কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের’ (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহ হত্যায় কারা জড়িত, তাদের বিষয়ে ধারণা পেয়েছে পুলিশ।
এ ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও উখিয়া থানা পুলিশের সদস্যরা। বর্তমানে পাঁচ জনই তিন দিন করে রিমান্ডে রয়েছে। আপ্রাণ চেষ্টা অব্যাহত রেখে ক্রমশই হত্যার রহস্য উদঘাটন ও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে তদন্তের জাল গুটিয়ে আনছে পুলিশ।
বুধবার (৬ অক্টোবর) বিকেল আড়াই টায় কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের বিষয়ে ধারণা পেয়েছি। ধৃতদের জবানবন্দিতে নতুন নতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে।’
মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘মামলাটি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত সন্তুষ্ট হয়ে আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। আমরা নিবীড় জিজ্ঞাসাবাদ করছি। ঘটনার নেপথ্যে কোনো সংগঠন কিংবা ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা, থাকলে কার ভূমিকা কী, তা জানতে আমরা নিরবচ্ছিন্নভাবে তদন্ত করে যাচ্ছি।
ইতোমধ্যে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য নোট করছি, সেগুলো বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে যাচাই-বাছাই করছি। জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা আর যে যে অপরাধীর নাম বলছেন, তাদেরও শনাক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছি।’
২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিজ সংগঠনের কার্যালয়ে অবস্থানকালে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ।
এ ঘটনায় ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়া থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়। যার বাদী নিহত মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিব উল্লাহ।
১ অক্টোবর দুপুরে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প-৬ থেকে মুহিবুল্লাহ হত্যায় জড়িত সন্দেহে মোহম্মদ সেলিম (৩৩) (প্রকাশ লম্বা সেলিম) নামে একজনকে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা গ্রেপ্তার করে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করে।
শনিবার (২ অক্টোবর) ভোররাতে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে জিয়াউর রহমান ও আব্দুস সালাম নামে আরও দুই রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করে তারা। ওই দিন বিকেলে উখিয়া থানা পুলিশ শওকত উল্লাহকে (২৩) কুতুপালং ক্যাম্প থেকে গ্রেপ্তার করে। আর ৩ অক্টোবর দুপুরে কুতুপালং ৫ নম্বর ক্যাম্প থেকে মো. ইলিয়াসকে গ্রেপ্তার করে ১৪ এপিবিএনের সদস্যরা।
১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক এসপি নাইমুল হক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মুহিবুল্লাহ হত্যায় জড়িত সন্দেহে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। যারা এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের রিমান্ড ও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
তারা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছে। এ ঘটনায় আর কারা জড়িত আছে, সেই ব্যাপারেও তারা তথ্য দিচ্ছে। সবমিলিয়ে মুহিবুল্লাহ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের পুলিশের জালে আনার চেষ্টা অব্যাহত আছে। খুব শিগগরিই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
নিহত মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘‘আমার ভাই রোহিঙ্গাদের জন্য কথা বলার ‘ভয়েস’ ছিলো। রোহিঙ্গাদের বিপদে-আপদে এবং অধিকার আদায়ে সবসময় কথা বলতেন তিনি। এমনকি সুষ্ঠু সমাধান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়েও তিনি সোচ্চার ছিলেন।
যার কারণে প্রত্যাবাসন বিরোধী তথা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা তাকে বাঁচতে দেয়নি। সন্ত্রাসীদের চোখে আমার ভাইয়ের অপরাধ ছিল রোহিঙ্গাদের পাশে থাকা ও তাদের জন্য ভয়েস (কণ্ঠস্বর) তোলা। আমি আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার চাই। তাদের যেন ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারা হয়।’’
সন্ত্রাসীদের গুলিতে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ পাঁচ নেতার একজন মুহিবুল্লাহ নিহত হওয়ার ঘটনায় রোহিঙ্গাদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা প্রিয় নেতাকে হারিয়ে কূল হারা হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে। সুখে-দুঃখে পাশে থাকা প্রিয় নেতার হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে ফাঁসিতে ঝুলানোর দাবি তুলছেন রোহিঙ্গারা।
এ পর্যন্ত মুহিব্বুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এপিবিএন চারজন এবং উখিয়া থানা পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। পাঁচ জনকেই তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালত।