স্টাফ রিপোর্টারঃ প্যাটেক ফিলিপ, রিশার্ড মিল, বিএমডব্লিউ ব্র্যান্ডের ঘড়ি; একেকটির দাম কোটি টাকার ওপরে। কিন্তু সেসব ঘড়ি বিক্রি করা হয়েছিল মাত্র দুই হাজার টাকায়!
বিএমডব্লিউ ব্র্যান্ডের ঘড়িটি একজনের কাছে বন্দক রেখে নেওয়া হয়েছিল মাত্র ১৫০০ টাকা। যে লোক বিক্রি করেছিল, সে জানতোই না এসব ঘড়ির এত দাম! জানা হয়তো সম্ভবও ছিল না।
কারণ সম্প্রতি গুলশানের বারিধারা পার্ক রোডের এক বাসা থেকে এগুলো চুরি করেছিল সে। বুধবার মিজান (২০) নামে সেই গ্রিল কাটা চোরকে গ্রেফতার করেছে গুলশান থানা পুলিশ।
গ্রেফতার করা হয়েছে উজ্জল মিয়া (২৬) ও তাজুল ইসলাম লিটন (২৮) নামে আরও দুই জনকে। তারা এসব চোরাই ঘড়ি কিনেছিল।
চুরি হওয়া পাঁচটি ঘড়ির মধ্যে দুটি ছিল স্বর্ণের। স্বর্ণ গলিয়ে ফেলায় তা উদ্ধার করা যায়নি ঠিকই। তবে স্বর্ণের ঘড়ি বিক্রি করা এক লাখ তিন হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুম বিল্লাহ রনি এসব তথ্য জানিয়েছেন।
গুলশান থানা পুলিশ জানায়, গত ৮ জুন রাতে গুলশানের বারিধারার পার্ক রোডের ৩২ নম্বর বাসার দোতালায় চুরি হয়। ব্যবসায়ী মামুন আহমেদ একাই থাকতেন ওই বাসায়।
দামি দামি ঘড়ি সংগ্রহের শখ ছিল তার। সকালে উঠে দেখেন পাশের রুম থেকে একটি আইফোন, পাঁচটি ঘড়ি চুরি হয়ে গেছে। প্রতিটি ঘড়ির মূল্য প্রায় কোটি টাকা করে।
জানালার গ্রিল কেটে চুরি করে নিয়ে গেছে অজ্ঞাত চোর। এ ঘটনায় তিনি গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন প্রথমে।
পরে গত ২৩ জুন একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ টানা অনুসন্ধান শেষে চুরি হওয়া পাঁচটি ঘড়ির মধ্যে তিনটি ও আইফোনটি উদ্ধার করেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই মাসুম বিল্লাহ রনি জানান, চুরির ঘটনার পরপরই তারা ওই বাসার চারদিকের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেন।
একটি ক্যামেরার ফুটেজে রাতে ওই বাসার পাশে এক তরুণকে হাটাহাঁটি করতে দেখা যায়। সেই তরুণের ছবিটি সংগ্রহ করে তাকে খুঁজতে থাকেন তারা। আশেপাশের থানার সোর্সদের সেই তরুণের ছবি দেখিয়ে শনাক্ত করার চেষ্টা করা হয় তাকে।
পরে এক সোর্সের মাধ্যমে মিজান নামে ওই তরুণকে শনাক্তের পর উত্তরখান এরাক মাজার রোড এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে চুরির কথা স্বীকার করে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতার করা মিজানকে বাকি দুটি ঘড়ির কথা জিজ্ঞাসা করলে সেগুলো তার কাছে রয়েছে বলে জানায়।
এগুলো একজনের কাছে দুই হাজার টাকা করে বিক্রি করেছিল। কিন্তু তখনও ক্রেতার কাছে ঘড়িগুলো হস্তান্তর করেনি। পরে পুলিশ প্যাটেক ফিলিপ ও রিশার্ড মিল ব্র্যান্ডের সেই ঘড়ি দুটিও উদ্ধার করেছে।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রিল কাটা চোর মিজান জানিয়েছে, ঘড়িগুলো এত দামের তা সে জানতোই না। শুধু স্বর্ণের ঘড়ি দুটি গলিয়ে বেশি দামে বিক্রি করা যেত বলে ধারণা করেছিল সে।
পুলিশ কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহ রনি বলেন, ‘মিজান একজন পেশাদার গ্রিল কাটা চোর। তার কাছ থেকে গ্রিল কাটার একটি যন্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে।
তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার সঙ্গে আরও কেউ চুরি করেছে কিনা এবং আগে সে কোনও কোনও বাসায় চুরি করেছিল সেগুলো জানার চেষ্টা চলছে।’