স্টাফ রিপোর্টা, নওগাঁ : করোনা নিয়ন্ত্রণে সারাদেশের মতো নওগাঁয় চলছে কঠোর বিধিনিষেধ। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। বন্ধ রয়েছে হোটেল-রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকানসহ সব দোকানপাট।
দোকান বন্ধ থাকায় খাবারের জন্য রাস্তায় রাস্তায় হন্য হয়ে ঘুরছে বেওয়ারিশ কুকুরগুলো। ময়লার ভাগাড়েও মিলছেনা খাবার। খাবার না পেয়ে যেন অসহায় অবস্থায় রয়েছে তারা।
করোনার এ দুঃসময় অনেকেই মানবিকতার পরিচয় দিচ্ছেন। নিজের সাধ্যের মধ্যে প্রতিবেশীসহ বিভিন্ন মানুষকে সাহায্য করছেন। এমন সঙ্কটকালে পশুদের প্রতি মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন দুই বন্ধু জাহাঙ্গীর আলম স্বপন ও জাহিদ হাসান।
জানা যায়, নিজেদের অর্থায়নে গত ১ জুলাই থেকে শহরের বিভিন্ন স্থানে বেওয়ারিশ কুকুরগুলোকে খিচুড়ি রান্না করে একবেলা খাবার দিচ্ছেন তারা। পশুদের প্রতি তাদের এমন আচরণকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন সচেতনমহল।
প্রতিদিন সকালে আড়াই-তিন কেজি চাল, ডাল ও সবজি দিয়ে খিচুড়ি রান্না করেন জাহিদ হাসান। এরপর এক হাতে খাবারের পাত্র ও আরেক হাতে কাগজের টুকরো নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি।
সকালে শহরের উকিলপাড়া, উত্তরা স্কুলমোড়, কেডির মোড়, মুক্তির মোড় ও বিজিবি ক্যাম্প মোড়সহ বিভিন্ন জায়গায় কাগজের টুকরো পেতে তাতে খিচুড়ি দিয়ে কুকুরদের দেন। তার খাবারের পাত্র দেখে ছুটে আসে কুকুরগুলো।
তাদের খেতে দেখে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেন জাহিদ। শহরের উকিলপাড়ার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম স্বপন বলেন, ‘আমি একটি ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করি।
করোনার কারণে মানুষের আয়-রোজগার কমে গেছে। জীবন বাঁচাতে মানুষ ধার-দেনা করে চলছে। দীর্ঘদিন ধরে হোটেলসহ খাবারের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
এতে কুকুরগুলোর খাবারে তীব্র সঙ্কটে পড়েছে। ময়লার ভাগাড়ে খাবারের জন্য হন্য হয়ে খুঁজছে তারা। কুকুরদের এ কষ্ট দেখে ব্যথিত হই। তাদের রক্ষা করতে হবে- এমন চিন্তা থেকেই এক বলা খাওয়ানো উদ্যোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিন চাল, ডাল ও সবজি দিয়ে খিঁচুড়ি রান্না করা হয়। শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে কুকুরদের সকালে খাবার দেই, যা আমরা সম্পূর্ণ নিজ অর্থায়নে করছি।
এ ব্যাপারে কারো কাছ থেকে সহযোগিতা নিচ্ছি না বা কাউকে কিছু বলিওনি। তবে কেউ যদি সহযোগিতা করতেই চান তাহলে তিনি যেন তার এলাকার প্রাণীদের একবেলা খাবার দেন- এটাই আমার প্রত্যাশা। কারণ পশুরা অবলা প্রাণী। তারা কারো কাছে কিছু চাইতে পারে না বা কিছু বলতেও পারে না।’
তার বন্ধু জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমাদের ক্ষুদ্র প্রয়াসে চেষ্টা করছি কুকুরদের একবেলা খাওয়ানোর জন্য। নিজেরা খেতে পারবো এমনভাবে খিচুড়ি রান্না করা হয়।
এরপর শহরের বিভিন্ন স্থানে নিজে গিয়ে খাবার দেয়ার ব্যবস্থা করি। প্রতিদিন ২৫-৩০টি কুকুরকে খাবার দেয়া হয়। খাবার নিয়ে যাওয়ার পর কুকুরগুলো ছুটে আসছে। এর চেয়ে ভালো লাগা আর কি হতে পারে?’
নওগাঁর স্থানীয় এক সামাজিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা রাসেল বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মানুষের চলাফেরা ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ রয়েছে। সেখানকার উচ্ছিষ্ট খাবারগুলো জুটতো কুকুরের কপালে। কিন্তু বর্তমানে সব কিছু বন্ধ রয়েছে। মানুষতো মানুষের সহযোগিতায় ব্যস্ত।
কিন্তু কুকুরগুলো বোবা প্রাণী। খাবারের অভাবে তারা দুর্বল বা হিংস্র হয়ে উঠছে। ঠিক এমন সময় দুই বন্ধু বেশ কিছুদিন থেকে রাস্তার কুকুরগুলোর জন্য খাবার সরবরাহ করে আসছেন। তাদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।’