ঢাকা ০১:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যৌতুক না দেয়াই ছিল তার অপরাধ!

নির্যাতনের শিকার ঐ গৃহবধূ

টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ  টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সিলিমপুর ইউনিয়নের খারজানা গ্রামে যৌতুকের দাবিতে এক গৃহবধূকে খুঁটির সাথে বেধে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে গৃহবধূর স্বামী, তার ভাই ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে।

গৃহবধূ বর্তমানে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ব্যাপারে গৃহবধূর মা শুকরি বেগম বাদী হয়ে টাঙ্গাইল মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

মামলায় গৃহবধূর স্বামীকে প্রধান আসামী করে ছয় জনের নামে মামলা দেওয়া হয়। মামলার পর আসামীরা সকলেই পলাতক রয়েছেন। তবে অভিযুক্ত আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন টাঙ্গাইল মডেল থানার ওসি।

জানা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সিলিমপুর ইউনিয়নের খারজানা এলাকার মৃত বিশা মিয়ার ছেলে আশরাফের সাথে ওই নারীর বিয়ের পর তাদের সংসার ভালই চলছিলো।

কিন্তু সেই সুখ স্থায়ী হয়নি। কিছুদিন যেতে না যেতেই সংসারে অভাব অনটন দেখা দেয়। এরপর থেকেই বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক এনে দেয়ার কথা বলে প্রতিনিয়তই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায় পাষণ্ড স্বামী আশরাফ।

নির্যাতিতা গৃহবধূ যৌতুক এনে দিতে না পারায় একপর্যায়ে গত ৬ মাস পূর্বে তার দেড় মাসের শিশুকে ২০হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। তাতেও ক্ষান্ত হয়নি স্বামী।

গত শুক্রবার ( ১২ জুন ) গৃহবধূকে আবারও তার বাবার বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলেন। টাকা এনে দিতে অস্বীকার করায় পাষণ্ড স্বামী তার বড় ভাইসহ পরিবারের ৭-৮ জন সদস্যরা তাকে খুঁটির সাথে বেধে অমানুষিক নির্যাতন চালায়।

পরে স্থানীয় এসে বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে অবগত করেন। পরে চেয়ারম্যান স্থানীয়দের সাথে নিয়ে ওই নারীকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।

এ ঘটনায় ওই নারা মা শুকুরি বেগম বাদী হয়ে গত শনিবার ( ১৩ জুর ) টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

নির্যাতনের শিকার ওই নারী বলেন, আমার স্বামী মাঝে মাঝেই যৌতুকের টাকার জন্য আমাকে চাপ প্রয়োগ করে। আমার বাবা নাই।

মা কষ্ট করে দুই দফায় টাকা দিয়েছেন। দুইবার টাকা দেওয়ার পরও তিনি আবার টাকা দাবি করে। আমার বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে অস্বীকার করায় আমাকে মারধরের হুমকি দেয়।  পরে শুক্রবার আমাকে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে।

পেটানোর এক পর্যায়ে আমার বুকের মধ্যে একটা লাথি মারলে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। পরে বাঁশের খুঁটির সাথে বেধে লাঠি আমার স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা আমাকে বেধড়ক মারধর করে।

তিনি আরও বলেন, এর আগে টাকার জন্য আমার ছয় মাস বয়সী এক সন্তান বিক্রি করেছি

এতো টাকা দেওয়ার পরও তার টাকা প্রয়োজন। আমি আমার স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা যারা জড়িত ছিলো তাদের কঠিন শাস্তি দাবি করছি।

ওই গ্রামের একাধিক ব্যক্তি বলেন, টাকার জন্য ও নারীকে এর আগেও তার স্বামী তালাক দিয়েছিলো। তালাকের পর কাবিনের টাকা দিতে না পাড়ায় পুনরায় ওই নারীকেই বিয়ে করেন আশরাফ।

তারপরও আশরাফের টাকার খায়েস মিটেনি। টাকার জন্য তার স্বামীসহ তার পরিবারের সদস্যরা খুঁটিতে বেধে মারধর করেছেন। যারা এই মারধরের সাথে জড়িত তাদের শাস্তি দাবি করেন এলাকাবাসী।

টাঙ্গাইল সদর সিলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদেক আলী বলেন, খবর পেয়ে আমি তাৎক্ষনিক পুলিশকে অবগত করি।

এ ন্যাক্কার জনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। ওই নারীকে তার স্বামী মারতে পারে। কিন্তু তার বড় ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী মারধর করেছে এটা মেনে নেওয়ার মতো নয়। আমি এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

টাঙ্গাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন বলেন, যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে খুঁটিতে বেধে তার স্বামী ও আত্মীয় স্বজনেরা বেধড়ক মারধর করার ঘটনায় মামলা হয়েছে। প্রকৃত আসামীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।

 

ট্যাগস
সর্বাধিক পঠিত

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

যৌতুক না দেয়াই ছিল তার অপরাধ!

আপডেট সময় ০৬:২১:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুন ২০২০

টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ  টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সিলিমপুর ইউনিয়নের খারজানা গ্রামে যৌতুকের দাবিতে এক গৃহবধূকে খুঁটির সাথে বেধে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে গৃহবধূর স্বামী, তার ভাই ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে।

গৃহবধূ বর্তমানে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ব্যাপারে গৃহবধূর মা শুকরি বেগম বাদী হয়ে টাঙ্গাইল মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

মামলায় গৃহবধূর স্বামীকে প্রধান আসামী করে ছয় জনের নামে মামলা দেওয়া হয়। মামলার পর আসামীরা সকলেই পলাতক রয়েছেন। তবে অভিযুক্ত আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন টাঙ্গাইল মডেল থানার ওসি।

জানা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সিলিমপুর ইউনিয়নের খারজানা এলাকার মৃত বিশা মিয়ার ছেলে আশরাফের সাথে ওই নারীর বিয়ের পর তাদের সংসার ভালই চলছিলো।

কিন্তু সেই সুখ স্থায়ী হয়নি। কিছুদিন যেতে না যেতেই সংসারে অভাব অনটন দেখা দেয়। এরপর থেকেই বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক এনে দেয়ার কথা বলে প্রতিনিয়তই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায় পাষণ্ড স্বামী আশরাফ।

নির্যাতিতা গৃহবধূ যৌতুক এনে দিতে না পারায় একপর্যায়ে গত ৬ মাস পূর্বে তার দেড় মাসের শিশুকে ২০হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। তাতেও ক্ষান্ত হয়নি স্বামী।

গত শুক্রবার ( ১২ জুন ) গৃহবধূকে আবারও তার বাবার বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলেন। টাকা এনে দিতে অস্বীকার করায় পাষণ্ড স্বামী তার বড় ভাইসহ পরিবারের ৭-৮ জন সদস্যরা তাকে খুঁটির সাথে বেধে অমানুষিক নির্যাতন চালায়।

পরে স্থানীয় এসে বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে অবগত করেন। পরে চেয়ারম্যান স্থানীয়দের সাথে নিয়ে ওই নারীকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।

এ ঘটনায় ওই নারা মা শুকুরি বেগম বাদী হয়ে গত শনিবার ( ১৩ জুর ) টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

নির্যাতনের শিকার ওই নারী বলেন, আমার স্বামী মাঝে মাঝেই যৌতুকের টাকার জন্য আমাকে চাপ প্রয়োগ করে। আমার বাবা নাই।

মা কষ্ট করে দুই দফায় টাকা দিয়েছেন। দুইবার টাকা দেওয়ার পরও তিনি আবার টাকা দাবি করে। আমার বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে অস্বীকার করায় আমাকে মারধরের হুমকি দেয়।  পরে শুক্রবার আমাকে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে।

পেটানোর এক পর্যায়ে আমার বুকের মধ্যে একটা লাথি মারলে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। পরে বাঁশের খুঁটির সাথে বেধে লাঠি আমার স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা আমাকে বেধড়ক মারধর করে।

তিনি আরও বলেন, এর আগে টাকার জন্য আমার ছয় মাস বয়সী এক সন্তান বিক্রি করেছি

এতো টাকা দেওয়ার পরও তার টাকা প্রয়োজন। আমি আমার স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা যারা জড়িত ছিলো তাদের কঠিন শাস্তি দাবি করছি।

ওই গ্রামের একাধিক ব্যক্তি বলেন, টাকার জন্য ও নারীকে এর আগেও তার স্বামী তালাক দিয়েছিলো। তালাকের পর কাবিনের টাকা দিতে না পাড়ায় পুনরায় ওই নারীকেই বিয়ে করেন আশরাফ।

তারপরও আশরাফের টাকার খায়েস মিটেনি। টাকার জন্য তার স্বামীসহ তার পরিবারের সদস্যরা খুঁটিতে বেধে মারধর করেছেন। যারা এই মারধরের সাথে জড়িত তাদের শাস্তি দাবি করেন এলাকাবাসী।

টাঙ্গাইল সদর সিলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদেক আলী বলেন, খবর পেয়ে আমি তাৎক্ষনিক পুলিশকে অবগত করি।

এ ন্যাক্কার জনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। ওই নারীকে তার স্বামী মারতে পারে। কিন্তু তার বড় ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী মারধর করেছে এটা মেনে নেওয়ার মতো নয়। আমি এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

টাঙ্গাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন বলেন, যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে খুঁটিতে বেধে তার স্বামী ও আত্মীয় স্বজনেরা বেধড়ক মারধর করার ঘটনায় মামলা হয়েছে। প্রকৃত আসামীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।