নওগাঁ,স্টাফ রিপোর্টারঃ পরিবার নিয়ে ঈদের মার্কেট করতে বেতন-বোনাসের জন্য অপেক্ষা করেন চাকরিজীবীরা। বোনাসের টাকা দিয়ে অনেকে পরিবারের সবার সখ-ইচ্ছা পূরণ করে থাকেন।
আবার অনেক পরিবারের কথা না ভেবে মানবিক দিক বিবেচনা করে অসহায়দের মুখে হাসি ফুটিয়ে থাকেন। তেমনি একজন মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা হাফিজুল ইসলাম।
তিনি নওগাঁর রানীনগর উপজেলার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) পদে কর্মরত। এ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা একডালা ইউনিয়নে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ হিসেবে গত আড়াই বছর ধরে দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।
অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ হিসেবে একডালা ইউনিয়নে দায়িত্ব পালনের সময় এলাকায় বেশ পরিচিত পেয়েছেন এএসআই হাফিজুল ইসলাম।
এলাকার অসহায় মানুষের সঙ্গে মিশেছেন। তাদের অসহায়ত্ব বুঝেছেন। করোনাভাইরাসের এই ক্রান্তিলগ্নে সারাদেশের মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে।
থমকে গেছে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা। বিগত বছরগুলোতে মানুষ সুন্দরভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারলেও এবার হয়তো সেটা সম্ভব না।
আর এমন চিন্তা থেকে এলাকার ৮০টি হতদরিদ্র পরিবারকে শনিবার (২৩ মে) ঈদুল ফিতরের বোনাসের টাকা থেকে ঈদ সামগ্রী দিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
তার বোনাসের টাকা থেকে ঈদের উপহার পেয়ে খুশি এলাকার অসহায়রা। তেমনি তার বোনাসের টাকা থেকে অসহায়দের সামান্য সহযোগিতা করতে পেরে মনের দিক থেকে তৃপ্তি পেয়েছেন বলে জানান এএসআই হাফিজুল ইসলাম।
এলাকার ভ্যানচালক রঞ্জু বলেন, ইতোপূর্বে অনেক স্যার এ ক্যাম্পে এসেছেন, কিন্তু এমন মানবিক পুলিশ দেখিনি। তিনি তার বোনাসের টাকা থেকে আমাদের ঈদের উপহার দিয়েছেন।
আমরা অনেক খুশি পুলিশের কাছ থেকে উপহার পেয়ে। অন্তত ঈদের দিনে পরিবার নিয়ে মিষ্টি মুখ করতে পারবো।
এএসআই হাফিজুল ইসলাম বলেন, এই এলাকায় দুই বছর তিন মাসের মতো হলো দায়িত্ব পালন করছি। এ সুবাদে এলাকার অনেক মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে।
প্রতি বছর বোনাসের টাকা থেকে পরিবারের সবার ঈদের পোশাক থেকে শুরু করে বিভিন্ন ঈদ কেন্দ্রিক চাহিদা পূরণ করা হয়। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন।
বোনাসের টাকা কিছুদিন আগে পেয়েছি। এরপর পরিবারকে ঈদের বাজার করার জন্য টাকা টা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাবা-মা ও স্ত্রীর কথা যে, এই করোনাভাইরাসের দুর্যোগের সময় আমাদের কোনো ঈদ বা আনন্দ করার প্রয়োজন হবে না।
তুমি টাকাগুলো অসহায়দের দিয়ে সহযোগিতা করতে পারো। তবে সাত বছরের আমার এক মেয়ে আছে। সে বায়না ধরেছিল জামা কেনার জন্য।
তার আবদার পূরনে জামা কিনার জন্য কিছু টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। এরপরও দেখা যায় আমার কাছে প্রায় ১০ হাজার টাকা থেকে যায়।
তিনি আরও বলেন, বোনাসের বেঁচে যাওয়া ওই টাকা থেকে আমার কর্মস্থলের অসহায় পরিবারগুলোকে সাহায্য করার জন্য মনস্থির করলাম।
ভাবছিলাম টাকাও অল্প। সাধ্যের মধ্যে কিছু একটা করতে হবে। অসহায় পরিবারগুলো যেন ঈদের দিনে মিষ্টি মুখ করতে পারে এ জন্য এলাকার ৮০টি পরিবারকে লাচ্ছা সেমাই, চিনি, বাদাম, কিচমিস ও গুঁড়ো দুধসহ ঈদ সামগ্রী দিয়েছি। তারা অনেক খুশি হয়েছে আমার সামান্য এ উপহার পেয়ে।
এএসআই হাফিজুল ইসলাম সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চরমাইঝাইল গ্রামের আয়নাল হকের ছেলে।