আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ এই মহামারি ঠেকাতে বিভিন্ন দেশে লকডাউন চলছে। এরইমধ্যে এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে বাড়ানো হয়েছে লকডাউনের মেয়াদ। গবেষকদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশ ভারতে আগামী মে মাসের মাঝামাঝিতে করোনাভাইরাস আরও ভয়াবহ হবে।
ইতোমধ্যে ভারতের মুম্বাইয়ে অবস্থিত এশিয়ার বৃহত্তম ধারাভি বস্তিতে থাবা বসিয়েছে করোনাভাইরাস। গবেষকরা বলছেন, ধারাভি থেকে পরমাণু বোমার মতো বিস্ফোরণ ঘটাবে করোনা। ধারাভি বস্তিতে একের পর এক করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলছে। আর সেই সঙ্গেই সংশয় তৈরি হচ্ছে, ধারাভি কি আদতে ভারতের করোনাভাইরাস সংক্রমণের অন্যতম হটস্পট হতে চলেছে?
হবে নাই বা কেন? গোটা এশিয়ার বৃহত্তম বস্তি হিসেবেই পরিচিত মুম্বাইয়ের ধারাভি। মাত্র দুই বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত অজস্র ছোট ছোট ঘরে বাস করেন সাত লাখেরও বেশি মানুষ। রয়েছে একতলা ও বহুতল ঘর, অজস্র সরু গলি ও কমন টয়লেট। সব মিলিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা একরকম অসম্ভব ব্যাপার এখানে।
সেইসঙ্গেই এখানে রয়েছে ছোট ও মাঝারি কয়েকটি গার্মেন্ট, চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ, জুয়েলারি কারখানা। এগুলোতে কাজ করেন মূলত অভিবাসী শ্রমিকরা, যারা বাস করেনও একই এলাকাতে। আচমকা লকডাউনের কারণে বস্তির অনেক বাসিন্দারই এমন সঞ্চয় নেই, যা দিয়ে দিনযাপন করতে পারেন। অন্য কোথাও চলে যাওয়া তো দূরের কথা। সরকারি সহযোগিতার দিকে চেয়ে থাকা ছাড়া উপায় নেই তাদের।
শুধু তাই নয়, মুম্বাইয়ের স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য বলছে, এই বস্তিটিতে অনেক টিবি রোগী রয়েছেন। প্রত্যেক মৌসুমে এখানে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার মতো রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় নিয়ম করে। সেখানে করোনাভাইরাসের মতো এত ছোঁয়াচে একটি সংক্রমণ থেকে কী করে মানুষ রক্ষা পাবে, তা নিয়ে অনেকেই কার্যত হতাশ। অনেকেই সন্দেহ করছেন, সংক্রমণ ছড়িয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। পর্যাপ্ত টেস্ট হচ্ছে না বলে হয়তো ধরা পড়ছে না।
যদিও স্থানীয় ওয়ার্ডের কাউন্সিল চেয়ারম্যান বসন্ত নাকাশে বলেন, ধারাভিতে যত জন আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গেছে, তাদের সকলেরই বাড়ি বস্তির একপাশে। মাঝামাঝি নয়। যদিও এই যুক্তি মেনে সংক্রমণ ছড়াবে না, এমন তত্ত্ব মোটেও স্বীকার করছেন না বিশেষজ্ঞরা।
চেয়ারম্যানের আরও দাবি, সবরকম পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। স্যানিটাইজার স্প্রে করা হচ্ছে। কিন্তু এখানকার মানুষ লকডাউনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না। অনেকেই ঘোরাঘুরি করছেন।
ধারাভিতে বহু বছর ধরে সেবার কাজ করছেন বেসরকারি চিকিৎসক ডঃ বিকাশ অসওয়াল। তিনি বলেন, করোনার বিস্তার যেভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে ধারাভি টাইমবোমা হয়ে ওঠা সময়ের অপেক্ষা কেবল। কারণ খুব কম করেও ১৪ দিনের আগে অসুখের লক্ষণ দেখা যাবে না। আর এই সময়টায় যে অসুখ আরও কত গভীরে ছড়িয়ে পড়বে, তা কেউ জানে না। তাই এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ শৃঙ্খলার সঙ্গে লকডাউন মেনে চলা উচিত।
এই পরিস্থিতিতে ধারাভিকে করোনা সংক্রমণের সম্ভাব্য হটস্পট বলেই চিহ্নিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। গায়ে গায়ে ঘেঁষে থাকা সারসার বাড়ি এবং কমন টয়লেট ব্যবস্থায় সংক্রমণ এড়ানো কার্যত অসম্ভব। যদিও সরকারি ভাবে স্যানিটাইজ়ার স্প্রে করা হচ্ছে, মানুষদের সচেতন করার চেষ্টাও করা হচ্ছে, কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতিকে আশাপ্রদ বলা যাচ্ছে না কোনও ভাবেই।