ঢাকা ০৮:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতের উচিত বাংলাদেশের নতুন বাস্তবতা উপলব্ধি করা: উপদেষ্টা মাহফুজ

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, ভারতের উচিত বাংলাদেশের নতুন বাস্তবতা উপলব্ধি করা এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে বাংলাদেশে জুলাই অভ্যুত্থান এবং ছাত্র-জনতার গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে স্বীকৃতি দেওয়া। এটি দিয়েই শুরু করতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থানকে পাশ কাটিয়ে নতুন বাংলাদেশের ভিত রচনা করা হলে তা দুই দেশের সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হবে।

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ৬টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি এসব কথা লেখেন।ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ভারতের উচিত পোস্ট-৭৫ প্লেবুক পাল্টে বাংলাদেশের নতুন বাস্তবতা উপলব্ধি করা। এটা ৭৫-পরবর্তী পরিস্থিতি নয়।মাহফুজ আলম লেখেন, জুলাই বিপ্লব ছিল একটি গণতান্ত্রিক, প্রজন্মভিত্তিক ও দায়িত্বশীল সংগ্রাম। আর এই সংগ্রাম চলবে দীর্ঘ সময় ধরে।বাংলাদেশি জনগণ আগের মতো নেই, তারা এখন ঐক্যবদ্ধ ও মর্যাদাবান। তারা মরার আগ পর্যন্ত তাদের মর্যাদার জন্য লড়াই করবে।

তিনি আরও লেখেন, বাংলার এই অংশে ভারতপ্রেমী বা ভারতীয় মিত্ররা ভাবছে যে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যাবে এবং জুলাই বিপ্লব এবং ফ্যাসিবাদীদের নৃশংসতাকে এড়িয়ে গেলে তাদের কিছুই হবে না। এটা একটা ভুল ধারণা। মানুষ সব দেখছে!ভারতীয় সংস্থা জুলাই বিপ্লবকে কিছু জঙ্গি, হিন্দু-বিরোধী, এবং ইসলামপন্থীদের ক্ষমতা দখল হিসাবে চিত্রিত করার চেষ্টা করেছে- উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিন্তু তাদের অপপ্রচার ও উসকানি ব্যর্থ হচ্ছে।উপদেষ্টা মাহফুজ আলম লেখেন, দিল্লি না ঢাকা? ঢাকা, ঢাকা! ও স্বদেশ না শাহাদাত!- এই শ্লোগানগুলো বাংলাদেশকে একক অঙ্গে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য এদেশের প্রতিটি কোণে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

তিনি সতর্ক করে লেখেন, আর ভারত যেন এই ঐক্যবদ্ধ, মর্যাদাবান ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে তার শত্রু না করে।দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর বাংলাদেশের জনগণ বিনা বাধায় গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করছে-উল্লেখ করে তিনি বলেন, সত্য এসেছে… মিথ্যা ধ্বংস হবে। চিরকাল!উপদেষ্টা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে লেখেন, ৭১-এর পর রাষ্ট্র হিসেবে আমরা ব্যর্থ হয়েছিলাম, কিন্তু এবার নয়! আল্লাহ ভরসা!বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই এক ধরনের টানাপড়েন চলছে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে।

থমকে আছে ভারতীয় ভিসা কার্যক্রমও। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশ এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিস্থিতি নিয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশে এই টানাপোড়েনের ব্যাপারটি স্পষ্ট হয় আরও। এর মধ্যেই বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার ঘিরে নতুন মাত্রা পায় দু’দেশের মধ্যকার তিক্ততা।সবশেষ জাতীয় পতাকার অবমাননা এবং আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলায় উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডাক পড়ে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার। এরপরই ঢাকা ও দিল্লি দু’পক্ষ থেকেই ‘সম্পর্ক স্বাভাবিক’ করার বার্তা এসেছে।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা করে ‘হিন্দু সংগ্রাম সমিতি’। সেখানে ভাঙচুরের পাশাপাশি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় হামলাকারীরা। এ ছাড়া বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া আরও কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ করে ভারতীয় বিভিন্ন সংগঠন। বাংলাদেশবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেয় তারা। বিক্ষোভ হয়েছে মুম্বাই সহকারী হাইকমিশনের সামনেও।

ভারতের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সাম্প্রতিক হামলা ও বিক্ষোভের ঘটনা নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে খোদ দিল্লিও। তাদের অভিমত, আগরতলায় যা হয়েছে, তা মোটেও ভালো হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চায় ভারত। এরই মধ্যে বিবৃতি দিয়ে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশের পাশাপাশি বাংলাদেশি হাইকমিশনগুলোর নিরাপত্তা বাড়িয়েছে ভারত সরকার।

 

ট্যাগস
সর্বাধিক পঠিত

আলিশান চাল, নওগাঁ

বিজ্ঞাপন দিন

ভারতের উচিত বাংলাদেশের নতুন বাস্তবতা উপলব্ধি করা: উপদেষ্টা মাহফুজ

আপডেট সময় ১১:৪৭:২৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, ভারতের উচিত বাংলাদেশের নতুন বাস্তবতা উপলব্ধি করা এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে বাংলাদেশে জুলাই অভ্যুত্থান এবং ছাত্র-জনতার গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে স্বীকৃতি দেওয়া। এটি দিয়েই শুরু করতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থানকে পাশ কাটিয়ে নতুন বাংলাদেশের ভিত রচনা করা হলে তা দুই দেশের সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হবে।

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ৬টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি এসব কথা লেখেন।ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ভারতের উচিত পোস্ট-৭৫ প্লেবুক পাল্টে বাংলাদেশের নতুন বাস্তবতা উপলব্ধি করা। এটা ৭৫-পরবর্তী পরিস্থিতি নয়।মাহফুজ আলম লেখেন, জুলাই বিপ্লব ছিল একটি গণতান্ত্রিক, প্রজন্মভিত্তিক ও দায়িত্বশীল সংগ্রাম। আর এই সংগ্রাম চলবে দীর্ঘ সময় ধরে।বাংলাদেশি জনগণ আগের মতো নেই, তারা এখন ঐক্যবদ্ধ ও মর্যাদাবান। তারা মরার আগ পর্যন্ত তাদের মর্যাদার জন্য লড়াই করবে।

তিনি আরও লেখেন, বাংলার এই অংশে ভারতপ্রেমী বা ভারতীয় মিত্ররা ভাবছে যে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যাবে এবং জুলাই বিপ্লব এবং ফ্যাসিবাদীদের নৃশংসতাকে এড়িয়ে গেলে তাদের কিছুই হবে না। এটা একটা ভুল ধারণা। মানুষ সব দেখছে!ভারতীয় সংস্থা জুলাই বিপ্লবকে কিছু জঙ্গি, হিন্দু-বিরোধী, এবং ইসলামপন্থীদের ক্ষমতা দখল হিসাবে চিত্রিত করার চেষ্টা করেছে- উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিন্তু তাদের অপপ্রচার ও উসকানি ব্যর্থ হচ্ছে।উপদেষ্টা মাহফুজ আলম লেখেন, দিল্লি না ঢাকা? ঢাকা, ঢাকা! ও স্বদেশ না শাহাদাত!- এই শ্লোগানগুলো বাংলাদেশকে একক অঙ্গে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য এদেশের প্রতিটি কোণে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

তিনি সতর্ক করে লেখেন, আর ভারত যেন এই ঐক্যবদ্ধ, মর্যাদাবান ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে তার শত্রু না করে।দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর বাংলাদেশের জনগণ বিনা বাধায় গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করছে-উল্লেখ করে তিনি বলেন, সত্য এসেছে… মিথ্যা ধ্বংস হবে। চিরকাল!উপদেষ্টা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে লেখেন, ৭১-এর পর রাষ্ট্র হিসেবে আমরা ব্যর্থ হয়েছিলাম, কিন্তু এবার নয়! আল্লাহ ভরসা!বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই এক ধরনের টানাপড়েন চলছে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে।

থমকে আছে ভারতীয় ভিসা কার্যক্রমও। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশ এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পরিস্থিতি নিয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশে এই টানাপোড়েনের ব্যাপারটি স্পষ্ট হয় আরও। এর মধ্যেই বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার ঘিরে নতুন মাত্রা পায় দু’দেশের মধ্যকার তিক্ততা।সবশেষ জাতীয় পতাকার অবমাননা এবং আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলায় উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডাক পড়ে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার। এরপরই ঢাকা ও দিল্লি দু’পক্ষ থেকেই ‘সম্পর্ক স্বাভাবিক’ করার বার্তা এসেছে।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা করে ‘হিন্দু সংগ্রাম সমিতি’। সেখানে ভাঙচুরের পাশাপাশি বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় হামলাকারীরা। এ ছাড়া বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া আরও কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ করে ভারতীয় বিভিন্ন সংগঠন। বাংলাদেশবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেয় তারা। বিক্ষোভ হয়েছে মুম্বাই সহকারী হাইকমিশনের সামনেও।

ভারতের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সাম্প্রতিক হামলা ও বিক্ষোভের ঘটনা নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে খোদ দিল্লিও। তাদের অভিমত, আগরতলায় যা হয়েছে, তা মোটেও ভালো হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চায় ভারত। এরই মধ্যে বিবৃতি দিয়ে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশের পাশাপাশি বাংলাদেশি হাইকমিশনগুলোর নিরাপত্তা বাড়িয়েছে ভারত সরকার।