বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী দায়ীদের সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ফৌজদারি মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, প্রথম দিকে তিনটি জেব্রার মৃত্যু ধামাচাপা দেওয়া এবং আঘাতজনিত কারণ প্রতিষ্ঠা করতে মৃত তিনটি জেব্রার পেট ধারালো কিছু দিয়ে কাটা হয়েছে মর্মে কমিটির কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। কে বা কারা ওই মৃত তিনটি জেব্রার পেট কেটেছে, তা উদ্ঘাটন করার জন্য নিবিড় তদন্তের প্রয়োজন বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কর্তব্যরত ভেটেরিনারি অফিসারের চাহিদা মোতাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সাফারি পার্ক মেডিকেল বোর্ডের সভা আহ্বান করবেন মর্মে বিধান থাকা সত্ত্বেও এতগুলো জেব্রার অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরও জরুরি ভিত্তিতে মেডিকেল বোর্ডের সভা আহ্বান করা হয়নি, যা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার শামিল। কোনো প্রাণীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় জিডি করার প্রচলন থাকলেও এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি, যা রহস্যজনক।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা সভায় মামলার সিদ্ধান্ত হয়।
গত ২ থেকে ২৯ জানুয়ারির মধ্যে সাফারি পার্কে ১১টি জেব্রা মারা যায়। এ ঘটনায় গত ২৬ জানুয়ারি গঠন হয় তদন্ত কমিটি। গত রোববার মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। মঙ্গলবার ওই প্রতিবেদনের ওপর পর্যালোচনায় বলা হয়, ঘাসে অতিরিক্ত নাইট্রেটের প্রভাব ও মিশ্র ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে ১১টি জেব্রার মৃত্যু হয়েছে। ২ থেকে ৩ জানুয়ারি তিনটি জেব্রার মৃত্যু ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে পার্ক কর্তৃপক্ষ। আঘাতজনিত কারণ প্রতিষ্ঠা করতে মৃত তিনটি জেব্রার পেট ধারালো কিছু দিয়ে কাটা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা বের করতে আরও গভীরভাবে তদন্ত দরকার।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কর্তব্যরত ভেটেরিনারি অফিসারের চাহিদা মোতাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেডিকেল বোর্ডের সভা আহ্বানের বিধান থাকলেও জেব্রার অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরও জরুরি ভিত্তিতে মেডিকেল বোর্ডের সভা আহ্বান করা হয়নি, যা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার শামিল। কোনো প্রাণীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় জিডি করার প্রচলন থাকলেও এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি, যা রহস্যজনক।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব গত ২২ জানুয়ারি সাফারি পার্ক পরিদর্শন করেন। তখন পর্যন্ত ৮টি জেব্রা মারা গেলেও প্রকল্প পরিচালক, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ভেটেরিনারি কর্মকর্তা কিংবা অন্য কেউ তা সচিবকে অবহিত করেননি। এতে প্রতীয়মান হয়, প্রথম থেকেই জেব্রা মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। বিষয়টি অস্বাভাবিক, অগ্রহণযোগ্য ও সরকারি কর্মচারী আচরণের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়, যা দায়িত্ব অবহেলার শামিল। তদন্ত কমিটির সব মতামত বিবেচনায় নিয়ে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ফৌজদারি মামলা ও বিভাগীয় মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়।
এ ছাড়া সাফারি পার্কে প্রাণীর মৃত্যুরোধ ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে করণীয় বিষয়ে তদন্ত কমিটির ১১টি স্বল্পমেয়াদি, চারটি মধ্যমেয়াদি এবং নয়টি দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। সভায় অন্যদের মধ্যে উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সচিব মো. মোস্তফা কামাল, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) মো. মিজানুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশদূষণ নিয়ন্ত্রণ) কেয়া খান এবং উপসচিব ও তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।