জীবন যাপন করছেন তারা।

জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, জেলায় এ বন্যায় নতুন করে আরো ফসল ডুবে ৯ হাজার ৭৮৯ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।