স্কুলের প্যারেন্টস মিটিংয়ে খুদে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সবচেয়ে বেশি শোনা পরামর্শ এখন বোধ হয় এটিই, ‘স্ক্রিন টাইম কমিয়ে দিন।’ তবে মোবাইলে চোখ গুঁজে রাখাটা যে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও কম ক্ষতিকর নয়, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের এই দুনিয়ায় সে উপলব্ধি বাংলাদেশ দলেরও। ক্রিকেটে মনোযোগ ধরে রাখতে তাই খেলোয়াড়দের দেওয়া হয়েছে এই নির্দেশনা, ‘স্ক্রিন টাইম কমাও’।
সাধারণত বিশ্বকাপ ফুটবল শুরুর আগেই বিভিন্ন দলে ব্যক্তিগত জীবনাচরণে আরোপিত বিচিত্র সব বিধি-নিষেধের খবর বেরোয়।ক্রিকেটে তেমন খুব একটা শোনা যায় না। বিশেষ করে মোবাইলের ব্যবহার সীমিত করার খবর তো নয়ই। আহমেদাবাদে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ শুরুর দিন এ রকম ব্যতিক্রমী খবরের জন্ম দেওয়ার উদাহরণ হয়ে গেল বাংলাদেশ।যদিও বাংলাদেশে ক্রিকেটারদের মোবাইল ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপের এটিই প্রথম ঘটনা নয়।এই দলের মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্তরা এ রকম বিধি-নিষেধ মেনে চলেছেন আরো সাত বছর আগে। ২০১৬ সালে দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপে এঁরা দুজন ছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক। আসর শুরুর ঠিক আগে দলটির উপদেষ্টা হিসেবে নিয়ে আসা হয় জাতীয় দলের সাবেক কোচ স্টুয়ার্ট ল’কে। এসেই তিনি মোবাইলে নিষেধাজ্ঞা দেন।কিন্তু ওই বয়সের ছেলেরা নিষেধাজ্ঞা কতটা মানবেন, তা নিয়ে সংশয় থেকেই রাতে রুমে ঢোকার আগে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজনের কাছে ক্রিকেটাররা মোবাইল ফোন জমা দিয়ে ঘুমাতে যেতেন!
তেমন কিছু না হোক, জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের মোবাইল ব্যবহার নজরদারি করা হচ্ছে কি না, জানতে চাওয়ায় টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ পাল্টা বলে উঠলেন, ‘আরে ধুর, ওরা কি অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্রিকেটার নাকি! ওরা সবাই সব কিছু বোঝে। কাজেই আশা করি, ওরা মানছে।’এর একটু আগেই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক দিচ্ছিলেন দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় যখন আপনি কোনো স্টোরি পড়তে যাবেন, সাত-আট ঘণ্টা যখন ফোনেই চোখ দিয়ে রাখবেন, ওটা কিন্তু বড় একটি স্ট্রেস। আমরা চাই ওই স্ট্রেসটি যেন কম পড়ে। মনের ও চোখের চাপ যতটা কমানো যায়।
এখানে অনুশীলন সেশনগুলোও গরমের মধ্যে হচ্ছে। সব কিছু ম্যানেজ করে মানসিক দিক থেকেও ওদের নিজে নিজে তৈরি হতে হবে। এই শৃঙ্খলাগুলো মানলে এই বিশ্বকাপে আমরা খুব ভালো করব।’
আগামীকাল ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (এইচপিসিএ) স্টেডিয়ামে আফগানিস্তান ম্যাচ দিয়ে এবারের বিশ্বকাপ অভিযান শুরুর আগে মনের বিশ্রামেই জোর দিচ্ছে বাংলাদেশ। এই বিশ্রামের গুরুত্ব অবশ্য আরো কিছুদিন আগে থেকেই ক্রিকেটারদের বোঝানো হচ্ছিল। বিশেষ করে কিছুদিনের জন্য আসা মনোবিদ ফিল জন্সির ক্লাসে নিয়মিতই এর উপকারী দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্রামের সময় মোবাইলই শুধু নয়, টেলিভিশন দেখাও বারণ করে গেছেন ওই মনোবিদ। বিশ্বকাপের দল ঘোষণার পর থেকে বিতর্কে জেরবার হওয়ার পর মনের বিশ্রামে জোর দেওয়া বাংলাদেশ অবশ্য কঠোর অনুশীলনেও কমতি রাখছে না।
গতকাল যেমন দুপুর ২টায় অনুশীলন করার কথা থাকলেও সাকিব আল হাসানরা চলে এলেন এর ঘণ্টাখানেক আগে। গা গরমের পর স্টেডিয়ামের আউটার নেটে লম্বা সময় ধরে চলল প্র্যাকটিস। সেখানে শুরুতে ব্যাটিংয়ে গেলেন তিন টপ অর্ডার ব্যাটার লিটন কুমার দাস, তানজিদ হাসান তামিম ও নাজমুল। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ, তাওহীদ হৃদয় ও মুশফিকুর রহিম। মুশফিকের পাশাপাশি অধিনায়ক সাকিব এই বিশ্বকাপের বিরল দুই ক্রিকেটার, যাঁরা ২০০৭ সালের বিশ্বকাপও খেলেছেন। এবারের আসরের অন্য কোনো দলেই ১৬ বছর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজে হওয়া বিশ্ব আসরে খেলা ক্রিকেটার নেই। মাহমুদ উল্লাহরও এটি চতুর্থ বিশ্বকাপ।
অভিজ্ঞতা বিবেচনায় অনেক দলের চেয়ে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ দলের তরুণদের নিয়েও ভয় কেটে গেছে মাহমুদের, ‘কয়েক দিন আগেও শান্ত-হৃদয়দের নিয়ে চিন্তা ছিল। খুব বেশি দিন হয়নি ওরা জাতীয় দলে খেলছে। কিন্তু ওরাও এখন পারফরম করছে। সে জন্য আমরা স্বপ্ন দেখতেই পারি।’ পারফরম্যান্সে নিজেকে ঝলমল করে তোলা তরুণদের পথ দেখাতে আছেন সাকিব-মুশফিক-মাহমুদের মতো অভিজ্ঞরা। দুয়ে মিলে বড় স্বপ্নের ক্যারাভানে চড়ে না বসার কোনো কারণই খুঁজে পান না টিম ডিরেক্টর।